Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট চূড়ান্ত

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট চূড়ান্ত

চলমান করোনাভাইরাসে দেশের আর্থিক মন্দা কতটা প্রকট হয়েছে, তা প্রকাশ পেয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। বিবিএসের প্রাথমিক হিসেবে চলতি অর্থবছরে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। যা ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী মন্দার পর থেকে সর্বনিম্ন। এ মুহূর্তে কৃষি, শিল্প, পরিষেবা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির সবসূচকই নিম্নমুখী। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার বেশি মাত্রায় নির্ভর হচ্ছে ঋণের ওপর।

এমন প্রতিকূলতার মধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। যেখানে ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। যা আগের যে কোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট। পাশাপাশি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মন্দা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্ন আয়ের মানুষের পুনর্বাসন। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এটি উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আসন্ন বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর মোট আয়ের লক্ষ্যেমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আগামী অর্থবছর বাজেটে ঘাটতি ঠিক রাখাই হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি হলে সমস্যা নেই। প্রতি বছর প্রবৃদ্ধির ৫ শতাংশ ধরেই ঘাটতি বাজেট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বছর শেষে ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচেই থাকে। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হবে তার সুফল যেন সাধারণ মানুষ পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে স্থবির হয়ে আছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং আমদানি-রফতানি খাত। ফলে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ নিয়ে সরকার অনেকটা উদ্বিগ্ন। উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেও। অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, বিদ্যমান করোনাভাইরাসের প্রকোপ দীর্ঘ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও দীর্ঘ হবে। তবে এমন হিসাব ধরে নিয়েই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী বছর কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান পরিশোধযোগ্য নয় বিধায় একে সরকারের আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির এক ধরনের উদ্যোগ থাকছে বাজেটে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কৃষি খাতকে। ফলে আগামীতে বাড়বে কৃষি খাতের ভর্তুকির পরিমাণও। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে যেন কৃষি খাতে গুরুত্ব দেয়া হয়। আগামী বছর প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা কৃষি ভর্তুকি রাখা ধরা হয়েছে। আর অন্যান্য খাতে ভর্তুকি মিলে থাকছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে নতুন অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় সংকোচনের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা চলছে। এর ধারাবাহিকতায় সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিতকরণ, অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভা সেমিনার হ্রাস, মুদ্রন কাজ কমিয়ে আনার নির্দেশ সব মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এজন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হচ্ছে। এরপরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে যাবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ শোধে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগসহ মূলধনী ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা এবং খাদ্য হিসেবে ব্যয় হবে ৫৬৭ কোটি টাকা।

বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে উন্নয়ন খাতকে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুসহ কয়েকটি বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অনেক উন্নয়ন কাজের গতি থমকে দাঁড়িয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন কাজে বরাদ্দের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। সব মিলে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর এডিবি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ মনে করছে আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের সুফল বয়ে আনতে পারে। কমতে পারে নিত্যপণ্যের দামও। এজন্য আগামী বছরে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে অর্থমন্ত্রী নতুন বছরে প্রবৃদ্ধিতে আশার আলো দেখানোর চেষ্টা করছেন। ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরেই আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণ বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা হয় ঋণের মাধ্যমে। আগামী বছর ঘাটতি বাজেট পূরণে অধিক মাত্রায় ঋণ নির্ভর হচ্ছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এরমধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার। তবে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

অভ্যন্তরীণ ছাড়াও আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

বাজেট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম