Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকরে অনেক ব্যাংকের গড়িমসি

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকরে অনেক ব্যাংকের গড়িমসি

ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকরে এখনও গড়িমসি করছে অনেক ব্যাংক। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের প্রায় সব ব্যাংকই ১ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর করেনি। কোনো কোনো ব্যাংক সাধারণ ছুটি শেষে এটি বাস্তবায়নের কথা বলছে। তবে প্রথম সারির ও পুরনো বেশির ভাগ ব্যাংক এটি কার্যকর করেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকরের এখনই সুযোগ। সময়-পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, শূন্য সুদে ঋণ দিলেও ঋণ নেয়ার লোক পাওয়া যাবে না। এ সময়ও যদি ৯ শতাংশ (সিঙ্গেল ডিজিট) সুদ কার্যকর করতে না পারি তাহলে বাকি জীবনেও এটি আর কার্যকর হবে না।

জানতে চাইলে একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামানোর বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু এখনও অনেক ব্যাংক তা করেনি। এ সংখ্যা কোনোভাবেই ১৫-১৬টি ব্যাংকের কম হবে না।

তিনি বলেছেন, নতুন প্রজন্মের কোনো ব্যাংকই সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেয়ার নির্দেশনা মানেনি। এটা সব ব্যাংকেরই মানা উচিত। কোনো কোনো ব্যাংক করোনার ছুটি শেষে এটি কার্যকরের কথা বলছে। তিনি বলেন, তখন পারলে এখন পারবে না কেন।

ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেছেন, এমটিবি ঋণের সুদ এক অংকে নামিয়ে এনেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে। কেউ না করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটা সবার করা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাটি কার্যকরে গড়িমসির সুযোগ নেই।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছি। এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রত্যেক শাখায় পাঠিয়েছি। তিনি বলেছেন, করোনার মহামারীতে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া উচিত। এ সময়ও যদি ৯ শতাংশে ঋণের সুদ কার্যকর করতে না পারি তাহলে কখন কার্যকর করব। সবাইকে একযোগে এ হার কার্যকর করা উচিত। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হালিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করেছি। ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরণের ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা ২৫ মার্চ থেকে ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকর শুরু করেছি। অন্য কারও খবর আমার জানা নেই।

নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, সব প্রস্তুতি রেখেছি। তবে ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকর করব সাধারণ ছুটি শেষে, একটু স্বাভাবিক হলে। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ অনেকে করে থাকবেন। বিলম্বে কার্যকর কি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের পরিপন্থী নয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অসুবিধা নেই। এপ্রিলের মধ্যেই করব। প্রয়োজনে এ মাসের শেষ সপ্তাহে।

জানা গেছে, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ এক অংকে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, সব ধরনের ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ সুদ হার হবে ৯ শতাংশ।

গ্রাহক কোনো কারণে খেলাপি হলে ওই সময়ের জন্য ঋণের স্থিতি বা কিস্তির বিপরীতে ৯ শতাংশের বাইরে অতিরিক্ত আরও ২ শতাংশ দণ্ডসুদ আরোপ করা যাবে। এর বাইরে ঋণের বিপরীতে অন্য কোনো সুদ বা মুনাফা আরোপ করা যাবে না।

তবে রফতানির ঋণের সুদের হার ৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। আর ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে দেয়া ঋণের সুদহার এর আওতায় আসবে না। এ নির্দেশনা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে হবে। সার্কুলার জারির পর এক মাসের বেশি সময় পেয়েছে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের। কিন্তু ১ এপ্রিলেও অনেক ব্যাংক তা কার্যকর করেনি। তবে সরকারি চার ব্যাংক অনেক আগেই এ নির্দেশনা কার্যকর করেছে।

২০১৮ সালের ১৪ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেন। নানামুখী তৎপরতার পরও ঋণের সুদের হার কমেনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করে।

ব্যাংক গড়িমসি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম