Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

ফিফায় গর্বিত বাঙালি সালমা আক্তার মনি

ফিফা প্রথম নারী সহকারী রেফারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের সালমা আক্তার মনি। এর মেয়াদকাল ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। লিখেছেন-

Icon

রীতা ভৌমিক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফিফায় গর্বিত বাঙালি সালমা আক্তার মনি

কোভিড ১৯-এর কারণে দায়িত্ব পেয়েও দেশের বাইরে সাফ, ফিফা, এএফসি কোনো টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত না হওয়ায় অংশ নিতে পারিনি। শুধু মহিলা লীগ এবং জেএসএ কাপ অনূর্ধ্ব ১৪ প্রতিযোগিতায় দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দীর্ঘদিন খেলা বন্ধ থাকায় খুব মন খারাপ ছিল বললেন ফিফা প্রথম নারী সহকারী রেফারি নেত্রকোনার মেয়ে সালমা আক্তার মনি।

নেত্রকোনার মেয়ে সালমা আক্তার মনি ২০১২ সালে নেত্রকোনা স্টেডিয়ামে প্রথম রেফারি কোর্স করেন। এর পেছনেও রয়েছে একটি গল্প। নেত্রকোনা অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা ফুটবল ফেডারেশনে চিঠি পাঠান। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের একটি দল নেত্রকোনায় যায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। নেত্রকোনা জেলার মধ্যে তিনি প্রথম একজন মেয়ে, যিনি রেফারি কোর্সে অংশ নেন। সাত দিনের এ কোর্সটি নেত্রকোনা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষক হিসাবে ছিলেন এমআর মুকুল, এহসানুল হক। কোর্স সম্পন্ন হওয়ার কয়েকদিন পর রেজাল্ট বের হয়। সালমা আক্তার মনি রেফারি কোর্সে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু নেত্রকোনা স্টেডিয়ামের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ কোর্সে ভর্তি হওয়া নিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। একজন মেয়ে রেফারি হবে এটা তারা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই কৌশল করে বললেন, ওর বয়স কম।

কোনো বাধাই তাকে আর পেছনে ধরে রাখতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে সালমা আক্তার মনি বলেন, আমি তখন আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নেত্রকোনার নবম শ্রেণির ছাত্রী। রেফারি কোর্স সম্পন্ন করে আমিও সেরা রেফারিদের একজন হব স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু স্বপ্ন সম্পন্ন করার আগেই নেত্রকোনা স্টেডিয়ামের কর্মকর্তাদের বাধার সম্মুখীন হলাম। মনটা খারাপ হয়ে যায়। ফিফার রেফারি ফেরদৌস আহমেদ ভাই আমাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করলেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে যে স্যাররা নেত্রকোনায় গিয়েছিলেন, তারাও আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিএফএয়ের সঙ্গে কথা বলেন। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে একজন মেয়ে হিসাবে কোর্সে নিজের জায়গা করে নিলাম। বাকি ১৬ জন ছেলের মধ্যে আমার বড় ভাই শফিকুল ইসলামও ছিলেন। বিভিন্ন জেলার ছেলেরা এ কোর্সে অংশ নেন। তবে বেশিরভাগই ছিল নেত্রকোনার। সাত দিনের রেফারি কোর্সে উত্তীর্ণ হলাম। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন।

সালমা আক্তার মনির জন্ম নেত্রকোনায়। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। এ বছরের জুন মাসে বাবা মো. শহর আলীকে হারান। মা মোস্মামাৎ রেখা আক্তার একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই তার খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক বেশি। বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাত সাড়ে তিনটার দিকে নেত্রকোনা শহরের রাস্তায় প্র্যাকটিস করতেন। কেউ দেখার আগেই বাড়ি ফিরে আসতেন। কারণ নেত্রকোনার মতো ছোট্ট একটি শহরে ট্রাউজার, গেঞ্জি পরে একজন কিশোরী রাস্তায় দৌড়াচ্ছে এটা কেউ মেনে নিতে পারতেন না। লোকজনের নানা মন্তব্যের ভয়ে দু’ভাইবোন ওই সময়টাকে প্র্যাকটিস করার জন্য বেছে নেন। লোকচক্ষুর আড়ালে বড় ভাইয়ের সঙ্গে এভাবেই দিনের পর দিন প্র্যাকটিস করে নিজেকে ফিট রাখেন। কাবাডি, লং জাম্প, হ্যান্ডবল, ফুটবল প্রতিটি খেলা নিয়মিত অনুশীলন করেন। ২০১২ সাল। তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ বছরই তিনি প্রথম লোকসম্মুখে অনুশীলন করার সুযোগ পেলেন।

ছোটবেলায় খেলাধুলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কার জিতেছেন। জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় জেলা, অঞ্চল এবং বিভাগে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। কোর্স প্রশিক্ষক ছিলেন অ্যাথলেটিক্সে সজল সরকার। সে সময় তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। নেত্রকোনা স্টেডিয়ামে প্রথম মেয়ে হিসাবে অনুশীলন শুরু করেন। অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় হ্যান্ডবলে অংশ নেন। তাদের দল রানার্স আপ হয়। ২০১৩ সালে জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় লং জাম্পে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জপদক পান। তার দেখাদেখি অনেক মেয়েই খেলাধুলায় অংশ নেন। রেফারি কোর্স সম্পন্ন করে ২০১৫ সালে নেপালে অনূর্ধ্ব ১৪-এ এফসি টুর্নামেন্টে সহকারী রেফারি হিসাবে অংশ নেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব ১৫-এ টুর্নামেন্টে সহকারী রেফারি হিসাবে অংশ নেন। ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব ১৫-এ টুর্নামেন্টে সহকারী রেফারি হিসাবে অংশ নেন। ২০১৯ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব ১৫-এ টুর্নামেন্টে সহকারী রেফারি হিসাবে অংশ নেন। এ বছরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা আন্তজার্তিক অনূর্ধ্ব ১৯-এ টুর্নামেন্টে সহকারী রেফারি হিসাবে অংশ নেন।

খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৪ সালে নেত্রকোনা স্কুল থেকে এসএসসি, বদরুননিসা মহিলা কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ইডেন মহিলা কলেজে বিএ পড়ছেন।

ফিফা সুরঞ্জনা দায়িত্ব প্রতিযোগিতা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম