Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নতুন করোনাভাইরাস: সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে করণীয়

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর * জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে এবং ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে -অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ * সব জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে -মহাপরিচালক * লক্ষণ দেখা দিলে বাড়িতে থেকেই ফোন করুন -আইইডিসিআর পরিচালক

Icon

রাশেদ রাব্বি

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন করোনাভাইরাস: সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে করণীয়

ছবি: এএফপি

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দু’জন ইতালি প্রবাসীর মাধ্যমে দেশে এ রোগ প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, বাংলাদেশের পক্ষে যতটা প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব, সেটি নেয়া হয়েছে। আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত না হয়ে সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। তবে জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে এবং ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আতঙ্কিত না হয়ে এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। করোনাভাইরাসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এটি এখন একটা বড় সমস্যা। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সাবধান থাকতে হবে।

করোনাভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। আপনারা সবাই সেই দিকনির্দেশনা মেনে চলবেন। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। তাহলে যে কোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব।

বিশেষজ্ঞরা জানান, নতুন করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

যেহেতু এই ভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন, তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, এ রোগে মৃত্যুহার খুবই কম। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

সবাইকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বেশি করে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে, বাইরে থেকে বাসায় প্রবেশের পর অবশ্যই দুই হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় টিসু পেপার বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। রুমালটি যত দ্রুত সম্ভব সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে না যাওয়াই ভালো।

আর যদি বাসায় গৃহপালিত পশু-পাখি থাকে, তাহলে তাদের পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ এড়াতে চাইলে ঘন ঘন হাত ধোঁয়া ভালো। সেই সঙ্গে নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীও নিরাপদ রাখতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআর।

এগুলো হল- নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ); অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না; ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে; কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে (হাঁচি/কাশির সময় বাহু/ টিসু/ কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা); অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে; মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে; অসুস্থ হলে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে; বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে অবশ্যই নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে; কারও সঙ্গে হাত মেলানো (হ্যান্ডশেক) বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে; জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বিদেশ ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে; এ সময়ে অন্য দেশ থেকে প্রয়োজন ব্যতীত বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে হবে; অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। রোববার তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজন আক্রান্ত হয়েছে। এতে সারা দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এমন কিছু বলা যাবে না।

তবে সাধারণ মানুষকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আইইডিসিআর’র এই পরিচালক বলেন, সবাইকে মাস্ক পরে ঘুরতে হবে- বিষয়টা এমন নয়। আক্রান্ত রোগী ও রোগীকে যিনি সেবা প্রদান করবেন, তারা মাস্ক পরবেন।

অধ্যাপক ফ্লোরা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, লক্ষণ দেখা দিলে যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই আইইডিসিরআর’র হটনম্বরে ফোন করুন। অথবা স্থানীয় সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমদের র‌্যাপিড রেসপন্স টিম আপনাদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, দেশে রোগী শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ রোগে মৃত্যুহার ৩ থেকে ৪ শতাংশ।

আক্রান্তদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক মানুষেরই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়।

আমরা আজ সকালে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া রোববার বিকালে দেশের সব সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আইইডিসিআর’র পরামর্শ মেনে চললেই আমরা এ রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করতে পারব।

 

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম