যোগ্যতা প্রমাণের এমন সুযোগ কাজে লাগাতে চাই : মেয়র আঞ্জুমান আরা
মো. শাহীদুল ইসলাম শাহী
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তুজা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাদের এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতা না পেলে আমার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেত। আমার স্বামী মোহাম্মদ সিদ্দিক আহমেদ আজ নেই। তিনি নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং আমি নির্বাচিত হয়েছি তা তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় দেখতে পেলে সবচেয়ে খুশি হতেন। এভাবেই জয়ের অনুভূতি প্রকাশ করলেন নড়াইল জেলায় নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র আঞ্জুমান আরা।
এলাকার নারী উন্নয়নে কী ভাবছেন এমন প্রসঙ্গে আঞ্জুমান আরা বলেন, মেয়রের কাজগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে, বুঝতে কিছুটা সময় তো লাগবে। তবে একজন নারী হিসাবে সবার আগে অসহায়, বঞ্চিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াব। একজন নারী সাবলম্বী হলে তিনি ক্ষমতায়নের দিকে এগিয়ে যাবেন। তাই নারীকে স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করব। কুটিরশিল্প কিংবা বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজে সম্পৃক্ত নারীদের পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ধীরে ধীরে এগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। জাতীয় মহিলা সংস্থা ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নারীদের হাতের কাজ, নার্সারি, শাকসবজির চাষ করা, সেলাইসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের তৈরি পণ্যগুলো বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা নেই। একজন নারী মেয়র হিসাবে প্রথম পদক্ষেপ হবে সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তুজার সহায়তায় নারীদের তৈরি পণ্যসামগ্রী বিপণনের জন্য একটি আলাদা বাজারব্যবস্থা তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, নড়াইল পৌরসভাকে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সংবলিত উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও পরিকল্পিত নগর অবকাঠামো, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশসহ ডিজিটাল পৌরসভা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সদরের একমাত্র নারী পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে আমি প্রথমেই পৌরসভার উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছি।
তার স্বামীর স্বপ্ন ছিল আঞ্জুমান আরা একজন পৌর মেয়র হিসাবে জনগণের সেবা করবে। সেই লক্ষ্যে ২০১৫ সালে শিক্ষকতা পেশা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে পৌর নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। তার স্বামী আওয়ামী লীগের নড়াইল জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহমেদের গত বছর ১৭ আগস্ট মারা যান। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেন।
মেয়র আঞ্জুমান আরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বন্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। পৌরসভার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাউন্সিলরদের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করবেন।
মেয়র আঞ্জুমান আরা ‘৮৬-৮৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখার সভাপতি এবং ৮৭ সালে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বামীর উৎসাহে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি।
মেয়র আঞ্জুমান আরা একই জেলার চাকই-মধুরগাতি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মেয়ে। বাবা এফএম তোরাব আলী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মা মোসা. ফাতেমা বেগম। তার জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ জানুয়ারি। এইচএসসির পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর লেখাপড়া চালিয়ে যান। ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তার দুই মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে চিকিৎসক ও বড় মেয়ে গৃহিণী।
তৃণমূলের একজন নারী নেত্রী হিসাবে শত-সহস সংগ্রামের পথপরিক্রমায় আজ তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কারও করুণায় নয়, যোগ্যতা দিয়েই তিনি তা অর্জন করেছেন। একজন নারী হিসাবে পরিবারের কাছ থেকে যেমন সহযোগিতা পেয়েছেন জনগণও তাকে সেভাবেই সহযোগিতা করবেন। এটাই তিনি প্রত্যাশা করেন।
মেয়র আঞ্জুমান আরা আরও বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল এই পথচলা। সবার সহযোগিতায় একবার যখন সফলতা পেয়েছি, বাকি পথ অবশ্যই সফলতার সঙ্গে পাড়ি দিতে পারব। নারীর ক্ষমতায়নে নারীদের আরও বেশি এগিয়ে আসা উচিত। কেননা তারা নির্ভেজালভাবে সমাজ ও মানুষের মঙ্গল কামনা করেন। নারীরা নিজেরাই নিজেদের অনেক দুর্বল ভাবে। আর তাই একজন নারী ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের অদ্ভুত সংমিশ্রণের মাধ্যমে প্রকৃত নারী হয়ে ওঠে। হতাশ হওয়া যাবে না, কারণ একদিন সফলতা আসবেই। নারীরা নিজেদের সম্মান করুন, নিজেদের দুর্বল ভাববেন না। নিজের শক্তিকে অনুভব করুন। তাহলেই যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা দিয়ে এগিয়ে যাবেন নিজ লক্ষ্যে।
