সারা দেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ
খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে টিয়ার শেল : শিমুল বিশ্বাসসহ ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার ৮৭৮
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ‘নিরাপত্তা চাদরে’ ঢাকা ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা। শুধু রাজধানীতেই নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ৩৫ হাজারের বেশি র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্য। এমন কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে রায়ের আগে-পরে ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে জমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘ্নে জমায়েত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও। এ সময় অনেক স্থানেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আবার অনেক স্থানে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তখন বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিএনপির বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা, ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অনেক স্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মিলে বিএনপি কর্মীদের হটিয়ে দেয়। এসব ঘটনায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া এদিন রাতে ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে চট্টগ্রামগামী একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে বৃহস্পতিবারও সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান অব্যাহত ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসসহ সারা দেশে ৮৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় চার হাজার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রায় শুনতে খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার পথে চার দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথম দফায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে মগবাজার ও কাকরাইলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। কাকরাইলে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সেখানে দুটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার পুড়িয়ে দেয়। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি বকশিবাজারে অবস্থিত অস্থায়ী আদালতে প্রবেশের পর চানখাঁরপুলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বকশিবাজারেও পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে শুধু রাজধানীতেই ৩৫ হাজারেরও বেশি পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে ৫ হাজার পুলিশ সদস্য। ২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্যও নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। নগরীতে সীমিত সংখ্যক যান চলেছে। দূরপাল্লার সীমিত যান ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে। এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিহত করতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলে শোডাউনও করেছে।
এদিকে নিরাপত্তা কড়াকড়ির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হননি। সদরঘাট লঞ্চ ঘাটে আওয়ামীপন্থী নৌ-শ্রমিকরা লঞ্চ ভিড়তে দেয়নি। লঞ্চ যাত্রীদের পড়তে হয়েছে নৌ পুলিশের তল্লাশির মুখে। রাজধানীর ৭টি প্রবেশ মুখসহ পুরো নগরীতেই তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়।
খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সারা দেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টাও করেনি। কোথাও কোনো আতঙ্ক নেই। কেউ প্রতিবাদও করেনি।
বৃহস্পতিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণ পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া নির্দেশ দেন মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া অন্য কেউ আদালতে প্রবেশ করবেন না। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, একটি রায়কে কেন্দ্র করে জনমনে কিছু উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বকশিবাজারের আদালত প্রাঙ্গণ পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন ধরে একটি গোষ্ঠী সাইবার ওয়ার্ল্ডে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে আগুন : বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, মগবাজার, কাকরাইল ও চানখাঁরপুলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছিল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রথম ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মগবাজার মোড় পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন দেখা যায়, মগবাজারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের যেতে বাধা দেয় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রথমে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং পরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ভাংচুর করে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর প্রধান বিচারপতির বাসভবন এলাকায় আসার পর সেখানেও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যেই টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। কাকরাইল চার্চ মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের পূর্ব ফটকে একটি মোটরসাইকেল ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ফটকের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়। অধিদফতরের সামনের সড়ক বিভাজকেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপি কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। দু’জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তারা মৎস্য ভবন এলাকায় পুলিশবক্স ভাংচুর করে। মৎস্য ভবন এলাকায় বিএনপি কর্মীরা একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বকশিবাজার মোড় পার হয়ে আদালতের দিকে এগিয়ে যায়। এসময় তার গাড়ির পেছনে আরও ২টি গাড়ি প্রবেশ করে। খালেদা জিয়ার গাড়ি বকশিবাজার মোড় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো রোডটি ব্যারিকেড দিয়ে দেয় পুলিশ। তার কিছুক্ষণ পর এক এক করে ৭টি র্যাবের গাড়ি প্রবেশ করে। এ সময় চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উত্তেজিত বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। গলির মোড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ওখান থেকে পুলিশ যুব মহিলা দলের পপী আক্তার নামক এক নেত্রীসহ তন্নী মল্লিকা, রেবেকা আক্তার, কামরুজ্জামান, আকাশ, ফয়সাল, নাঈম, মীর মাহমুদুল্লাহ, আল-আমিন নামক দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করে। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে ৬টি গাড়িতে করে র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে সকালে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া নির্দেশনা দেন, আদালতে মামলা সংশ্লিষ্ট ছাড়া বিএনপিপন্থী কোনো আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সকাল সোয়া ১০টার দিকে তারা জোর করে আদালতে ঢুকতে চান। এ সময় তাদের পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। প্রায় ১০ মিনিট ধরে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এদিকে দুপুর ১টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশের পর সেখানে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের আবারও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করার পর দুপুরে আরেক দফা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
রাজধানীতে শিমুল বিশ্বাসসহ অর্ধশতাধিক গ্রেফতার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার পরপরই বকশিবাজার এলাকা থেকে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নয়াপল্টন থেকে ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন রাজধানী থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্ট এলাকা থেকে দু’জন, টিএসসিতে নারীসহ ১০ জন, রমনা থেকে ১ জন, বকশিবাজার থেকে নারী নেত্রী পপিসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে নিখোঁজ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলকে মগবাজার এলাকায় দেখা গেছে। তিনি খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গেই ছিলেন।
হাইকোর্ট চত্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আটকে রাখে পুলিশ : এদিকে দুপুরে শিক্ষা ভবনের উল্টোদিকে হাইকোর্টের গেটে অবস্থান নিয়েছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সকাল ৯টা থেকে শতাধিক আইনজীবী সেখানে অবস্থান নেন। সকাল ১০টার দিকে আইনজীবীরা একবার গেট থেকে বের হয়ে সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন। পুলিশ তাদের সেখানে বসতে দেয়নি। তাদের ফটকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। দুপুরের দিকে আবারও তারা বসতে চান। পরে পুলিশ তাদের ফটকের ভেতর ঢুকিয়ে তালা মেরে দেয়।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান ও শোডাউন : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। কোথাও কোথাও তারা মোটরসাইকেলে করে শোডাউনও দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার পথে তেজগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রমনা থানা ও মগবাজারের আশপাশে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, জগন্নাথ হল, বুয়েট এলাকায় ছাত্রলীগ অবস্থান নেয়। হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাব ও পল্টন চত্বরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে একাধিকবার শোডাউন করে। সকাল ৮টা থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেয় মতিঝিল থানা ছাত্রলীগ। শতাধিক নেতাকর্মী চেয়ার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান করে। বিকাল পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করে। তবে সেখানে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ হয়নি। মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় সোনালী ব্যাংকের সিবিএ’র নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার সড়কগুলো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং আশপাশের সড়কে অবস্থান করে। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের শত শত মোটরবাইকসহ অবস্থান করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এছাড়া বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর ইকুরিয়া দ্বিতীয় সেতুর কদমতলী ও তৃতীয় সেতুর বছিলায় পুলিশের পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ : যুগান্তরের ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের খবর-
ময়মনসিংহ : রেলওয়ে জংশন স্টেশনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগিতে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে জিআরপি পুলিশ ও রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কয়েকটি সিট পুড়ে গেছে। পরে ট্রেনটি রাত সোয়া ৮টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকালে নতুন বাজার ট্রাফিক মোড়ে পুলিশ ২৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুই কর্মীকে আটক করে। আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ মিছিল করেন আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের তিন দফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ১০ পুলিশ সদস্য ও ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সকাল থেকেই নগর বিএনপির কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। সেখানে ঢোকার চেষ্টা করলে বেলা ১১টা, দুপুর দেড়টা ও ২টায় এ সংঘর্ষ হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও মহিলা দল নেত্রী আঁখি সুলতানা।
সিলেট : রায় ঘোষণার পরপরই মিছিল বের করলে কোর্টপয়েন্ট এলাকায় বাধা দেয় পুলিশ। নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সংঘর্ষ নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এগিয়ে গেলে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে। ককটেল ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। উভয়পক্ষে কয়েক অস্ত্রধারীকেও দেখা গেছে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সিটি পয়েন্টে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তখন হকার পয়েন্টে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংর্ঘষ। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
রংপুর : বিকালে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে কে বা কারা গুজব ছড়ায় বিএনপির একটি সশস্ত্র মিছিল আসছে। এরপর তারা লাঠিসোটা নিয়ে নিজেরাই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হয়ে শপিংমলে ও যানবাহনে এলোপাতাড়ি ভাংচুর চালাতে থাকে। পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যায় সিটি বাজারের সামনে ছাত্রদল ও যুবদলের মিছিল থেকে যান চলাচলে বাধা দেয়া হয়। তারা কয়েকটি রিকশা ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।
ফেনী : সন্ধ্যায় একদল যুবক দেশি অস্ত্র নিয়ে মহাসড়কের রামপুরে অতর্কিত হামলা ও ভাংচুর চালায়। তারা ৮টি যাত্রীবাহী বাসসহ ৪০-৫০টি গাড়ি ভাংচুর করে।
কালকিনি (মাদারীপুর) : একটি পরিবহনে অগ্নিসংযোগের চেষ্টাকালে সন্ধ্যায় বনি ইয়ামিন নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে ডাসার থানা পুলিশ। তিনি কাজীবাকাই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।
দিনাজপুর : মুন্সীপাড়ায় বিএনপি মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। বাইপাস সড়কে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাংচুর করে মিছিলকারীরা।
সারা দেশে গ্রেফতার
রাজশাহী : ৭৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান জানান, জেলার ৯ থানা ও জেলা পুলিশ ৫০ জনকে গ্রেফতার করে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখায়ের আলম জানান, নগরীর চার থানা ও মহানগর ডিবি পুলিশ ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ১৬ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামি।
খুলনা : পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্ল্যা জানিয়েছেন, নগরী থেকে ৬ নেতা (সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, শামসুজ্জামান চঞ্চল, মেহেদী হাসান দিপু, মো. সালাউদ্দিন ও রানা) এবং ৯ উপজেলা থেকে ৫৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
জয়পুরহাট : ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আকরাম হোসেন জানান, সদরে ৫, পাঁচবিবিতে ৫, আক্কেলপুরে ৫, ক্ষেতলালে ১ ও কালাই থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম : সদরে ১৯, রৌমারীতে ৬ ও ফুলবাড়িতে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা : ৫৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছেন ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি কবির হোসেন, ভোমরা ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি আবদুর রশীদ, আশাশুনি উপজেলা যুবদল সহ-সভাপতি জাকির হোসেন, কুশলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ইদ্রিস আলি।
ঝিনাইদহ : পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ৬টি উপজেলা থেকে ১৬ জামায়াত ও ৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মীসহ ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭ টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া নীলফামারীতে ২১, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ১৪, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ৩, সিলেটের বিশ্বনাথে ৩, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় ৪, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ৪, বরগুনায় ৩ কিশোরসহ ৭, ভোলার মনপুরায় ৩, সিরাজগঞ্জে ১, নাটোরের বড়াইগ্রামে ৬, সিরাজগঞ্জে ১, রায়গঞ্জে ৭ ককটেলসহ ৬, পটুয়াখালীতে ১, ফরিদপুরে ২ জনকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছেন যুগান্তরের প্রতিনিধিরা।
বরিশালে নেতাকর্মীদের বাড়ির সামনে পাহারা বাসায় পুলিশ। রায় ঘিরে থমথমে অবস্থা ছিল রাজশাহীতে। পূর্ব থেকে মহানগর বিএনপি ভুবনমোহন পার্কে অবস্থানের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের আগেই পার্ক দখলে নেয় পুলিশ।
