সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা
রীতা ভৌমিক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বৈশ্বিক মহামারি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের অগ্রগতিকে শুধু পিছিয়েই দেয়নি, মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। এর ধাক্কা নারীর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। কাজ হারিয়ে, ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত হয়েছেন। এরপরও তারা পিছিয়ে নেই। কেউ পেশা বা কেউ ব্যবসা পরিবর্তন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। যদিও তা আলোচনায় খুব বেশি স্থান পায় না।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রপ্তানিমুখী উন্নয়নের ধারা অনুসরণ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথেই এগিয়ে চলেছে। গত এক দশকে দেশের রপ্তানি আয় মার্কিন ডলারের হিসাবে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সফল অর্থনীতির দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত, যা প্রচলিত ভাষায় গার্মেন্টশিল্প। আর গার্মেন্ট মানেই নারী কর্মীসমৃদ্ধ একটি শিল্প খাত। এভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান কম নয়। তৈরি পোশাক খাতসহ আরও অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এখন শ্রমিক বা মধ্যম স্তরের নারী কর্মীরা যেমন কাজ করছেন, তেমনি পরিচালক ও মালিক হিসাবেও নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এটা আমাদের বড় অর্জন।
বিশ্বব্যাপী ১৮টি দেশের নেতৃত্বে আছেন নারীরা, যেখানে সাড়ে ৫৪ কোটি মানুষ বাস করেন অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ। কেয়ার-এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানা যায়, কোভিড মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় পর্যায়ের কমিটিতে মাত্র ২৪ শতাংশ পদে নারীরা রয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা পেশার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন নারীরা। কিন্তু এই শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন নারীরা। নারী-পুরুষ উভয়ের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সমাজের প্রত্যাশা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। গবেষণায় জানা যায়, পুরুষরা সফল হলে সমাজ তাদের বেশি পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে সফল নারীরা পছন্দের তালিকায় পিছিয়ে থাকেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুসান ফিসকে, হার্ভার্ডের এমি কাডি এবং অন্য মনোবিজ্ঞানীদের কয়েক দশকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সফল নারীদের এক ধরনের সামাজিক শাস্তি পেতে হয়।
গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে কোভিডকালে নারীরা পিছিয়ে আসেননি। তাদের নেতৃত্বে নতুন বিশ্ব গড়ে উঠবে, এই কল্পনা করার সাহস রাখেন তারা। যদিও কোভিড-১৯ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা মানুষের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার লড়াইতে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা সবধরনের ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি, দায়িত্বশীল, সততা, সহানুভূতি ও সৃজনশীল মনোভাব সম্পন্ন নারীরা সব সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছেন। নারী নেতৃত্বের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, যা সর্বস্তরের নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নারীদের ঘরসংসারও সামলাতে হয়। সন্তান পালনেও তার ভূমিকা অনেক। অফিসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। একজন নারী ঘরে-বাইরে উভয়ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করছেন। এজন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর প্রতি চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা, দৃষ্টিভঙ্গিসহ সবকিছুতে পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই নারীর উচ্চতর পদে ভূমিকা রাখা সহজ হবে।
বাংলাদেশে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীরা রয়েছেন। নারী বিচারক রয়েছেন। নিম্ন আদালতে ১ হাজার ৮৪৫ জজের মধ্যে ৫৪৪ জনই নারী। বাংলাদেশের মেজর জেনারেল নারী। ১৫ হাজার নারী পুলিশ রয়েছেন, তার মধ্যে অনেকেই উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা। নারী ইউএনও’র সংখ্যা ১৩৪ জন। দেশের সংসদনেতা, সংসদীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও স্পিকার নারী। নারীরা উচ্চ আদালতের বিচারক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আরও অনেক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকা রয়েছে।
প্রায় ২ কোটি নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছেন। ৩৫ লাখেরও বেশি নারী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছেন, যা আমাদের বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্র।
