Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ওষুধ নেই: সহায়ক ওষুধেই চলছে করোনা চিকিৎসা

৮০ ভাগ রোগীর ওষুধ দরকার হয় না -অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ * কার্যকর ওষুধ তৈরিতে ১০ বছর প্রয়োজন -অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

Icon

রাশেদ রাব্বি

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ওষুধ নেই: সহায়ক ওষুধেই চলছে করোনা চিকিৎসা

নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি। এমনকি নেই এর কোনো প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন। তাহলে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কি ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে- জনমনে এ নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় বাজারে প্রচলিত কিছু ওষুধ কাজ করায় তা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। সেগুলো করোনা প্রতিরোধে নয়, মূলত আক্রান্তদের সুস্থতায় সহায়ক বলে মনে করছেন একদল গবেষক। কিছু ওষুধ ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাময়িক অনুমোদনও পেয়েছে। চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধের উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এসব ওষুধের বেশ কয়েকটি বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওষুধগুলোর মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। ওষুধটি মূলত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ওষুধটি লুপাস নামের রোগের বিরুদ্ধেও ব্যবহার হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গাইডলাইনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করতে বলেছে। তবে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধের ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, এই রোগের কোনো ওষুধ নেই। রোগীর উপসর্গ দেখে এর চিকিৎসা করা হয়। সারাবিশ্বে এভাবেই চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০ ভাগ মানুষের কোনো ওষুধের দরকার পড়ে না। কিছু মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে তাদের সেই চিকিৎসা দিতে হয়। যাদের নিউমুনিয়া হয় তাদের নিউমুনিয়ার চিকিৎসা দিতে হবে। খুব কমসংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। সেক্ষেত্রে এ ধরনের কিছু ওষুধ পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (ইউএসএফডিএ) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার অনুমোদন করেছে। চীন ও ফ্রান্সের ওষুধ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধটি ব্যবহার করেছে। পার্শ্ববর্তী ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি যারা ক্রমাগত করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন বা সেবা দিচ্ছেন, তাদের প্রতিরোধক হিসেবে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এর সঙ্গে অনেকে আবার অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশে ইনসেপ্টা ও ডেল্টা নামের দুটি ওষুধ কোম্পানি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করে থাকে। ইনসেপ্টা রিকোনিল নামে এবং ডেল্টা রিউমাফ্লেক্স নামে ওষুধটি বাজারজাত করে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একে লুৎফুল কবীর যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক নেই। এখানে দুটি ওষুধ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি ক্লোরকুইন অন্যটি অ্যাজিথ্রোমাইসিন। এর মধ্যে একটি জীবাণুনাশক অন্যটি অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যাজিথ্রোমাইসিন এখন যে কোনো ফ্লুর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদিও এর প্রত্যেকটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।

এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আইভারমেকটিনের সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়েও আশার আলো দেখছেন গবেষকরা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইন্সটিটিউটের একদল গবেষক তাদের গবেষণায় দেখেছেন, আইভারমেকটিনের একটি মাত্র ডোজ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাসের আরএনএকে বাধা প্রদান করে। ফলে মানবদেহে ভাইরাসের বৃদ্ধি ঘটে না। তবে মোনাস ইউনিভার্সিটি করোনাভাইরাস চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের অধিকতর গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আইভারমেকটিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনেস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ) অনুমোদিত একটি অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ। এটা অনেক দিন থেকে ফাইলেরিয়া ও স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে বেক্সিকো ও ডেল্টা ফার্মা এই ওষুধটি উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়েছে। বর্তমানে শুধু ডেলটা ফার্মা ওষুধটি ‘স্ক্যাবো ৬’ নামে উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আইভারমেকটিনের ব্যবহার অনুমোদিত নয়। এসব ওষুধ ছাড়াও এজিথ্রোমাইসিন নামক একটি অ্যান্টিবায়োটিক করোনা চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন এই অ্যান্টিবায়োটিকের উৎপাদন বাড়াতে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

সম্প্রতি অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির দিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হয়েছে। ট্রায়ালের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, রেমডেসিভির ওষুধে মারাত্মকভাবে অসুস্থ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়। এতে ৬৮ শতাংশ রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়েছে, ১৫ শতাংশে অবস্থা খারাপ হয়েছে। আর ১৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। অ্যান্টিভাইরাল ওই ওষুধ ‘রেমডেসিভিরে’ দুই-তৃতীয়াংশ রোগীই সুস্থ হয়েছেন। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও জানানো হয় এই প্রতিবেদনে।

সামগ্রিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী কোনো ওষুধ নেই। এই ভাইরাসের বা রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ বছর প্রয়োজন। যেহেতু এটি নতুন রোগ তাই এটা বলা যাবে না যে এটাই এ রোগের ওষুধ। যেহেতু এ রোগের ওষুধ নেই তাই অন্য রোগের ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। একে বলে অফ লেভেল। তাছাড়া ওষুধগুলো ব্যবহারে যেসব যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে সেগুলো খবই দুর্বল। যেহেতু কোনো ওষুধ নেই আর রোগটির বিশ্বব্যাপী ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্য রোগের ওষুধ এখানে ব্যবহার হচ্ছে।

করোনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম