Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কোভিড-১৯ এ মৃত্যু ১৪৫ জন, বিশ্লেষণ হয়নি তথ্য-উপাত্ত

মৃতদের বেশির ভাগেরই উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থাকে -অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ * রোগ নির্ণয়ে ব্যস্ত থাকায় গবেষণায় মনোযোগ দিতে পারেনি আইইডিসিআর -মহাপরিচালক

Icon

রাশেদ রাব্বি

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোভিড-১৯ এ মৃত্যু ১৪৫ জন, বিশ্লেষণ হয়নি তথ্য-উপাত্ত

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে অদ্যাবধি কোনো বিশ্লেষণ হয়নি।

অর্থাৎ এসব মৃত্যুর কারণ কি, শুধুই কি করোনাভাইরাস, নাকি শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়া অথবা অন্য কোনো জটিলতায় মারা গেলেন- এর কোনো ব্যাখ্যা এখনও উপস্থাপিত হয়নি। ফলে চিকিৎসকসহ সবার কাছে এসব মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অজানাই থেকে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কাজটি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর)। তবে রোগ নির্ণয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রতিষ্ঠানটি এতদিন গবেষণায় মনোযোগ দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ কি- জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের একটি বড় অংশের নিউমোনিয়া ও অন্যান্য জটিলতা ছিল। এছাড়া বয়সজনিত একটি সমস্যা তো রয়েছে।

তবে যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা এবং শ্বাসতন্ত্রেও জটিল সমস্যা থাকে, তাদের এ রোগে মৃত্যুর হার বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সব বয়সীদের মধ্যে মৃত্যু দেখা যাচ্ছে। তাই মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩৬ জনের মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। এর মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। দেশের অন্যান্য হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের এবং বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। এছাড়া সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৪ জন, রিজেন্ট হাসপাতাল-উত্তরায় ২ জন এবং রিজেন্ট হাসপাতাল মিরপুরে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, নতুন রোগ ও রোগে মৃত্যু ইত্যাদি তথ্য বিশ্লেষণ আইইডিসিআরের কাজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এতদিন রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তারা এদিকে মনোযোগ দিতে পারেনি। এখন তাদের রোগ নির্ণয় থেকে সরিয়ে গবেষণাধর্মী কাজে মনোযোগ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি তারা সেই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসব রোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কি- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো রোগ নিয়ে গবেষণা করা, সার্ভিলেন্স করা আইইডিসিআরের কাজ।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে কোনো তথ্য জানায়নি। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বিশ্লেষণধর্মী তথ্য চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রাখে।

আইইডিসিআর কর্তৃক প্রণীত ‘নিশ্চিত নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত, চিকিৎসাপ্রাপ্ত ও মৃত্যুর’ বিস্তারিত বিবরণ থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২২৬ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৫৫ জন।

এছাড়া সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৯ জন, ঢাকা মহানগর হাসপাতালে ৬১ জন, রিজেন্ট হাসপাতাল-উত্তরায় ৪ জন, রিজেন্ট হাসপাতাল-মিরপুরে ১০ জন, সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নারায়ণগঞ্জে ৩০ জন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ২৩৪ জন এবং অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৬৫ জন।

এসব হাসপাতাল থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১৩ জন। তবে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নিবেদিত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রলিভার হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল এবং মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী ভর্তি করা হয়নি। বাকি সব রোগী বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। কিন্তু নির্ধারিত হাসপাতালের সব কটিতে এসব সুবিধা নেই। তাছাড়া যারা বাড়িতে চিকিৎধানী রয়েছেন তাদের হঠাৎ করে জটিল অবস্থার সৃষ্ট্রি হলে চিকিৎসা প্রদান কঠিন হয়ে পড়বে।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এ মুহূর্তে দেশে মোট ১ হাজার ৫৫০টি আইসোলেশন বেড থাকলেও আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৫০টির মতো। যদিও এর সব কটিতে নেই ভেন্টিলেটর সুবিধা।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর স্বল্পতা আছে। ভেন্টিলেশন, আইসিইউর ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩টি হাসপাতালে ৫৫টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও এসব আইসিইউ পরিচালনায় বা রোগীদের পরিচর্যায় নেই প্রশিক্ষিত চিকিৎসক বা নার্স।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা আছে, হাসপাতালগুলোয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া হাসপাতালগুলোকে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার আপডেট তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে রাজধানী ও এর বাইরের বিভিন্ন জেলার ৩৩টি হাসপাতালে আইসিইউ ভেন্টিলেটর রয়েছে ৩০০টি। নতুন করে সরবরাহ করা হচ্ছে আরও ১৩৪টি, মেরামতযোগ্য ৪৩টি।

এছাড়া বিতরণযোগ্য আইসিইউ ভেন্টিলেটর রয়েছে ১৮৯টি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্যকর রয়েছে ৩০টি, সরবরাহ করা হবে আরও ২৫টি।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে বিদ্যমান ৪টি সরবরাহ করা হবে ৫টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে ৬টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আছে ১০টি দেয়া হবে আরও ১২টি, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আছে ৯টি, দেয়া হয়েছে ১৬টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রলিভার ইন্সটিটিউট হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে ৮টি, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে আছে ২০টি, পঙ্গু হাসপাতালে আছে ৩টি, সরবরাহ করা হয়েছে ১২টি। এছাড়া জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে আছে ৩০টি। সেগুলো শুধু হৃদরোগীদের জন্য। বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট হাসপাতালে আছে ১০টি।

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম