Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই হৃদয়ের শক্তি : মালালা

Icon

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সারা বিশ্বে শুধু ‘মালালা’ নামেই বিখ্যাত। পুরো নাম মালালা ইউসুফ জাই। জন্ম ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই। পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় বেড়ে ওঠা নারী। ইতোমধ্যে হয়ে উঠেছেন বিশ্বের নারীর অধিকার আন্দোলনের সবচেয়ে সরব নাম। এমনকি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও মালালার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।

উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় পাশতুন জনজাতির অন্তর্ভুক্ত সুন্নি মুসলিম পরিবারে মালালার জন্ম। দক্ষিণ আফগানিস্তানের বিখ্যাত নারী পাশতু কবি ও যোদ্ধা মালালাই-এ-ম্যায়ওয়ান্দের নামানুসারে তার নাম রাখা হয় মালালা। যার অর্থ- ‘দুঃখে অভিভূত’। মালালা মিঙ্গোরা নামক স্থানে তার বাবা জিয়াউদ্দিন, মা তোর পেকাই ও দুই ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, দর্শন, রাজনীতির ওপর স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। ইতোমধ্যে নারী ও শিশুদের জন্য নাটক ও তথ্যচিত্র নির্মাণে অ্যাপল টিভি প্লাসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

নতুন করে আবারও আলোচনায় এসেছেন মালালা। বিখ্যাত ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘ভোগ’-এর জুলাই সংখ্যার প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছেন নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফ জাই। সাময়িকীর সাক্ষাৎকারে মালালার লিখেছেন, একজন শিক্ষার্থী, অধিকারকর্মী, লেখক, নারী শিক্ষার পক্ষে ক্লান্তিহীন প্রচারক এবং হামলা থেকে বেঁচে ফেরা একজন তরুণী তিনি।

টুইট বার্তায় মালালা নিজেই ভোগের প্রচ্ছদটি শেয়ার করে ক্যাপশনে মালালা লিখেছেন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যখন থাকে, তখন একজন তরুণীর হৃদয়ের শক্তি আমি উপলব্ধি করতে পারি। আমি আশা করব, প্রচ্ছদটি দেখা প্রতিটি তরুণী নিজের মধ্যে উপলব্ধি করবেন, তাদের মধ্যে বিশ্বকে পাল্টে দেওয়ার শক্তি আছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন বলেছে, ভোগ সাময়িকী প্রচ্ছদের ছবিতে ২৩ বছর বয়সি মালালা লাল রঙের পোশাক সদৃশ। ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী নিক নাইট। তাকে নিয়ে লিখেছেন সাংবাদিক শিরিন ক্যালে। সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে মালালার সাক্ষাৎকারে ভিডিও আছে।

নারী শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাওয়ায় ২০১২ সালে জঙ্গিরা তাকে সামনে থেকে গুলি করে। ওই সময় সুচিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা মালালা এখন পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

২০১৪ সালে সবচেয়ে কম বয়সি হিসাবে শান্তিতে নোবেল জয়। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ তাকে শান্তির দূত নিয়োগ করে। শিশুর স্বার্থে শান্তি ফেরান, বন্দুক নয়, কলমের জোর বেশি-মালালার এসব কথা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। অদম্য লড়াকু কাহিনি নিয়ে বলিউডে ছবিও তৈরি হচ্ছে। আমজাদ খান পরিচালিত ছবির নাম ‘গুল মাকাই’।

আত্মজীবনী লিখেছেন কিশোরী মালালা। বইয়ের নাম ‘আই অ্যাম মালালা : হাউ ওয়ান গার্ল স্টুড আপ ফর এডুকেশন অ্যান্ড চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’। অনলাইন শপিং সাইট আমাজন-এর সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকা জায়গা করে নিয়েছে বইটি।

মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে শিক্ষাকেই জীবনশক্তি মনে করেন মালালা। সোয়াত অঞ্চলে তালেবান কড়া শাসনের বেড়াজালে নারী শিক্ষা বাধাগ্রস্ত। উর্দু ভাষায় বিবিসিতে মালালার একটি প্রতিবেদন সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দেয়। সমালোচনার ঝড় ওঠে চারদিকে। ‘গুল মাকাই’ ছদ্মনামে লেখা ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সোয়াতের তালেবানদের নিয়ন্ত্রণের চিত্র পরিষ্কার হয়ে যায় পাকিস্তান প্রশাসনে। ২০০৯ সালে সোয়াত অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনারা তালেবান জঙ্গি দমনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

মালালার স্বপ্নপূরণের প্রাথমিক বাধায় দারুণ খুশি তখন সে। এমন সাহসী উদ্যোগের কারণে ২০১১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি মালালাকে ‘জাতীয় শান্তি’ পুরস্কারে সম্মানিত করে। এদিকে তালেবানদের বিচ্ছিন্ন হত্যা হুমকি আজও পিছু ছাড়েনি মালালার।

ছবির গল্পের মতো মনে হলেও মালালার জীবনে আজ সবকিছুই কঠিন সত্যি। তালেবানদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বা স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়া শালের মধ্যে বই-খাতা লুকিয়ে আর কতদিন নারীরা লড়াই করবে। অনিবার্য মৃত্যু কি মালালাকে তাড়া করে ফিরছে আজও। মালালার ভবিষ্যৎ জীবন আর স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকায় নিশ্চয়তা কি নিশ্চিত হবে। শিক্ষা একটি রাষ্ট্রের মৌলিক চাহিদা, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। অথচ তাবৎ বিশ্বের সরকার কি পারছে সব কিছুর জানার পরও মালালার মতো কিশোরীদের পড়ালেখার দায়িত্ব সুনিশ্চিত করতে।

স্বপ্ন দেখেন নারী শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থার। যার বিস্তারে নিজেই সক্রিয়, সরব। ছুটছেন এখানে-ওখানে। হয়তো আজ বিশ্বখ্যাতি পেয়েছেন। কিন্তু তাতে কি নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ। মালালার কাছে বেঁচে থাকা আর লড়াই করার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাবিমুখ নারী কখনোই তার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না, এ সত্যটা মালালা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন। আর তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের শিক্ষিত হওয়ার তাগিদ দিয়ে চলেছেন সব সময়, সবখানে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম