Logo
Logo
×

তারাঝিলমিল

গানের ভাষা ও ভাষার গান

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভাষার মতো গানের ভাষায়ও এসেছে পরিবর্তন। গানে জুড়ে যাচ্ছে বিদেশি শব্দ, ভেঙে ফেলা হচ্ছে ব্যকরণের রীতি। উচ্চারণে ভর করেছে অশুদ্ধতা। গানে বিভিন্ন ভাষার সম্মিলনের বিষয়টি অনেক সময়ই বিভ্রান্তিকর ও অদ্ভুতুড়ে হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভাষা নিয়ে আসেনি আর কোনো নতুন গান। লিখেছেন-

Icon

সেলিম কামাল

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘স্মৃতির আকাশে যেন বহুদিন পর, মেঘ ভেঙে উঠেছিল পূর্ণিমা চাঁদ’ বেবী নাজনীনের গাওয়া এ গানের কথাই বলে দিচ্ছে ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনের রাত’- কতটা সাহিত্যমানসমৃদ্ধ গান। উল্লেখ করার মতো এ রকম বহু গান পাওয়া যাবে।

গানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত এবং সঠিকভাবে ভাষার প্রয়োগ করা গীতিকারের দায়িত্ব। আজকাল অনেক গান হচ্ছে, বাংলা-ইংরেজি শব্দের মিশেলে। ভাষা হল সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম মাধ্যম। সেই ভাষারই যদি সঠিক প্রয়োগ না ঘটে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংস্কৃতি। নিজের ভাষা, কৃষ্টি, নিজের সংস্কৃতি নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।

আমাদের ভাষা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে। এটিকে শ্রদ্ধা করতে হবে মায়ের মতো করেই। যখন বাংলায় গাইব তখন বাংলার সঠিক উচ্চারণেই গাইব। এ প্রজন্ম না পারে ঠিকমতো বাংলা বলতে, না পারে ইংরেজি বলতে।

আপনি ইংরেজি পড়াশোনা করে বাংলায় গান গাইবার অধিকার রাখেন। কিন্তু অবশ্যই সঠিক উচ্চারণে শব্দগুলো উচ্চারণ করতে হবে নিজের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ থেকেই। গান রচনার ক্ষেত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।

সাহিত্যমানসমৃদ্ধ গান এখন আর রচিত হয় না বললেই চলে। লোকজ গান ছাড়া অন্য কোনো গানের কথা গুরুচণ্ডালী দোষ কোনোভাবেই মানা যায় না। সহজ কথায় আকর্ষণীয় মানের গান রচনা করা দোষের নয়। কথা হচ্ছে গানকে সাহিত্যমান দেয়ার চেষ্টাটি অন্তত জরুরি। এ চেষ্টা কেউ কেউ যে ধরে রাখেননি- তা বলছি না। তবে তারা সংখ্যায় হাতেগোনা। শুধু তাই নয়, ফিউশনের নামে গানের কথাকে করা হচ্ছে বিকৃত।

টিএইচ শিকদার, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কেজি মুস্তাফা, সিকান্দার আবু জাফর, শামসুর রাহমান, মুস্তাফিজুর রহমান গামা, অধ্যাপক আলিমুজ্জামান চৌধুরী, ড. মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান, নাসির আহমেদ, মাহমুদ শফিক, ড. মনিরুজ্জামান অপূর্ব সব গান লিখতেন। এরপর এলেন গাজী মাজহারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম বাবু, লিটন অধিকারী রিন্টু, লতিফুল ইসলাম শিবলী, শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, মনিরুজ্জামান মনির, মুন্সি ওয়াদুদ, শাহ আলম সরকার, প্রিন্স মাহমুদ প্রমুখের লেখা গানে পাওয়া গেছে প্রকৃত সাহিত্যমান। এরপর আর উল্লেখযোগ্য কাউকে আমরা পাইনি যাদের লেখা দীর্ঘদিন হৃদয়ে গেঁথে থাকার মতো। বলা চলে, এখন চলছে বাংলা গানের অবক্ষয়ের যুগ।

১৯৪৮ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলনের প্রথম পর্ব থেকে ভাষার গান রচনা শুরু হয়। এ গান আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। ভাষার প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ, আন্তরিকতা- এসব আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মায়ের ভাষার প্রতি আকুতির এক অপরূপ দৃষ্টান্ত আমাদের এ অমর একুশ। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা সেই বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ চির অম্লান এক ভাষার গান।

ভাষা নিয়ে আলাদাভাবে রচিত আর উল্লেখযোগ্য গান নেই বললেই চলে। অতুল প্রসাদ সেনের কথায় আরেকটি অমর সৃষ্টি ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।’ আব্দুল লতিফ রচিত আরেকটি কালজয়ী ভাষার গান ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।/ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়।/ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। ফজল-এ-খোদার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে’ গানটিও আমাদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায় আজও।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম