Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট: অসঙ্গতিপূর্ণ যোগ্যতায় ৬৩ জনের নিয়োগ

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট: অসঙ্গতিপূর্ণ যোগ্যতায় ৬৩ জনের নিয়োগ

প্রতীকী ছবি

কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ১৫৭ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রাষ্ট্রপতির বিশেষ প্রমার্জনায় তাদের নিয়োগের সুপারিশ থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে মাত্র ৯৫ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক রয়েছে। বাকি ৬৩ জনের নানা অসঙ্গতি রয়েছে। এরই মধ্যে আবারও সারা দেশ থেকে নতুন তালিকা চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১২০০ টেকনোলজিস্ট নিয়োগের কথা থাকলেও অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার (যাকে অবসরোত্তর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত করা হয়) নেতৃত্বে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ১৮৩ জন টেকনোলজিস্টের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে। এসব অনিয়ম বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তা তদন্ত না করে রোববার ও সোমবার ১৮৩ জনকে সশরীরে হাজির হয়ে কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হয়। তাদের মধ্যে ১৫৭ জন হাজির হয়ে কাগজপত্র জমা দেন। এসব কাগজপত্র বাছাই করে দেখা গেছে, সরকারি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাস করা ৯৫ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৫০ জন, বিএসসি-ইন-টেকনোলজি পাস করা ৯ জন, সনদবিহীন প্রার্থী দুইজন এবং ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি পাস করা একজন প্রার্থী রয়েছেন।

কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা ৫০ জনের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। এসব অসঙ্গতি সুরাহা না করে তাদের চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বুধবার নতুন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সব পরিচালক/লাইন ডিরেক্টর, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ, বিভাগীয় পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের কাছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নিয়োজিত টেকনোলজিস্টদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে; যা আগামী সোমবার বিকাল ৫টার মধ্যে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বিধিবিধান উপেক্ষা করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োজিতদের স্বাস্থ্য অধিদফতর তালিকাভুক্ত করে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে অধিদফতরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

রোববার ও সোমবার অধিদফতরের পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষের সামনে অপেক্ষমাণ কয়েকজন টেকনোলজিস্ট জানান, তারা জানতে পেরেছেন অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বেশ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে প্রবেশ করেছেন। ১৫৭ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করার সময়ও তিনি এ কক্ষে অবস্থান করেন। অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক এনটিপি ও লাইন ডিরেক্টর এমবিডিসি অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, টেকনোলজিস্ট নিয়োগের তালিকা তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে প্রমার্জনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এমনকি তাকে কেউ জানাননি। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি গণ্যমাধ্যমে এলে পরিচালকের (প্রশাসন) মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হন। পরে জানতে পারেন এর সঙ্গে অধিদফতরের কর্মকর্তা নয়, উচ্চপদস্থরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার স্বীকৃত ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিন বছর ডিপ্লোমা পাস চাওয়া হয়। কিন্তু অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) কর্তৃক ২ জুন ১৮৩ জনের নামের প্রস্তুতকৃত তালিকাটি দৃশ্যমান অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিধিবহির্ভূত। এছাড়া ১৬ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫৭ জন টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে পাঠানো তালিকাটি ত্রুটিপূর্ণ ও বিতর্কিত। দৃশমান অসঙ্গতিপূর্ণ- ১. পরিচালক (প্রশাসন) কার/কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৮৩ জনের নামের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন তার পাঠানো চিঠিতে সে কর্তৃপক্ষ/কোনো নির্দেশনার স্মারক উল্লেখ নেই। ২. তালিকাটিতে মহাপরিচালকের অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ নেই। ৩. চিঠিতে ১৮৩ জনকে সরাসরি স্থায়ী নিয়োগের কোনো প্রস্তাব নেই। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার জাকির হোসেন, যুগ্ম সচিব সাহিনারা খাতুন, অতিরিক্ত সচিব শেখ মুজিবর রহমান ৩ জুন সরাসরি স্থায়ী নিয়োগ দিতে রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা চেয়ে সারসংক্ষেপ পাঠান। ৪. চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান/এনজিওর নাম রয়েছে। যেমন- বিএসএমএমইউ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সরকারিভাবে পদায়নের ক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। অথচ এসব তালিকাও অনুমোদিত হয়েছে। ৫. দেশের হাসপাতাল/চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ও পরিচালকের (মেডিকেল এডুকেশন) তত্ত্বাবধানে। অথচ তালিকা হয়েছে পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং এনটিপি থেকে। ৬. করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রধান হাসপাতাল বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যারা কাজ করেছেন তাদের নাম নেই তালিকায়। এছাড়া কুর্মিটোলা হাসপাতালে ৪-৫ বছর ধরে দৈনিকভিত্তিতে প্যাথলজি বিভাগে কর্মরতদের নাম তালিকায় নেই। এমনকি করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কেন্দ্রস্থল আইইডিসিআরে কর্মরতদেরও নাম নেই সেখানে।

করোনা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম