Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

স্বীকৃতি

প্রভাবশালী নারীর তালিকায় জান্নাতুল ফেরদৌস

Icon

সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রায় ২৬ বছরের পোড়া ক্ষতের চিহ্ন বহন করে চলছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ১৯৯৭ সাল, তখন সবে স্নাতক (সম্মান) শেষ করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। একদিন রান্না করতে গিয়ে ওড়নায় আগুন লেগে যায়। চিকিৎসকদের ভাষায় পোড়ার পরিমাণ ছিল ৬০ শতাংশ। মুখ, শরীরের ওপরের অংশ পুড়ে কুঁচকে বিকৃত হয়ে যায়। তারপরও বেঁচে যান জান্নাতুল। গলা লেগে গিয়েছিল ঘাড়ের সঙ্গে। এ পর্যন্ত চামড়া প্রতিস্থাপনসহ অস্ত্রোপচার লেগেছে প্রায় ৫০টি। জীবনের এমন কঠিন রূপ দেখেও প্রবল আত্মবিশ্বাসে সামলে নিয়েছেন নিজেকে। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

প্রবল মানসিক শক্তিকে সঙ্গী করে চলচ্চিত্র নির্মাণ, লেখালেখি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী তিনি। জান্নাতুলের জন্ম খুলনায় হলেও বাবা শরীফ জাফর আহমেদ সিদ্দিকীর বাড়ি গোপালগঞ্জে। ২০১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে জান্নাতুল রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মা মরিয়ম সিদ্দিকী, ভাই শরীফ মো. ঈসার সঙ্গে বসবাস করেন। জান্নাতুল নিজের যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা থেকে ২০১৫ সালে ভয়েস অ্যান্ড ভিউজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক। এটি দগ্ধ নারীদের সচেতন করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

তবে বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে বেশি পরিচিত জান্নাতুল। তিনি পাঁচটি শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছেন এর মধ্যে। তার প্রকাশিত তিনটি উপন্যাসও রয়েছে। তাছাড়া সমাজের প্রতিবন্ধীদের সচেতন করতে স্টোরিটেলিং করেও তাদের উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।

জান্নাতুল ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৯ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকেও মাস্টার্স করেন। পাশাপাশি ২০১০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন শর্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। তবে জান্নাতুলের ভাষায় ভালো চলচ্চিত্র বুঝতে এবং ভালো দর্শক হওয়ার জন্যই ছিল তার এ পড়াশোনা। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘উত্তরণ’ ও ‘নীরবে’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। তার লেখা ১১টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

সম্প্রতি বিবিসির করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি ছাড়াও চলতি বছর বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক আমেরিকান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আমাল ক্লুনি, ব্যালন ডি’অর বিজয়ী ফুটবলার আইতানো বনমাতি, এআই বিশেষজ্ঞ তিমনিত গেবরু, নারীবাদের আইকন গ্লোরিয়া স্টেইনেম, হলিউড তারকা আমেরিকা ফেরেরা, ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর, বলিউড অভিনেত্রী দিয়া মির্জাসহ অনেকে। এ অর্জন জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে যাবে আরও অনেক দূর। তার মানসিক শক্তি অন্য নারীরও শক্তির উৎস হয়ে উঠুক।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম