এ পুরস্কার নারীর ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি: তাহিয়াতুল জান্নাত
প্রকৃতি ও সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করায় ইউএসভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের (রিপ্লে ইফেক্ট ইমেজ) ফোর্সেস অব ন্যাচার অ্যাওয়ার্ড ২০২১-এ মনোনীত হয়েছেন ফরিদপুরের তাহিয়াতুল জান্নাত। লিখেছেন-
রীতা ভৌমিক
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নারীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউএসভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের (রিপ্লে ইফেক্ট ইমেজ) ফোর্সেস অব ন্যাচার অ্যাওয়ার্ড ২০২১-এ মনোনীত হয়েছি। জুরিবোর্ড অনলাইনে সেশন নিচ্ছিলেন। কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ওগান্ডা, ইউনাইটেড স্টেটসহ ১২টি দেশের কয়েকশ নারী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। প্রকৃতি ও সমাজের নানা সমস্যা, অবক্ষয় নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই এখানে অংশ নিতে পারেন। এ সংগঠনটি প্রতিবছর একজন নারীকে সম্মানিত করে যিনি প্রকৃতি ও সমাজের নানা সমস্যা ও অবক্ষয় নিয়ে কাজ করেন। জুরিবোর্ড আমাদের সব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে যখন বাংলাদেশের ফরিদপুরের নাম ঘোষণা করেন প্রথম বিশ্বাসই হয়নি। তাই আমি জুরিবোর্ডকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। জুরিবোর্ড যখন আমাকে বললেন, বাংলাদেশ থেকে ফোর্সেস অব ন্যাচার অ্যাওয়ার্ডের জন্য আমাকে মনোনীত করেছে তখন খুবই ভালো লেগেছে। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গেছি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করার স্বীকৃতি অর্জন করেছি তা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি। এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বললেন নন্দিতা সুরক্ষার প্রতিষ্ঠাতা তাহিয়াতুল জান্নাত।
ইউএসভিত্তিক ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ফটোজার্নালিস্ট টিমে ‘রিপ্লে ইফেক্ট ইমেজ’ ফোর্সেস অব ন্যাচার অ্যাওয়ার্ড ২০২১-এর জন্য মাস তিনেক আগে আবেদন করেন ফরিদপুরের তাহিয়াতুল জান্নাত। তাহিয়াতুল জান্নাত ২০১৮ সালে ফরিদপুর সদরে ‘নন্দিতা সুরক্ষা’ নামে একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু করেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বাল্যবিয়ে বন্ধ, নারী ও শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। এ সংগঠন ‘মাসিক সুরক্ষা ব্যাংক’ নামে একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি রেস্টেুরেন্টে মিনিস্ট্রুরাল হাইজিন বক্স রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিভিশনাল কমিশন ঢাকা ও জেলা প্রশাসক ফরিদপুরের আর্থিক সহযোগিতায় মিনিস্ট্রুরাল হাইজিন বক্সে স্যানিটারি প্যাড, অন্তর্বাস, সাবান ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়।
তিনি হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষার জন্য ২০১৮ সালে ‘হাসিমুখ’ নামে ফরিদপুরের বান্ধবপল্লীতে একটি বিদ্যালয় চালু করেন। এখানে একটি পরিত্যক্ত মন্দিরে শিশুদের ক্লাস নেওয়া হতো। এখন এখানকার একটি ক্লাব ঘরে শিশুদের লেখাপড়া করানো হয়। ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিআরটিইউকে নামে একটি সংস্থা। এ বছর এই সংস্থা ওদের আর্থিক সহযোগিতা করে। এর ফলে হরিজন শিশুদের জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তাহিয়াতুল জান্নাতের মতে, এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে আমার কাজের গতি আরও বাড়বে। প্রতিষ্ঠানটি এক বছর আমার সব কাজকে প্রমোট করবে। কাজ এগিয়ে নিতে ওরা আমাকে আর্থিক সহায়তাও করবে।
তাহিয়াতুল জান্নাতের জন্ম ফরিদপুর সদরে। পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠিতে। বাবা মনিরুজ্জামান একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, মা শামীমা আক্তার একজন স্কুল শিক্ষিকা। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ঝালকাঠির গড়ইয়া গ্রামে। ঝালকাঠি হাজী সৈয়দ আফসারউদ্দীন হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ফরিদপুরের সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক পরীক্ষার্থী।
