বাপ্পী চৌধুরী
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাপ্পি চৌধুরী, এ সময়ের চিত্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম। সমকালীন অন্য নায়কদের থেকে কিছুটা আলাদা ছেলেটি। পুরোটাই ফিল্মিক। চলাফেরা কিংবা অভিনয়, সবকিছুতেই স্বাতন্ত্র্যভাব। ক্যারিয়ার নিয়ে হয়তো একটু বেশিই ভাবনা তার। ভাঙছেন নিজেকে। গড়ছেন ভিন্নভাবে। খেলছেন চরিত্র নিয়ে। বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরেও তাকে দেখা যাচ্ছে শৈল্পিক ছবিতে।
করোনার এ দুঃসময়েও বসে নেই চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন পুরোদমে। শুটিং করছেন ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ নামে একটি ছবির। অপূর্ব রানার পরিচালনায় এ ছবিতে বাপ্পির চরিত্র ‘সাইকো’। খুন করাই যার নেশা। শুরুতেই বলা হয়েছে, চরিত্র নিয়ে খেলছেন এ নায়ক। নিজেকে ভাঙছেন। তার প্রতিফলন দেখা গেছে বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রিয় কমলা’ ছবিতে।
শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় এ ছবিতে এ নায়ককে দেখা গেছে বৃদ্ধের চরিত্রে। ছবিটি যুদ্ধকেন্দ্রিক। ছেলেটি বিয়ের পর চলে যায় মুক্তিযুদ্ধে। বৃদ্ধ বয়সে তারই স্মৃতিচারণে অতীত খুঁজে বেড়ায়। ছবির বাণিজ্যিক ফলাফল যাই হোক না কেন, নিজেই পারফর্মেন্সে বাপ্পি উতরে গেছেন। ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন অপু বিশ্বাস। এর আগেও এ নায়িকার সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’।
দেবাশীষ বিশ্বাসের পরিচালনায় নির্মিত এ ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি। এ ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন কমেডি চরিত্রে। এখানেও সেই চরিত্রের খেলা। ত্রিশটিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করা এ নায়কের বেশিরভাগ চরিত্রই ছিল রোমান্টিক ঘরানার। এর বাইরে এসে এ ছবিতে কমেডি চরিত্রে নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করেছেন।
যদিও ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি, কিন্তু এটি নিয়ে বেশ আশাবাদী বাপ্পি। বলেছেন, ‘আমি সব সময় যে কোনো ছবিতে চরিত্র অনুযায়ী সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছি এ ছবিতে। কিছু ভুল-ভ্রান্তি থাকবেই। সেটি যেই করুক না কেন। এসব বাদ দিলে কাজটি যে একটি পরিশ্রমের ফসল সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন সবাই। আশা করি ছবিটি ভালো লাগবে দর্শকের। বিশেষ করে আমি আমার চরিত্র নিয়ে বেশ আশাবাদী।’
চরিত্রের বৈচিত্র্যময় খেলায় মত্ত বাপ্পি। কিন্তু ক্যারিয়ারে আরও একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। ইতিহাসবিজড়িত একটি কাজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তার মরদেহ দাফন করার জন্য নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নেয়া হয়। সেখানে তাকে গোসলছাড়া দাফন করতে চাইলে বাদ সাধেন মসজিদের ইমাম। তিনি গোসল ছাড়া দাফন করবেন না।
‘৫৭০’ ব্র্যান্ডের একটি কাপড় কাচার সাবান দিয়ে তখন তাকে গোসল করানো হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সেই মর্মান্তিক ঘটনাবলীর কয়েকঘণ্টা নিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি ছবি। নাম ‘৫৭০’। পরিচালনা করেছেন আশরাফ শিশির। সেই ছবিতে একজন সৈনিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাপ্পি চৌধুরী। যে সৈনিক বঙ্গবন্ধুর মরদেহ ধানমণ্ডির ৩২ নাম্বার থেকে বের করাসহ টুঙ্গিপাড়ায় দাফন পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। পুরো একটি ইতিহাসের সাক্ষী। যে চরিত্রটিতে অভিনয় করতে গিয়ে বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন এ নায়ক। শুটিংয়ের সময় পোশাক ও চুলের কাট- সবকিছু দেখে মনে হল, এ যেন রুপালি পর্দার বাইরের অন্য এক বাপ্পি। এ ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি এমন একটি ছবিতে কাজ করতে পেরে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের আবেগ, ভালোবাসা ও অস্তিত্বের নাম। আমার কাছে বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। এ কাজটি করতে গিয়ে আরও অনেক কিছু ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।’ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ১৭ মার্চ সৈনিকরূপী বাপ্পিকে পর্দায় দেখতে পাবেন দর্শকরা। করোনার মধ্যে ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের পরিচালনায় ‘কোভিড-১৯’ নামে একটি ছবির শুটিং করেছেন বাপ্পি। এখানে তিনি একজন ডাক্তার।
ছবিটির বেশিরভাগ অংশের শুটিং শেষ। দীপঙ্কর দীপনের ‘ঢাকা-২০৪০’ ছবিতে তাকে দেখা যাবে একজন প্রবাসীর চরিত্রে। তাও দুই রকম। একবার ছেলে, আরেকবার বাবা। এ ছবিটিরও কিছু অংশের শুটিং বাকি আছে। বেলাল সানির ভৌতিক ছবি ‘ডেঞ্জারজোন’-এ বাপ্পিকে দেখা যাবে কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রের ভূমিকায়। এ ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে গাজী জাহাঙ্গীরের ‘প্রেমের বাঁধন’ ছবিতে রোমান্টিক-অ্যাকশন চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। প্রত্যেকটি চরিত্রেই নিজেকে নিয়ে এক্সপিরেমেন্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
‘ভালোবাসার রঙ’ ছবি দিয়ে ঢাকাই ছবির জগতে পা দেয়া বাপ্পি চৌধুরী কিন্তু সেই আগের ছেলেটি নেই। চলাফেরা, কথাবার্তায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সমসাময়িক অনেক নায়ককে আড্ডা কিংবা পার্টিতে হরহামেশা দেখা গেলেও তিনি থাকেন অনেকটা আড়ালে। এর কারণও পরিষ্কার। তিনি নায়ক। নিজেকে নায়ক ভাবতেই পছন্দ করেন। তাই নিজেকে আলাদা করে রাখার জুতসই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
বলেছেন, ‘রুপালি পর্দার একজন নায়ক কিংবা নায়িকাকে দর্শক টিকিট কেটে দেখতে যান। অনেক দর্শক-ভক্তের স্বপ্নের নায়ক-নায়িকা তারা। প্রিয় তারকাকে দেখার একটি আকুতি থাকে তাদের। ততক্ষণই থাকে, যতক্ষণ তাকে মুখোমুখি দেখা না যায়। তাই সিনেমাহলে ছুটে যান প্রিয় তারকার অভিনয় দেখতে।
যদি হাতের নাগালে তাকে পেয়েই যান, তাহলে পর্দায় দেখার আগ্রহ কমে যাবে এবং এটাই সত্যি ও বাস্তব। আমি দর্শক-ভক্তদের মনের কোণে স্থায়ী আসন গাড়তে এসেছি, হারিয়ে যেতে নয়।’ ব্যক্তিজীবনে এ বাপ্পির বিয়েশাদি নিয়েও মিডিয়ায় বেশ চটকদার খবর প্রকাশ হয়েছে। কেউ বলছেন, বাপ্পি বিয়ে করেছেন। কেউ বলছেন, ‘না’। বাপ্পি কী বলছেন? উত্তর দিলেন রহস্য রেখেই। বলেছেন, ‘আমাকে নিয়ে আলোচনা তো হচ্ছে। হোক না। ভুলে যেতে দেব না আমারে।’
