Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

সংস্কৃতিচর্চায় কন্যাশিশুদের বাধা

Icon

সাদিয়া আহমেদ

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘটনা ১ : ছোট্ট মেয়ে লামিয়া, তার শখ নাচ শিখবে। কিন্তু পরিবার থেকে তার দাদির সম্পূর্ণ নিষেধ। এরপরও বাচ্চার শখপূরণের কথা ভেবে একরকম লুকিয়ে লামিয়ার মা ওকে দিলেন একটি সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে যুক্ত করে। এর কিছুদিন পর লামিয়ার নাচের অনুশীলনের সময় ঘুঙুরের আওয়াজে ধরা পড়ে যায়। আর সেদিনই তার স্বপ্নের ইতি ঘটে।

ঘটনা ২ : রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ফাতিহা। পড়াশোনার পাশাপাশি গান ও ছবি আঁকা শিখে সে। কিন্তু ছবি আঁকার শিক্ষককে নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় পরিবার থেকে। কিন্তু ফাতিহার মন চায় স্বাধীনভাবেই সে সবকিছু আঁকবে, গানও শিখবে পছন্দমতো।

ঘটনা ৩ : মাত্র সাত বছরের মেয়ে রুপু। তার শখ সে সবার সামনে স্টেজে গান গাইবে। প্রজাপতির মতো ডানা মেলে নেচে বেড়াবে স্টেজজুড়ে। কিন্তু অভিভাবকদের এতে সায় নেই। কারণ, তাদের মতে মেয়েদের সবার সামনে নিজেকে জাহির করা ঠিক নয়। কাজেই যা কিছু করবে, তা যেন ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকে।

ঘটনা ৪ : মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই স্টেজ শো করে বেড়িয়েছে লিমা। অথচ যেই ১৫তে পা রাখল, অমনি তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। পড়াশোনায় মন দিতে হবে, আর যদি ভালো ছেলে মিলে, তাহলে তো কথাই নেই। লিনার ডানা মেলে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে গেল সেই ১৫ বছর বয়সেই।

উপরোক্ত দৃশ্যগুলো আমাদের দেশের একটি সাধারণ নৈমিত্তিক ব্যাপার। চোখের সামনে সারাবিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে অঙ্কুরেই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে শিশুদের; বিশেষ করে কন্যাশিশুদের স্বপ্নগুলো। আমরা যতই আধুনিক হই না কেন, আমাদের মন-মানসিকতা ঠিক এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। নানাভাবে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার কন্যাশিশুরা। এর যেন কোনো সমাধান নেই।

এ বিষয়ে নৃত্যশিল্পী অমিত হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশের বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা যায়, সেটা হলো অভিভাবকদের উপলব্ধির ব্যাপার। প্রথমত, শিল্পকলার প্রতিটি বিভাগ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য যে কতটা প্রয়োজন, সে বিষয়ে অজ্ঞতা। নৃত্যকলা এমন একটি বিভাগ, যা শারীরিক ব্যায়াম হিসাবে বিবেচিত। শরীরের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধির জন্য এখনকার আধুনিক ডাক্তাররা রোগীকে ভরতনট্যম শিখতে বলেন। অথচ এ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা অনেক ধরনের বাধার সম্মুখীন হন। রক্ষণশীল মনোভাব, মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ইত্যাদি বাধাবিপত্তি তো আছেই।’

পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন মুসলিম দেশের নারী শিল্পীরা স্টেজ শো করছেন নিয়মিত। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও নিজেকে সুস্থ রাখতে চাই। তবে আশার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করছে শিল্পকলার বিভিন্ন বিভাগ। শিক্ষকতা করছেন এসব পেশার অনেকেই। বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা অনেকেরই।

সংস্কৃতিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের সব শিশু বেড়ে উঠুক শিল্পের ছায়ায়। আর এ স্বপ্নপূরণের সুযোগ করে দিতে হবে আমাদের সবাইকে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদের মেধা বিকাশে বাধা নয়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবেই হবে সুন্দর বাংলাদেশ।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম