Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

পরিকল্পনাহীন স্বপ্ন বাস্তবায়নযোগ্য নয় : জ্যানেট ইয়েলেন

ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনে অর্থমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান জ্যানেট ইয়েলেন। সবশেষ সিনেটের ভোটে ইয়েলেন অর্থমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। জ্যানেট ইয়েলেনের মার্কিন মুলুকে অর্থমন্ত্রী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে লিখেছেন-

Icon

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইয়েলেন নামেই করপোরেট খ্যাতি। পুরো নাম জ্যানেট ইয়েলেন। জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৩ আগস্ট। নিউইয়র্ক শহরে বেড়ে উঠেছেন। বাবা জুলিয়াস ইয়েলেন চিকিৎসক। মা অ্যানা রুথ শিক্ষক। কিন্তু ইয়েলেন প্রেমে পড়েন অর্থনীতির। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন অর্থনীতিতে। সরকারি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকতা।

১৯৭৭ সালে প্রথম চাকরি শুরু করেন ফেডারেল রিজার্ভে। সহকর্মী হিসাবে জর্জ আকেরলফের সঙ্গে পরিচয় সেখানেই। গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। বিয়েও করেন দ্রুতই। দু’জনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। সফল এ দম্পতির একমাত্র ছেলে রবার্ট আকেরলফ। রবার্ট নিজেও অর্থনীতির অধ্যাপক। স্বামী জর্জ আকেরলফ ২০০১ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেন।

আজকের করপোরেট অর্থনীতির জগতে ইয়েলেন বহুল পরিচিত একটি নাম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মেধাবী অর্থনীতি জিনিয়াসদের মধ্যে অন্যতম এবং আলোচিত ব্যক্তিত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সহসভাপতি হিসাবে তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ গুরু দায়িত্বে নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী ব্যাংকার হিসাবে প্রমাণ করেছিলেন ইয়েলেন।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের সর্বোচ্চ শিল্পোন্নত সাতটি দেশের (আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, কানাডা, ব্রিটেন এবং ইতালি) কোথাও কখনো শীর্ষ ব্যাংকের কর্ণধার হিসাবে কোনো নারী দায়িত্ব পাওয়ার নজির ছিল না ইয়েলেনের আগে।

ইয়েলেন ২০১৪ থেকে ১৮ সাল অবধি যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শীর্ষ অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের আর্থিক সংকটের পর অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে ওঠার কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হয়।

করোনায় লন্ডভন্ড মার্কিন অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে ইয়েলেনের ওপরই ভরসা রাখছে বাইডেন সরকার। ট্রাম্প আরোপিত করের বোঝা থেকে সাধারণ নাগরিকদের রেহাই দিয়ে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করার গুরু দায়িত্ব এখন ইয়েলেনের।

মার্কিন অর্থনীতিতে ইয়েলেন কাজ করেছেন সুদীর্ঘ সময়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন। মার্কিন ফেড সভাপতি হওয়ার আগে সহসভাপতির দায়িত্ব ছিলেন। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বিশ্বের অর্থ বাজারের প্রভাবশালী নারী হিসাবে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, আইএমএফের চেয়ারম্যান ক্রিস্টিন লাগার্দের পাশেই সমগুরুত্ব দেন ইয়েলেনকে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে মার্কিন অর্থমন্ত্রী হওয়া অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিহাসের কঠিনতম মন্দাচক্রে এখন যুক্তরাষ্ট্র। করোনা সামাল দেওয়ার সঙ্গে উন্নয়ন অর্থনীতি সচল রাখাও কঠিন সমীকরণ।

দেশটির বেকারত্ব এখন কোটির সংখ্যা ছাড়িয়েছে। ইয়েলেন অবশ্য বরাবরই কর্মসংস্থানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তার এ নীতিই তাকে জনপ্রিয় করে। সুদের হার বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ইয়েলেন কাজ করেন কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টিতে। বর্তমানে সুদের হার একেবারে কমিয়ে অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে এবং বৈষম্য কমিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রী হিসাবে বাইডেনের ভরসা এখন অভিজ্ঞ ইয়েলেন।

এবারের সিনেটে ডেমোক্র্যাটের প্রগতিশীল এবং কেন্দ্রিক দুই ধরনের সদস্যরাই নির্বাচিত পছন্দ ইয়েলেন। সিনেটরদের অধিকাংশ সদস্যই ইয়েলেন প্রসঙ্গে বলেন, অর্থমন্ত্রী হিসাবে এ সময়ের সবচেয়ে সঠিক পছন্দ ইয়েলেন। তিনি স্মার্ট, দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ। কঠিন মার্কিন অর্থনীতি সামাল দেওয়ার মতো এত অভিজ্ঞ ব্যক্তি এখন আর কেউ নেই।

অর্থনীতির দুষ্টচক্রের সঙ্গে লড়াই করতে ইয়েলেন বেকারত্বের হার কমিয়ে আনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। এ জন্য প্রয়োজনে সরকারি সহায়তা বাড়ানো যুক্তিযুক্ত। অন্যদিকে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে উৎপাদন বাড়ানো এবং চাকরির বাজার তৈরিই ইয়েলেন ম্যাজিকের মূলমন্ত্র। দীর্ঘমেয়াদি গুণগত বিচক্ষণতা আর কঠিন বাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকার দক্ষ ভাবনাগুলোর কারণেই ইয়েলেন বিশ্ব ব্যাংকিং মঞ্চে এতটা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান কখনই বিপরীতমুখী হতে পারে না। এমনটাই বিশ্বাস করেন জ্যানেট ইয়েলেন।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম