জীবনে সবাই সবার মতো সৌভাগ্যবান: এমিলিয়া
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সারা বিশ্বে ‘এমিলিয়া ক্লার্ক’ নামেই বিখ্যাত। যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা অভিনেত্রী। বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’-এর ‘ডেনেরিস টারগেরিয়ান’ চরিত্রে পেয়েছেন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিতি। বিখ্যাত সাময়িকী টাইম তাকে প্রভাবশালী ১০০ জনের হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দু’বার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেও হয়েছেন সফল। লিখেছেন- সাব্বিন হাসান
দ্য নিউ ইয়র্কার সাময়িকীতে নিজেই তার কঠিন সময় জয়ের কথা লিখেছেন এমিলিয়া। গল্পের শুরুটা ২০১১ সালের শুরুর দিকের। সবে ‘গেম অব থ্রোনস’-এর প্রথম সিজনের কাজ শেষ। আগের কোনো পেশাগত অভিজ্ঞতা ছাড়াই এমিলিয়াকে দেওয়া হয় ডেনেরিস টারগেরিয়ানের চরিত্র। ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, নর্থ লন্ডনে, ক্রাউচ এন্ডের একটা জিমের লকারে ব্যায়ামের পোশাক পরে তৈরি। হঠাৎই বুঝতে পারলেন একটা বাজে ধরনের মাথাব্যথা শুরু হতে যাচ্ছে। এতই অবসন্ন লাগছিল যে জুতাও ঠিকঠাক পারতে পারছিলেন না। শরীরের ওপর এক রকম জোর করেই ব্যায়াম শুরু করলেন। ব্যথাটা অগ্রাহ্য করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু কম ছিল না কিছুতেই। প্রশিক্ষককে জানালেন, একটু বিরতি দরকার। কোনোরকমভাবে লকার রুমে পৌঁছানো। ভয়াবহ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলেন মাথা আর কাজ করছে না।
এমিলিয়া বললেন, আমাকে আইসিইউতে পাঠানো হলো। এক সপ্তাহ পর কথা বলতে পেরেছিলাম। নাম মনে করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আইসিইউতে আমার আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছে। যারা এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না। আমি পেরেছিলাম। প্রতিনিয়ত নিজেকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম, আমি কতটা সৌভাগ্যবান। একটা গোসল আর নির্মল বাতাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে জুটল ছাড়পত্র। কয়েক সপ্তাহ পরেই আমার ‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের সেটে ফেরার কথা।
২০১৩ সালে নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসাবে আবার আমাকে মস্তিষ্ক স্ক্যান করতে হলো। চিকিৎসক জানালেন, মস্তিষ্কের একটা অংশ আকারে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবারের অস্ত্রোপচারটা আগেরবারের চেয়ে সহজ হবে। কিছুদিনের মধ্যেই আমি আবার রোগীর পোশাকে নিজেকে আবিষ্কার করলাম ম্যানহাটন হাসপাতালে। মা-বাবা সেখানে ছিল। দুই ঘণ্টা পর তোমার সঙ্গে দেখা হবে, বলে তারা দু’জন চলে যান। চিকিৎসক পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, দ্রুতই আবার অস্ত্রোপচার না করা হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
এবার পরীক্ষাটা প্রথমবারের চেয়েও কঠিন ছিল। মনে হতো আমি এমন একটা যুদ্ধ অতিবাহিত করে এসেছি, যেমনটা ডেনেরিসের অভিজ্ঞতাতেও নেই। করোটি থেকে শুরু করে কান পর্যন্ত যে লম্বা ক্ষতচিহ্ন। কিন্তু তখনো আমি জানতাম না যে, এটা দেখা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা, যে কোনো সময় শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার একটা ভয় থাকত। আমি কি জ্ঞান হারাব, স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাব, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাবে, এখন মজা করে বলি, অস্ত্রোপচারের পর থেকে কোনো পুরুষকেই আর আগের মতো ভালো লাগে না। কিন্তু তখন ব্যাপারটা একেবারেই মজার ছিল না।
আবার হাসপাতালের জীবন। সব আশা হারিয়ে আশাহত। ভয়াবহ দুশ্চিন্তা হতো। প্যানিক অ্যাটাক হতো। সব সময় শিখে এসেছি, আমার চেয়েও খারাপ অবস্থায় অনেকে আছে। কিন্তু একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার যাওয়ার পর সব আশা ছিল না। মনে হতো আমি শুধু আমার একটা খোলস। এতটাই খারাপ অবস্থা গেছে যে এখন আর সে সময়ের কথা মনে করতে পারি না।
কিন্তু এখন আমি বলতে পারি বিশ্বাস করেন আমি ব্যতিক্রম নই, একা নই। অসংখ্য মানুষ আমার চেয়েও খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। আমি অসম্ভব সৌভাগ্যবান। যেভাবে আমি সেবা পেয়েছি, অনেকেই তা পায়নি।
‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের শুটিং শেষ। তার চেয়েও বড় আনন্দের বিষয় হলো আমি শেষটা দেখতে পেরেছি। আর নতুন কোনো শুরু দেখার অপেক্ষায় আছি।
