বিশ্বে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৮২ হাজার
এবার আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় ভয়
ভারতে লাখ ছাড়াল করোনা আক্রান্ত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় এবার বড় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে করোনাভাইরাস। ব্রাজিল, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিসরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও প্রাণহানি। ব্রাজিলে স্বাস্থ্যব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এশিয়ায় ভারতে হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী। সোমবার দেশটিতে ৫ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন, এতে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে ইউরোপে করোনার তেজ কমে এসেছে। ১০ সপ্তাহের লকডাউন শেষে ইতালিতে দোকানপাট, সেলুন ও রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। দুই মাসেরও বেশি সময় পর চার্চ খুলে দিয়েছে ভ্যাটিকান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাকে হারিয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরেছেন ৫ হাজার পুলিশ সদস্য। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ২ জন। মারা গেছেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৩ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৪৩ হাজার ৯৬০ জনের।
সুস্থ হয়েছেন ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ২৫৭ জন, মারা গেছেন ৩ হাজার ৬১৮, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৪ হাজার ৩৬০।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমেছে, মারা গেছেন ৮৬৫ জন, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১ হাজার ২১৮ জন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৯১ হাজার ৩০৬ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ১২৩ জন।
আক্রান্তের সংখ্যায় স্পেনকেও ছাড়িয়ে গেছে রাশিয়া। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭২২ জনের। অন্যদিকে স্পেনে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৭৮ হাজার ১১৮ জন, মারা গেছেন ২৭ হাজার ৭০৯ জন।
যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ জন, মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৭৯৬ জন। ইতালিতে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৬ জন, মারা গেছেন ৩২ হাজার ৭ জন।
করোনা মহামারী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ব্রাজিলে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বড় শহর সাও পাওলো। খোদ এ শহরের মেয়র বলেছেন, শহরবাসীকে সামাজিক আইসোলেশন নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, নয়তো খুব শিগগিরই স্বাস্থ্যসেবার পতন হবে।
মেয়র ব্রুনো কোভাস আরও বলেন, আমাদের আইসিইউ বেড ৯০ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে। আর কয়েক সপ্তাহ পর কোনো বেড খালি পাওয়া যাবে না, শহরের চিকিৎসাব্যবস্থার রাস্তাগুলোও বন্ধ হয়ে আসছে।
বাসিন্দাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা যথেষ্ট পরিমাণ টেস্ট করাতে চাই না কি আমরা সতর্ক থাকব এবং দৃঢ়ভাবে সামাজিক আইসোলেশনের নির্দেশনা মেনে চলব, যেন স্বাস্থ্যসেবার পতন না হয়।
ব্রাজিলে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫২ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে ব্রাজিল এখন বিশ্বের চার নম্বর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও স্পেনের পরই এখন দেশটির অবস্থান।
দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ২০১ জনের। ব্রাজিলে করোনা মহামারীর কেন্দ্র বলা হচ্ছে সাও পাওলোকে। দেশে মোট আক্রান্তের ১৬ শতাংশই এই শহরের। এদিকে পেরুতেও সংক্রমণ বেড়েই চলছে।
দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২৫ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৯২ হাজার ২৭৩ জন, মারা গেছেন ২ হাজার ৬৪৮ জন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আক্রান্তের রেকর্ড : দক্ষিণ আফ্রিকায় একদিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৬০ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মার্চে মহামারী শুরুর পর দেশটিতে এটাই সর্বোচ্চ দৈনিক আক্রান্ত।
এ নিয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৫১৫ জন। প্রাণহানি হয়েছে ২৬৪ জনের। আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১২ হাজার ২২৯ জন আক্রান্ত ও ৬৩০ জনের মৃত্যু নিয়ে তাদের পরে আছে মিসর।
ভারতে আক্রান্ত ১ লাখ ছাড়াল : সোমবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে রেকর্ড ৫ হাজার ২৪২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ভারতে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৪০ জন।
অন্যদিকে একই সময়ে মারা গেছেন ১৫৭ জন। মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ১৫৫ জন। ভারতে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মহারাষ্ট্র, সেখানে ৩৩ হাজার ৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু ১ হাজার ১৯৮ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় এরপর রয়েছে গুজরাট, তামিলনাড়ু ও দিল্লি।
করোনাকে হারালেন নিউইয়র্কের ৫ হাজার পুলিশ সদস্য : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ৫ হাজার ৪৫৭ জন সদস্য করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে পুরোদমে কাজে ফিরেছেন। নিউইয়র্ক পুলিশের ৫ হাজার ৬৪৮ সদস্যের করোনা পজিটিভ এসেছিল।
এখনও ১৪৯ জন (১১১ পোশাকধারী ও ৩৮ বেসামরিক) সদস্য অসুস্থ বলে জানিয়েছে পুলিশ বিভাগ। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি নিউইয়র্ক পুলিশও সম্মুখযুদ্ধ করে যাচ্ছে।
রেস্তোরাঁ, বার, সুপার মার্কেট, সেলুনসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে গিয়ে জনগণকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।
দোকান-বার খুলে দিয়েছে ইতালি : অবশেষে ইতালিতে দোকানপাট, সেলুন এবং রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। ১০ সপ্তাহের লকডাউন শেষে সোমবার থেকে দেশটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরেছে। এখন লোকজন চাইলেই আবারও রেস্টুরেন্টে বসে কফিতে চুমুক দিতে পারবেন।
বিভিন্ন চার্চেও লোকজনের প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়েছে। রোমের সেন্ট্রাল পিয়াজা ডেল পোপোলোতে অবস্থিত ক্যাফে ক্যানোভার কর্মচারী ভ্যালেন্তিনো ক্যাসানোভা বলেন, আমি প্রায় আড়াই মাস ধরে কাজ করতে পারছি না। আজকের দিনটা খুব সুন্দর, খুবই আনন্দের।
দু’মাস পর চার্চ খুলল ভ্যাটিকানে : ভ্যাটিকান সিটিতে দুই মাসের বেশি সময় পর চার্চ খুলে দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে দেশটিতে দর্শনার্থীদের জন্য সেইন্ট পিটার্স বেসিলিকা চার্চ আবারও খুলে দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই চার্চটি বন্ধ ছিল।
সোমবার ওই চার্চের সামনে দর্শনার্থীদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে চার্চে প্রবেশের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে। একজন থেকে অপরজনকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হচ্ছে।
তানজানিয়ায় লকডাউন প্রত্যাহার : পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া লকডাউন প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়, খেলাধুলা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো ফের চালু করতে যাচ্ছে। রোববার দেশটির প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলি চার্চে দেয়া এক বক্তৃতায় তার এ পরিকল্পনার কথা জানান।
তানজানিয়ার সরকার স্কুল, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং বড় আকারে জনসমাবেশ বন্ধ করলেও নিয়মিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ধর্মীয় সেবা চালিয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশ রুয়ান্ডা এবং উগান্ডার মতো তারা পুরোপুরি লকডাউন আরোপ করেনি।
শীতে ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : আসছে শীতে ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ জন্য ইউরোপের দেশগুলোকে প্রস্তুত থাকতেও বলেছে সংস্থাটি। বর্তমানে স্পেন ও ইতালিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে।
এ মহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের করোনামুক্ত ঘোষণা দিয়েছে স্লোভেনিয়া। ডেনমার্কসহ অনেক দেশেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এখন প্রতিদিনের পরিসংখ্যানে হ্রাসের খবর উদ্যাপনের সময় নয়, আমাদের অবশ্যই করোনার দ্বিতীয় ঝড় মোকাবেলায় শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিচালক ড. হান্স ক্লুজে জানান, করোনাভাইরাস অন্যান্য মৌসুমি ফ্লু’র মতো হয়ে যায় কি না, তা নিয়ে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা এখনও করোনামুক্ত হইনি।
এখন উদ্যাপনেরও সময় নয়। এখন সময় এসেছে হাসপাতালের বিছানার সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জোরদার করার। যাতে দেশগুলো আরও বেশি রোগীকে সেবা দিতে পারে। স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স করোনার থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
এসব দেশে বর্তমানে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা কমে এসেছে। ড. ক্লুজ বলেন, দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে, তার অর্থ এই নয় যে, মহামারীটি শেষ হয়ে আসছে।
দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, দেশগুলোর উচিত এই সময় সংক্রমণের প্রথম তরঙ্গ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। হাসপাতাল, প্রাথমিক যত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ও জাপান প্রথমদিকে বুঝতে পেরেছিল যে, এটি উদ্যাপনের সময় নয়, এটি প্রস্তুতির সময়। তাই তারা অনেকটা ভালো আছে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাক্কা সামাল দেয়ার জন্য গোটা বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
অন্তত আরও দু’বার এই ভাইরাস আসবে। তা মোকাবেলা করতে হবে বিশ্ববাসীকে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যই সত্য, স্বাস্থ্যই অর্থনীতির চালিকাশক্তি। স্বাস্থ্য ছাড়া অর্থনীতি অচল। তাই ভবিষ্যতে পুনরায় করোনার ধাক্কা সামলানোর কৌশল অর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলোয় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি। যেখানে সারা বিশ্বেই মৃত্যু হয়েছে তিন লাখের কিছু বেশি মানুুষের।
অর্থাৎ বিশ্বের অর্ধেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোয়, বিশেষ করে স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, বেলজিয়াম ও জার্মানি করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
