Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যাংক ঋণ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক ঋণ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
 

যা চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে এবার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণের এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

’ কারণ দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে ব্যাংকিং খাত আগে থেকেই রুগ্ন। এরপর উচ্চ ঋণখেলাপির কারণে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে খাতটি। এর মধ্যে এলো মহামারী করোনাভাইরাসের আঘাত। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম আমদানি-রফতানি প্রায় বন্ধ, রেমিটেন্স আহরণে চরম অনিশ্চয়তাসহ ব্যাংকের সব সূচকের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে করোনায় ঘোষিত প্রণোদনার বেশির ভাগ অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে যাবে।

এমন নাজুক পরিস্থিতিতে আবার সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না। এতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান উভয় বাধাগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকারের উচ্চ ব্যাংক ঋণ বেসরকারি বিনিয়োগকে বাধা সৃষ্টি করবে। এটা বড়জোর ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারত। কিন্তু প্রায় ৮৫ হাজার লক্ষ্য মোটেও কাম্য নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা মোটেও ঠিক হবে না। কারণ প্রণোদনার বেশির ভাগই ব্যাংকনির্ভর। সে টাকা দিতেই ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর আবার সরকারি ঋণের লক্ষ্য প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। বড় অঙ্কের এ ঋণ নিতে গেলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান কিছুই হবে না।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তি খাত আর সরকারি খাতে ঋণের সুদ প্রায় কাছাকাছি। এতে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে আগ্রহ হারাবে।

তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের বিশাল লক্ষ্য। উভয় কারণে শুধু বিনিয়োগ কর্মসংস্থানই কমবে না, প্রণোদনার টাকাও যথাসময়ে দিতে গড়িমসি করবে ব্যাংকগুলো। কারণ ব্যাংকিং খাতে বর্তমান নীতি-সহায়তা কোনোভাবেই বিনিয়োগবান্ধব নয় বলে মনে করেন তিনি।

ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন- অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকারের প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে গেলে ভীষণ চাপে পড়বে ব্যাংকিং খাত। চলতি অর্থবছরেও প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে। ইতোমধ্যে ৮৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যয়ের হিসাব অনেক বড় হলেও বাজেটে আয়ের উৎস সংকুচিত। এজন্য বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর চাপ আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছে নতুন অর্থবছরের জন্য। ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু করোনার কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস নামায় চলতি অর্থবছরের গত ১৩ মে পর্যন্ত সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা ঋণ করেছে। সংশোধিত বাজেটে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের নতুন বাজেট এবং সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।

ব্যাংক ঋণ.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম