Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সেই তামিমের ব্যাটেই সিরিজ জয়

বাংলাদেশ ৩২২/৮, ৫০ * জিম্বাবুয়ে ৩১৮/৮, ৫০ * ফল : বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সেই তামিমের ব্যাটেই সিরিজ জয়

১৫৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার পর তামিম।

কিছুতেই হাসছিল না তার ব্যাট। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য পড়েছিলেন প্রবল সমালোচনার মুখে। অবশেষে দুঃসময়কে পাল্টা জবাব দিয়ে নিজের ছায়া থেকে বেরিয়ে এলেন তামিম ইকবাল। সব জড়তা কাটিয়ে চোখ ধাঁধানো সব শটে ১৫৮ রানের রেকর্ডরাঙা ইনিংসে নিজেকে যেন নতুন করে চেনালেন দেশসেরা ওপেনার।

ইনিংস বিরতিতে হাসিমুখে বলেছিলেন, ‘আজকে আমার দিন ছিল।’ কিন্তু তামিমের স্বরূপে ফেরার দিনটা প্রায় পণ্ড হতে বসেছিল। মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আট উইকেটে ৩২২ রানের পাহাড় গড়েও হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তামিমের অনবদ্য ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত বিফলে যায়নি। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিম্বাবুয়েকে চার রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। 

এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন, আমাদের খেলোয়াড়দের টিম স্পিরিট ও সিরিজে তাদের পারফরম্যান্স দেখে পুরো জাতি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভবিষ্যতেও এ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখবে।

লোয়ার অর্ডারের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে শেষদিকে স্বাগতিকদের চাপে ফেলে দেয়া জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত আট উইকেটে ৩১৮ রানে থামে। জয়ের জন্য শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। আল-আমিনকে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে সমীকরণটা দুই বলে ছয় রানে নামিয়ে এনেছিলেন ডোনাল্ড তিরিপানো।

তবে প্রবল চাপের মুখে শেষ দুই বলে মাত্র এক রান দিয়ে আল-আমিনই হাসেন শেষ হাসি। ২৮ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিরিপানো। কামুনহুকামওয়ে (৫১), মাধেভেরে (৫২) ও সিকান্দার রাজাও (৬৬) ফিফটি পেয়েছেন। তবে আগের ম্যাচে ১৬৯ রানে হারা জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে ফেরানোর কৃতিত্ব অষ্টম উইকেটে মুতোম্বোদজি ও তিরিপানোর ৮০ রানের টর্নেডো জুটির।

তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। ৫২ রানে তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার তাইজুল ইসলাম। সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজের জায়গায় সুযোগ পাওয়া শফিউল ইসলাম ও আল-আমিন ছিলেন ভীষণ খরুচে।

শেষ বলে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে মূলত তামিমের অসাধারণ ইনিংসটি। ১৩৬ বলের ইনিংসে ২০ চারের সঙ্গে রয়েছে তিনটি ছক্কা। তামিমের ১৫৮ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। তাতেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডটা টানা দ্বিতীয় ম্যাচে নতুন করে লিখল বাংলাদেশ।

বারোতম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাত হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন তামিম। ৫০ বলে ৫৫ রানের নিখুঁত ইনিংসে ম্যাচসেরা তামিমকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ ওয়ানডে জয়ের মাইলফলক ছোঁয়া মুশফিকুর রহিম। এ ছাড়া রান পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ (৪১) ও মোহাম্মদ মিঠুন (৩২*)। 

প্রায় দু’বছর পর তামিম ইকবাল প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন। তার বাউন্ডারিবেষ্টিত ১৫৮ রানের হাত ধরে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৩২২ রান তোলে আট উইকেটে। প্রথম ওডিআইতে ৩২১/৬ ছিল স্বাগতিকদের সংগ্রহ। তিন ছয় ও ২০ চারের ঋদ্ধ তামিমের ইনিংস তার ক্যারিয়ারসেরা।

এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আগের সর্বোচ্চ ছিল সাকিব আল হাসানের ১৪০৪ রান। তাকে ছাড়িয়ে তামিম এখন ১৫৫৬।

পাওয়ারপ্লেতে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকানো তামিম পরে খোলস থেকে বেরিয়ে এসে জিম্বাবুয়ের পেস আক্রমণ লণ্ডভণ্ড করে দেন। ইনিংসের শুরুতে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর রানআউট সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইনিংসে রানের ফল্গুধারা এতটুকু কমেনি তামিমের ব্যাটিং আগ্রাসনের কল্যাণে।

সপ্তম ওভারে তামিমের ড্রাইভ বোলার কার্ল মুম্বার হাত ফসকে স্টাম্পে যখন আঘাত করে, প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান লিটন তখন পপিং ক্রিজের বাইরে। চার ওভার পর শান্তর রানআউট তামিমের সঙ্গে তার ভুল বোঝাবুঝির ফসল। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৮৭ রানের জুটি গড়ার পথেও একবার সিদ্ধান্তহীনতা বিপদ ডেকে আনতে পারত। মুশফিক চার ছয়ে ৫৫ রান করেন ৫০ বলে।

বাংলাদেশের ইনিংস আবর্তিত হয়েছে তামিমকে ঘিরে। ৪২ বলে প্রথম ফিফটি এবং দ্বিতীয়টি মাত্র ৬৪ বলে পূর্ণ করেন এই বাঁ-হাতি। ২০১৮-র জুলাইয়ের পর নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান তিনি সিঙ্গেলের ওপর ভর করে। শুধু চার-ছয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেননি।

নিজের বারোতম সেঞ্চুরির পথে তামিম ওডিআইতে সাত হাজার রানও ছাড়িয়ে যান। ২০০৯-এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রান করেছিলেন তিনি। কাল নিজের রেকর্ড ভেঙে দিলেন লং লেগের ওপর দিয়ে তৃতীয় ছয় মেরে। চতুর্থ ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ৪৬তম ওভারে লং-অফে মুতোম্বোদজিকে ক্যাচ দেন তামিম। বোলার মুম্বা।

মাহমুদউল্লাহ (৪১) তামিমকে সঙ্গ দেন চতুর্থ উইকেটে ১০৬ রানের জুটি গড়তে। মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে চার্লটন টিশুমা ওডিআইতে নিজের প্রথম উইকেট পান। তামিমের উইকেট নেয়ার পর মুম্বা ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে (৫)। ৪৯তম ওভারে মাশরাফি মুর্তজা ও তাইজুল ইসলামকে জোড়া শিকার করেন ডোনাল্ড তিরিপানো।

দু’জনই ক্যাচ দেন ডিপে। চার মেরে ইনিংস শেষ করা মোহাম্মদ মিঠুন ১৮ বলে অপরাজিত ৩২ রান করেন। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ ৮৩ রান তোলে। মুম্বা ও তিরিপানো দুটি উইকেট নেন।

শুক্রবার সিলেটে তৃতীয় ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে ওয়ানডে সিরিজ। এক ম্যাচ হাতে রেখে ২-০তে সিরিজ জিতে নেয়ায় শেষ ওডিআইতে বাংলাদেশ দলে বড়সড় পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক।

 

তামিম জয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম