Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন শিরিনা

Icon

রীতা ভৌমিক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইনকিউবেটরে দেশি মুরগির ডিম সাজাচ্ছিলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শিরিনা। পাঁচ মাস ধরে তিনি ইনকিউবেটরের মাধ্যমে দেশি হাঁস, মুরগির ডিমে বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে শিরিনা বলেন, এক হাজার টাকা দিয়ে আমি একশ ডিম কিনি আর অন্যদের একশ ডিম ইনকিউবেটরে সাজিয়ে তা চালু করি। কয়েকদিন পর পর তা উল্টে দিই। দেশি মুরগির ডিমে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ২২ দিন, দেশি হাঁসের ডিমে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ২৮ দিন। ৩২ হাজার ইনকিউবেটর মেশিনটি আমাদের দিয়েছে ইউনাইটেড পারপাস। হাঁস-মুরগির ডিমের বাচ্চা ফুটিয়ে তা বিক্রি করে যে আয় হয় তা থেকে এক বা দুই হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে সুদমুক্ত মেশিনের দাম পরিশোধ করছি। কোনো মাসে এক হাজার, কোনো মাসে দুই হাজার টাকা দিই। ইনকিউবেটরে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে যে অর্থ পাই তা ইনকিউবেটর মেশিনের দাম, ডিম কেনার খরচ, কারেন্ট বিল পরিশোধ করি। এরপর দুই হাজার টাকা লাভ হয়। পারুল, ফাতেমা, জোহরা, মাসুমা আর আমি এই পাঁচ জনের প্রত্যেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে পনেরো হাজার টাকা করি। এর সঙ্গে লাভের টাকা মিলিয়ে একটি মুদি দোকান দিই। দোকানে বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় জিনিস, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আলু ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। দোকান চালানোর জন্য একজন কর্মচারী রাখছি। আমরা পাঁচজন ঘুরেফিরে দোকান দেখাশোনা করি। মালপত্র শেষ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই কিনি। দোকান থেকেও প্রতি মাসে দু-তিন হাজার টাকা লাভ হয়। লাভ থেকে এক হাজার টাকা পাঁচজনের মধ্যে ভাগ করে নিই। বাকিটা দোকান বড় করার জন্য পণ্য কিনি। আবার পাঁচজনে এক হাজার টাকা দিয়ে পাশেই একটা কাপড়ের দোকান দিয়েছি। আমরা তিনজন কাপড় তৈরি করতে পারি। এলাকার মানুষরা এখন আমাদের দোকান থেকেই কাপড় কিনছেন। সবসময় স্বামীর কাছে টাকা-পয়সা চাওয়া যায় না। শরম করে। এ টাকা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় চাহিদা, মেয়েদের খাতা, কলম কিনে দিই।

স্বামী, শাশুড়ি আর দুই মেয়ে নিয়ে শিরিনার সংসার। বড় মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি মাকেও এ কাজে সহযোগিতা করে।

এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড পারপাসের হেড অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড লাইফলিহুডের শামীম হোসেন বলেন, এই পাঁচ নারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। ২০২০সালে কোকাকোলার সহযোগিতায় ৭০টি কেন্দ্র করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে এক লাখ নারী কাজ করছেন। যে নারীরা নিজেদের উন্নয়ন করতে আগ্রহী তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে নির্বাচন করা হয়। তাদেরকে দুই ধরনের সহযোগিতা করা হয়। প্রথমত কোকাকোলার সহযোগিতায় তাদের কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রথমে তারা ব্যবসার লভ্যাংশ বণ্টন করেন না। এর ফলে তাদের বিনিয়োগ বাড়ে। দ্বিতীয়ত ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কখনো কখনো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে বাকিতেও ব্যবসা করছেন। কিভাবে তারা তাদের তহবিলটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবেন, দল ও নিজের সঞ্চয় বাড়াবেন সেই পরামর্শ দিয়ে থাকি। পাঁচ বছরের মধ্যে এও দেখেছি পঁচিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করলেও তা এক লাখ থেকে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম