Logo
Logo
×

তারাঝিলমিল

ভালোবাসার রকমফের

ভালোবাসার সংজ্ঞা কী? এ প্রশ্নের উত্তর প্রতিটি মানুষই নিজের মতো করে দেয়ার চেষ্টা করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে শোবিজ তারকাদের কাছেও এ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। তারাও ভালোবাসাকে নিজস্ব সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেন। মূলত যে সম্পর্কে বা স্পর্শে ও যে কথায় হৃদয়ে দোলা লাগে সেটিই ভালোবাসা- এমনটিই জানিয়েছেন তারা। তারকাদের জীবনে ভালোবাসার রকমফের নিয়েই ভালোবাসা দিবসের এ আয়োজন। লিখেছেন- এফ আই দীপু ও অনিন্দ্য মামুন

Icon

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে সততা, সম্মান ও দায়বদ্ধতা

আমার কাছে ভালোবাসা হচ্ছে একটি অনুভূতি। যাদের মন থেকে ভালোলাগে তারাই ভালোবাসার মানুষ। নির্দিষ্ট দিনের হিসাব করে ভালোবাসা প্রকাশ করার নয়। তবে বছরে একটি দিন বিশেষভাবে স্মরণ করাটাকে আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি। বছরের এ একটি দিন পুরো বছরের ভালোবাসার মানুষগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তবে ভালোবাসার সংজ্ঞা কী, এর উত্তর আমি সঠিকভাবে না দিতে পারলেও এটা বলতে পারি, ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে সততা, সম্মান, দায়বদ্ধতা। প্রতিটি ভালোবাসার মধ্যেই যেন এগুলো থাকে। সেটি হোক বাবা মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, ভাইয়ের বোনের মধ্যকার ভালোবাসা, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসা ও প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা। আরও থাকা উচিত অসহায় মানুষের প্রতি বিত্তশালীদের ভালোবাসা। মূল কথা, সুখে দুঃখে আনন্দে একে অন্যের পাশে থাকাটাকেই ভালোবাসা মনে হয় আমার কাছে। আর নিজের ভালোবাসার কথা বলতে গেলে এক কথায় বলব, আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে বোঝে। আমিও তাকে বুঝি। এ বোঝাপড়া যতদিন পর্যন্ত থাকবে ততদিন নিঃসন্দেহে ভালোবাসা অটুট থাকবে। চেষ্টা করব জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভালোবাসার বন্ধনটুকু অটুট রাখতে। তারপরও আমরা মানুষ। ভুল-ত্রুটি হবেই। সেই ভুলটা যেন কোনো বাধার দেয়াল হয়ে সামনে না দাঁড়ায় সেটিই আমি আশা করব ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে। পরীমনি, চিত্রনায়িকা

ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না

‘ভালোবাসা’- এ শব্দটিকে আমরা আলাদাভাবে কখনই সংজ্ঞায়িত করিনি। ভালোবাসা আমাদের কাছে এক অমোঘ শক্তি। এই শক্তির জোরেই এখনও আমাদের মধ্যে ভালোবাসা বিদ্যমান। জীবনের শেষ দিনটুকু পর্যন্ত সেটি বিরাজমান থাকবে বলেই আমরা দু’জনেই বিশ্বাস করি। তবে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সবাইকে বলব, এই ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না। বাবা-মা, ভাইবোন, আÍীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, গরিব-দুঃখী-অসহায়দেরও ভালোবাসতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ হিসেবে এটাই আমাদের মূল শিক্ষা হওয়া উচিত।

অনন্ত ও বর্ষা

চিত্রনায়ক-চিত্রনায়িকা

ভালোবাসার মূল্য যে বোঝে তাকেই ভালোবাসা উচিত

ভালোবাসার আলাদা কোনো সংজ্ঞা নেই। ভালোবাসা অসীম, অফুরান। জীবনের যে কোনো সময় যে কাউকেই ভালোবাসা যায়। সেটি হোক বাবা-মা, বন্ধু, আÍীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী। কাজের ক্ষেত্রে নিজের কাজটাকে ভালোবাসাও জরুরি। এর জন্য আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন পড়ে না। তারপরও ভালোবাসা দিবস নামে বিশেষ একটি দিন প্রচলিত আছে। এ দিন যদি কেউ তার ভালোবাসার ঝাঁপি খুলে স্মৃতিচারণ করে বিশেষ কিছু পাওয়ার আশা করে তাতে দোষের কিছু দেখি না। তবে একটা কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, ভালোবাসার মূল্য যে বোঝে তাকেই ভালোবাসা উচিত। কারণ ভালোবাসার কাছে দিন শেষে আমরা সবাই পরাজিত। এই পরাজয়টাই বরং উপভোগ্য, প্রশান্তির। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে। শাকিব খান, চিত্রনায়ক

ভালো থাকার নামই হচ্ছে ভালোবাসা

ভালোবাসার ব্যাখ্যা দেয়া কঠিন। আমার কাছে এটা অনেক পবিত্র একটি বিষয়। স্বাধীনতার মতো অনেকটা। অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন। তবে একটা কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, আপনি প্রেমিক কিংবা ভাই কিংবা বন্ধু যাকেই ভালোবাসেন, সবার আগে তাকে ভালো বন্ধু হতে হবে। কারণ ভালোবাসলে তো নিঃস্বার্থ হতে হয়। আর বন্ধুত্বে স্বার্থ থাকতে নেই। ভালোবাসা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে থাকে। তবে এক কথায় ভালোবাসার উত্তর হচ্ছে, ভালো থাকার নামই হচ্ছে ভালোবাসা। মানুষ সুখে থাকার জন্যই কিন্তু ভালোবাসে। এই ভালোবাসার জন্য মানুষ দুঃখকেও সুখ মনে করে জীবন কাটিয়ে দেয়।

মাহিয়া মাহি, চিত্রনায়িকা

প্রকৃত মানুষকে ভালোবাসুন

আমার দৃষ্টিতে ভালোবাসা হল একটি হৃদয়ঘটিত ব্যাপার। হৃদয় থেকে যাকে ভালোবাসা যায় সেই হল ভালোবাসার মানুষ। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক মানুষগুলোই বেশি প্রাধান্য পায়। সামাজিকভাবেও ভালোবাসা অনেক সময় গড়ে ওঠে। দুটি মনের মিল থাকলেই সে ভালোবাসাটি গড়ে ওঠে। ভালোবাসা সীমাহীন, এটাকে দিনক্ষণের মধ্যে ফেলা যায় না। প্রকৃত ভালোবাসা অনেক ভালো কিছুর সৃষ্টি করে। তারপরও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বলতে হয়, প্রকৃত মানুষকে ভালোবাসুন, যে আপনাকে বুঝবে, আপনাকে সম্মান করবে।

পপি, চিত্রনায়িকা

ভালোবাসাহীন একজন মানুষ নিষ্প্রাণ শুষ্ক গাছের মতো

আমার দৃষ্টিতে অতিপ্রিয় মানুষগুলোই ভালোবাসার মানুষ। যারা সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে। এর সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা আমার কাছে নেই। তবে ভালোবাসা একটি স্বর্গীয় দান। ভালোবাসা শব্দটি মানুষকে দারুণ রকমের সুখে রাখতে পারে। প্রতি মানুষের জীবনেই ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা আছে। মানুষ যেমন সমাজ ছাড়া বাঁচতে পারে না। জীবনের তাগিদেই মানুুষকে সমাজবদ্ধ হয়ে বাঁচতে হয়। তেমনই জীবনকে অফুরন্ত ভালোলাগাতে, জীবনে সুখী হতে ভালোবাসার প্রয়োজন। ভালোবাসাহীন একজন মানুষ তো নিষ্প্রাণ শুষ্ক গাছের মতো। তবে ভালোবাসাকে শুধু প্রেমিক প্রেমিকাতে বন্দি করে রাখা ঠিক নয়। এটা সার্বজনীন। মানুষের প্রতি প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা থাকা উচিত। এমন হলে পৃথিবীটা শান্তিতে ভরে উঠত। ভালোবাসা দিবস পালনের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। তার আগে কি মানুষ ভালোবাসেনি? বেসেছে। এখন একটি দিনকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হচ্ছে। ভালোবাসার জন্য এ দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকারা বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু বছরের প্রতিটি দিনেই ভালোবাসা চলে। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা, বাবা-মায়ের ভালোবাসা, বন্ধু বন্ধুতে ভালোবাসা- সারা বছর এসব ভালোবাসাতেই তো আমরা আবদ্ধ হয়ে থাকি। তবে সব ভালোবাসার লক্ষ্য মনে হয় একটাই- সুখী জীবন। আমার ভালোবাসার মানুষ আমার মা-বাবা। আর এখন তো জয়কে ঘিরেই আমার ভালোবাসার সীমানা।

অপু বিশ্বাস

চিত্রনায়িকা

ভালোবাসাই সুখে থাকার মহামন্ত্র

একসঙ্গে কাজ করতে গিয়েই চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও চিত্রনায়ক ওমর সানীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এক সময় ভালোবাসার জালে আটকা পড়েন দু’জনা। জাল ছিঁড়ে আর বেরোতে পারেননি। ফলে বিয়ে করে এক ছাদের নিচে বসবাস শুরু করেন এ দুই তারকা। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসারে এখনও ভালোবাসার অটুট বন্ধন ধরে রেখেছেন সানী-মৌসুমী। আপনার দৃষ্টিতে ভালোবাসা মানে কী? মৌসুমীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালোবাসা মানেই তো ভালো থাকা এবং অন্যকে ভালো রাখা। ভাষাগত দিক থেকে যেভাবেই ভালোবাসার সংজ্ঞা দিক না কেন, ভালোবাসার আসল উদ্দেশ্য কিন্তু সুখে থাকা।’ মৌসুমীর কথার সুরে তাল মিলিয়ে ওমর সানী বলেন, ‘ভালোবাসাই হল সুখে থাকার মহামন্ত্র। যে মন্ত্র প্রয়োগ করেই আমরা একে অন্যকে মুগ্ধ করি। আমি আর মৌসুমী দুই যুগের বেশি সময় কাটিয়ে দিলাম এ মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে। এখন আবার সন্তানদের ভালোবাসায়ও মুগ্ধ হচ্ছি।’

ওমর সানী ও মৌসুমী, চিত্রনায়ক-চিত্রনায়িকা

ভালোবাসার সংজ্ঞা বোঝান সম্ভব নয়

ভালোবাসার অর্থ আসলে এভাবে বলে বোঝান সম্ভব নয় বলে দাবি করেন টিভি অভিনেতা নাঈম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার মূল কথা বোঝান সম্ভব নয়। কারও জন্য অপেক্ষা, কারও হাত শক্ত করে ধরে থাকা, ছায়াসঙ্গীর মতো থাকতে পারা, সবই তো ভালোবাসা। এর মাঝেই জীবনের বেঁচে থাকার মন্ত্র। এখন তা কে কীভাবে নেবেন বা তৈরি করবেন সেটি তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ অপরদিকে নাদিয়া বলেন, ‘আমার কাছেও ভালোবাসার সংজ্ঞা নাঈমের মতোই। এর আসল সংজ্ঞা আমার জানা নেই। তবে আমি মনে করি যেটি হৃদয়ের টান, সেটি প্রাকৃতিকভাবেই আসে। যেটি পরিবার যেমন মা-বাবা, ভাইবোনদের ক্ষেত্রে তো থাকবেই। এ ছাড়া সমাজে চলতে গেলে আচরণগত মিলের কারণে কিছু মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধন গড়ে ওঠে।’

নাদিয়া ও নাঈম, অভিনয় শিল্পী

ভালোবাসার চিরন্তনী গান

সেলিম কামাল

‘ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে’- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানের মতো রোমান্টিক গান আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুলেরও অনেক আছে। বলা যেতে পারে ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল’ কিংবা ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ’ গান দুটির কথা। দুই কবিরই অসংখ্য ভালোবাসার গান রয়েছে- যেগুলোর আবেদন চিরন্তন। এসব গানকেই আমরা বলছি চিরন্তনী গান। এ দু’ধরনের গান ছাড়াও বেশ কিছু গান একই আবেদন নিয়ে বাঙালি শ্রোতার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। একইভাবে আমাদের অনেক শিল্পীর গাওয়া আধুনিক গানও চিরন্তনী ভালোবাসার গান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। রয়েছে ব্যান্ডেরও কিছু গান। মাহমুদুন্নবীর গাওয়া ‘ও মেয়ের নাম দেব কী’, ফেরদৌসী রহমানের ‘কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু’, আবিদা সুলতানার ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’, নাহিদ নিয়াজীর ‘আকাশের ওই মিটিমিটি তারার সনে’, পাপিয়া সরোয়ারের গাওয়া ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’, বশীর আহমেদের ‘যারে যাবি যদি যা’, রুনা লায়লার ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘যখন থাকবে কোলাহল’, সাবিনা ইয়াসমীনের ‘এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’, সুবীর নন্দীর ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, সৈয়দ আবদুল হাদী ও সামিনা চৌধুরীর গাওয়া ‘এমনও তো প্রেম হয়’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাস তো’, এন্ড্র– কিশোর ও সামিনা চৌধুরীর গাওয়া ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’ প্রভৃতি গান এখনও শ্রোতারা গুনগুন করে গেয়ে থাকেন। এ ছাড়া উল্লেখ করা যেতে পারে তপন চৌধুরীর ‘পৃথিবীর তিন ভাগ জল’, তপন চৌধুরী ও শাকিলা জাফরের দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি আমার প্রথম সকাল’, কুমার বিশ্বজিতের ‘তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসতে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, এন্ড্র– কিশোরের ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ওগো বিদেশিনী’, জেমসের ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব’, ‘সামিনা চৌধুরীর ‘ওই ঝিনুক ফোঁটা’, মাকসুদের ‘তোমাকে দেখলে একবার’, আসিফের ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’- গানগুলোর কথা। রয়েছে আরও অনেক ভালোবাসার গান। যা যুগে যুগে শ্রোতার হৃদয়ে বহমান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম