সিপিডির বাজেট আলোচনা
স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানসহ ৪ খাতে গুরুত্বারোপ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনায় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এমন অবস্থার মধ্যে ঘোষণা করা হচ্ছে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট। যেহেতু এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে একেবারেই আলাদা, তাই বাজেটে ৪টি খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা। এছাড়া অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমাতে হবে।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ভার্চুয়াল বাজেট ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। সংস্থাটি বলছে, রাজস্ব আয় বাড়তে করের আওতা বাড়াতে হবে। এছাড়া করফাঁকি রোধ এবং বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন। তবে মধ্যবিত্তদের সহায়তায় করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা এবং ন্যূনতম কর হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সিপিডি বলছে, পুরো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ আছে। ফলে কর আহরণ না হওয়ায় কমছে সরকারের আয়। এরই মধ্যে আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। আয় না বাড়লে ব্যয় বাড়ানো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। তাই সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় কমাতে হবে। এর মধ্যে গাড়ি, ইউটিলিটি সেবা, অফিসের কাগজপত্র এবং আপ্যায়ন খাতে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমানো উচিত। পাশাপাশি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এমন উৎপাদনশীল ব্যয়কে আগামী বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। দরিদ্র মানুষের হাতে টাকা দিতে হবে, প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। এক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়, এমন খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এবারের বাজেটে মোট ৪টি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবার আগে স্বাস্থ্য। বর্তমানে এ খাতে ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় মানুষ নিজের পকেট থেকে ৭০ শতাংশ ব্যয় করে। দক্ষিণ এশিয়ায় যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এ খাতে জিডিপির ১ দশমিক ১২ শতাংশ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছিল। সিপিডি মনে করে, এ বছর এ খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। করোনার পর অনেক মানুষ চাকরি হারাবে। তাই এদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যেসব শিল্প খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেখানে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এসব খাতে প্রণোদনা দিতে হবে- প্রকৃতই যারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, কৃষির বিকল্প নেই। কারণ জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ শতাংশ। কিন্তু এ খাতে ৪২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান। ফলে এখানে দ্রুতই কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষি উৎপাদন অপরিহার্য। সবশেষে নিু আয়ের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে বণ্টন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে করের আওতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে করফাঁকি রোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ায় করের হার আর বাড়ানো সম্ভব নয়। এছাড়াও গত বছরে দেশ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই অর্থ পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমানে আমরা ভিন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এর আগে এ রকম অবস্থা আমরা মোকাবেলা করিনি। ফলে এ বছর বেশ কিছু খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, করোনায় আমরা চতুর্থ ধাপে রয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে বাংলাদেশ এখনও লকডাউন খোলার জন্য প্রস্তুত নয়। করোনা উদ্যোক্তারা স্বাস্থ্য মেনে উৎপাদন চালু রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। তবে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশি অর্থ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যে ডি ২০ দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য একটি তহবিল গঠন করেছে। এই তহবিল থেকে সহায়তা পেতে বাংলাদেশকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার মতে, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত বাস্তবমুখী। এছাড়া স্থানীয় বাজারের চাহিদা ঠিক রাখা এবং নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতেও জোর দিতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে পরোক্ষ করের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর বেশি চাপ পড়ে। তার মতে, প্রবাসে বেকারত্ব বাড়ছে। ভ্রমণ চালু হওয়ার পর বিশাল একটি শ্রেণির মানুষ বিদেশ থেকে ফেরত আসবে। তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে ভাবতে হবে। তবে এসব প্রবাসীকে ওই দেশ থেকে যাতে না পাঠানো হয়, এজন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে চেষ্টা করা উচিত। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা ভালো। এখনও রিজার্ভের পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে আমাদের আমদানি কমছে। ফলে এটি মোটামুটি স্বস্তির কথা।
ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কৃষিতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার এমন কিছু ব্যয় করে, যা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। এ বছর এ ব্যয়গুলো কমিয়ে আনতে হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন কর্পোরেশনে সম্পদ কেনার জন্য যে টাকা দেয়া হয়, এ বছর এটি বন্ধ করা উচিত।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশ কখনই এ ধরনের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়েনি। সেজন্য এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। তাই এবারের বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের চাপ, সমস্যা, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেখানে সাপ্লাই চেইন, চাহিদার ওপর চাপ পড়েছে। যার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দেশের ভেতরেও অর্থনীতির অনেক খাত বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ রয়েছে। যার কারণে অর্থনীতির ওপর আরেকটা চাপ পড়েছে।
