Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গণস্বাস্থ্যের কিট অনুমোদন নিয়ে জটিলতা

জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর -ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী * সুনির্দিষ্ট প্রটোকল না মানলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া সম্ভব নয় -মহাপরিচালক ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে তারা যে কিট উদ্ভাবন করেছেন, সেটা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর নেয়নি। তিনি বলেন, সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের কিট গ্রহণ করেনি। আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কি না, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শিকল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদতর বলছে, সুনির্দিষ্ট প্রটোকল না মানলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া সম্ভব নয়।

রোববার বিকালে রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেন। এর আগে শনিবার বিকালে একই জায়গায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমন্ত্রণ জানানোর পরও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত এ কিট গ্রহণের জন্য যায়নি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান। পরদিনই এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে যান। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ঔষধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি।

কর্তৃপক্ষ জমা নেবেন না। আমরা গিয়েছিলাম, তারা জমা নেননি। বললেন যে সিআরও নিয়ে আসেন। তারপর বললেন, এটা আপনারা ভেরিফিকেশন করে আনেন সিআরও থেকে। সিআরও হল চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওখানে পয়সা দিতে হবে। কত খরচ লাগবে, তা ওনারা (সিআরও) বাজেট দেবেন। পরে আইসিডিডিআর,বি থেকে ভেরিফিকেশন করিয়ে আনার কথা বলেন। আইসিডিডিআর,বি লকডাউন থাকায় তারা বিএসএমএমইউ, আইইডিসিআর কিংবা আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি থেকে কার্যকারিতা আছে কি না, পরীক্ষা করে দেখার প্রস্তাব দিলেও তা মানা হয়নি।

তিনি বলেন, জাতির এ দুর্যোগের সময় যুগান্তকারী আবিষ্কার এ কিট কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যেখানে ইরানে এ ধরনের কিট প্রতিদিন ১০ লাখ তৈরি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে তারা কিট জমাই রাখেননি। যে কোনো ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষায় আপত্তি নেই। কিন্তু জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তারা এখন বাজেট ঠিক করবেন, তারপর সিআরওর মাধ্যমে রিপোর্ট নেবেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে, কীভাবে তারা ব্যবসায়িক স্বার্থকে রক্ষা করছেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর অনৈতিক কাজ করছে, দেশের ক্ষতি করছে। তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে রেখে চলেন, তাতে তাদের লেনদেনে সুবিধা হয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান বলেন, প্রথমে আমাদের বলল, অনুমোদন নেই দেখে আমরা আসতে পারব না। আমরা তো আপনাদের হাতে দিতে চাই, যাতে আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমাদের গতকাল বলা হল, তারা আসবেন না। ঠিক আছে, আজ আমরা গেলাম। আজ গণস্বাস্থ্যের ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন গেলেন। তারপরও দেখেন, কেমন আমলাতান্ত্রিকতা। দু’জনকে ঢুকতে দেবে, আরেকজনকে দেবে না। অথচ বাইরের তিনজন লোককে ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন। তাদের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট লোকদের ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের প্রধান, পদমর্যাদায় ওই ডিজি সাহেবের সমতুল্য তিনি। এ জাতীয় লোককে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি যুক্তিতর্কে হেরে যাওয়ার ভয়ে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গতকাল আমরা এখানে কিট হস্তান্তরের একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, এটার অনুমোদনের জন্য। এটা অনুমোদন করার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের। দুর্ভাগ্যবশত ঔষধ প্রশাসন এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট। তার ফলে এই জিনিসগুলোর গুরুত্ব সেভাবে তারা উপলব্ধি করতেই সক্ষম হচ্ছে না। তারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা জনস্বার্থে এটি আবিষ্কার করেছেন। এটি ব্যবহারে যত দেরি হবে, তত জনগণের ক্ষতি বেশি হবে। এ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের গুরুত্ব আমরা ঔষধ প্রশাসনকে বোঝাতে পারছি না। সিআরও নামের এজেন্টকে পরীক্ষার জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। আমরা চাই এটির মূল্য ২৫০-২০০ টাকা নামাতে, আর তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে নানা অজুহাতে ৫০০ টাকা দাম করতে চায়। ঔষধ প্রশাসন থেকে বলা হয়, দাম বাড়লে বাড়বে। এটা কি জনস্বার্থে কথা হল? আমার ধারণা, একটা শ্রেণি সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

তিনি বলেন, গত ১২ এপ্রিল কিটের যথার্থতা প্রমাণের জন্য সরকারের কাছে রক্ত চেয়েছি। কিন্তু পেয়েছি ২২ এপ্রিল, তা-ও আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপের পর।

আমার মতো লোক ২৫ বার ফোন করেছি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আপনাদের সব ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে দেব, তবে ঘুষ দেব না। গণস্বাস্থ্যের ৪৮ বছরে কাউকে ঘুষ দিইনি, এতে প্রোডাক্ট বাজারে আসুক বা না-আসুক, আমরা ঘুষ দিইনি, দেব না। এই দুর্নীতির অংশীদার হইনি, হব না। আমরা আন্দোলন করে যাব।

এ প্রসঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত এ ধরনের পণ্য চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একটি ‘পাথওয়ে’র মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এভাবে কিট এনে অনুমোদন করা যায় না। তিনি বলেন, এই কিটটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, সেটি তৃতীয় পক্ষের কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইসিডিডিআর,বি এ ধরনের কাজ করে থাকে। তৃতীয় পক্ষের মতামতের পর সেটি পাঠানো হবে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি)। সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে আসার পর ঔষধ প্রশাসন অদিধফতরের একটি ১২ সদস্যের রিভিউ কমিটি আছে, সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন প্রদান করবে। এই সুনির্দিষ্ট প্রটোকল না মানলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া সম্ভব নয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম