করোনা ঊর্ধ্বমুখী
সংক্রমণ রোধে ‘হার্ড লাইনের’ তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
মাহমুদুল হাসান নয়ন
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহকারীদের প্রায় ১৫ শতাংশই এখন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। সরকার ঘোষিত ‘লকডাউন’ ঢিলেঢালা হওয়ায় করোনা সংক্রমণ বিপজ্জনক দিকে মোড় নিয়েছে। ঘরেবাইরে কোথাও মানুষের চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। সড়কে, হাটবাজারে গেলে বোঝার উপায় নেই, বাংলাদেশে এত ভয়ংকর মহামারী চলছে। এমন অবস্থায় সংক্রমণের লাগাম টানতে লকডাউন শতভাগ নিশ্চিতে ‘হার্ড লাইনে’ যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর সুফল পেতে হলে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় প্রয়োজনে কারফিউ দিতে হবে। ঈদের আগে-পরের কয়েকদিনকে মোক্ষম সময় হিসেবে নেয়া যেতে পারে। এই সময়টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। এটি করতে পারলে যেমন সুফল পাওয়া যাবে, ব্যর্থ হলে মুখোমুখি হতে হবে ভয়াবহ বিপদের।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সর্বত্রই ঢিলেঢালা ভাব। অসংখ্য মানুষ ঘোরাফেরা করছে এখানে-সেখানে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিল যানজট। শপিং মল, দোকানপাটেও ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বাড্ডায় ফুটপাতে দেখা গেল মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। মার্কেটগুলোর প্রবেশপথে স্যানিটাইজার দিয়ে স্প্রে করা পর্যন্ত শেষ। ভেতরে সব একাকার অবস্থা।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত ও ২১ জনের মৃত্যুও তথ্য দেয়া হয়। ব্রিফিংয়ে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানাও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান যুগান্তরকে বলেন, সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেও সংক্রমিত অনেকের মধ্যেই আবার উপসর্গ নেই। তারাও দেদার ছড়াচ্ছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মানতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে নিু আয়ের মানুষের জন্য এটা কঠিন হবে। কিন্তু বিকল্পও নেই।
বিএসএমএমইউর নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যে অবস্থা চলছে এটাকে লকডাউন বলা যায় না। বাস ছাড়া রাস্তায় সবই চলছে। শপিং মল, দোকানপাট খোলা থাকলে সংক্রমণ বাড়বেই। সংক্রমণ প্রতিরোধে আরও কঠিন হতে হবে। আসন্ন ঈদ সামনে রেখে কেউ যাতে গ্রামে যেতে না পারে, অবশ্যই সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের আগে-পরের ১৫টা দিন ভাইরাস প্রতিরোধের মোক্ষম সময়। এ সময় শতভাগ লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে ‘হার্ড লাইনে’ যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখন সংক্রমণের যে চিত্র দেখছি, সেটি কিন্তু কিছুদিন ধরে লকডাউন শিথিলের ফলেই হয়েছে। আবার মার্কেট, দোকানপাট যেভাবে খোলা হয়েছে এর ফলাফল কিন্তু এক দেড় সপ্তাহ পর আমরা পাব। এ অবস্থায় ‘সাধারণ ছুটি’ শব্দের পরিবর্তে, ‘লকডাউন’ শব্দটি ব্যবহারের সময় এসেছে। এখন শতভাগ লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ দিতে হবে। যথাযথ কারণ ছাড়া ডকুমেন্ট ব্যতীত যাতে কেউ বের হতে না পারে। করোনায় আক্রান্তের হার বিবেচনায় ‘রেড জোন’ নির্ধারণ করে সেসব এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। তা না হলে আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে।
