Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এফবিসিসিআইর বাজেট প্রতিক্রিয়া: প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের গড়িমসি

বাস্তবায়নে অনিচ্ছুক এমন ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেয়ার প্রস্তাব * ভ্যাট জটিলতা সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন -শেখ ফাহিম

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এফবিসিসিআইর বাজেট প্রতিক্রিয়া: প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের গড়িমসি

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানোর’ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে এফবিসিসিআই বলছে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছু ব্যাংক অনীহা দেখাচ্ছে। এ ধরনের ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নিতে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেবে সংগঠনটি। একইসঙ্গে মাঠপর্যায়ের ভ্যাট কর্মকর্তাদের তল্লাশি ক্ষমতা প্রদান, ভ্যাট আপিলের জমা বৃদ্ধি, টার্নওভারের ওপর ন্যূনতম কর আরোপ, কোম্পানির প্রচার ব্যয়ের সীমা নির্ধারণকে অযৌক্তিক মনে করছে এফবিসিসিআই। পাশাপাশি ভ্যাট জটিলতা সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

শনিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইর বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এ সময় এফবিসিসিআইর পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে শেখ ফাহিম বলেন, কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্টে প্রথম ধাপ ছিল প্রণোদনা এবং ভর্তুকি সুদের ঋণ সুবিধা। কিছু ঋণ এবং অনুদান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১৯ প্যাকেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রণোদনা বিষয়ে একটি শ্রেণি বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বাধা সৃষ্টিকারক ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান নিশ্চয়ই আছে। যেসব ব্যাংক মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদের সরকারি আমানত বৃদ্ধি করা ও আগামী বাজেটে কর্পোরেট করে ছাড় এবং যে সব ব্যাংক মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না তাদের সরকারি আমানত তুলে নেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

বাজেটে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিস্তারিত তুলে ধরে শেখ ফাহিম বলেন, উপকরণ কর রেয়াত প্রাপ্তিতে নেতিবাচক তালিকা করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছায় ঢুকে কাগজ রেকর্ড জব্দের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন লাগত। ভ্যাট আপিল করলে ১০ শতাংশের জায়গায় ২০ শতাংশ জমার বিধান করা হয়েছে। টেলিকমের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ দিয়ে আরবিট্রেশন করা এবং তার ৩০ শতাংশ কর্মকর্তারা প্রণোদনা পাবেন- এ ধরনের আরও ধারা আছে। এগুলো প্রক্রিয়াকে জটিল করবে। স্বচ্ছতা ব্যাহত করবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে। শুধু তাই নয়, এটি সমন্বিত কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর নীতিরও পরিপন্থী।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যেসব পরামর্শক ও সরকারি কর্মকর্তা প্রকল্পের অর্থ পাওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেননি অথবা করেননি অথচ নতুন নতুন জটিলতা সৃষ্টি করছেন তাদের ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ১ শতাংশের জন্য বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের ভুক্তভোগী হওয়া উচিত নয়। লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন এফবিসিসিআই সভাপতি। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ, এসএমই খাতে অর্থায়ন, ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাংক ঋণ, কালো টাকা বিনিয়োগ, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন তিনি।

প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে শেখ ফাহিম বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের যে ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা ছিল, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন খেলাপি ঋণসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সামনে এনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো প্রণোদনার আওতায় ঋণের অর্থ দিতে পারছে না বলে বলা হলেও তা সঠিক নয়। ব্যাংকে তারল্য বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ঈদের আগেই ব্যাংকগুলোতে ৭০ হাজার কোটি টাকা নতুন তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরাও এফবিসিসিআইকে বলেছেন কোনো তারল্য সংকট নেই। অবশ্য কিছু ব্যাংক স্বউদ্যোগে এগিয়ে এসেছে। এ ধরনের ব্যাংকে সরকারি আমানত বৃদ্ধি এবং কর্পোরেট করে ছাড় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রণোদনা বাস্তবায়ন শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়। সার্বিকভাবে সমাজের ৗপর এর প্রভাব পড়বে। এ সময় জানানো হয়, এসএমই খাতের জন্য প্রণোদনার আওতায় বরাদ্দ হওয়া ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে গত ২ মাসে মাত্র ৫০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে।

ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা প্রসঙ্গে বলেন, এফবিসিসিআই বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়ার পক্ষে নয়। এর পরিবর্তে স্টক, ডিভেঞ্চার ও ক্রাউড ফান্ডিং সহজীকরণের মাধ্যমে সরকার অর্থ তুলতে পারে। ব্যবসায়ী এতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। ব্যাংক অলস টাকা থাকলে ঋণ নিতে পারে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের চেয়ে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি পছন্দ করে। কারণ সরকারকে ঋণ দেয়াকে বেশি নিরাপদ মনে করে ব্যাংকগুলো।

ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে শেখ ফাহিম বলেন, নতুন ভ্যাট আইন ডিজাইন করা হয়েছে ১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের জন্য। এটি ছোট ব্যবসায়ীদের বাধা সৃষ্টি করার জন্য করা হয়েছে। বিষয়টি অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে আইনটি স্থগিত করে অধিকতর রাজস্ব ও ব্যবসাবান্ধব করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এনবিআর ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২ বছরে কোনো কাজই করেনি। সংশ্লিষ্ট পরামর্শক ও কর্মকর্তা কোনো কাজ করেননি, এখনও উনাদের অনেকে চাকরিতে আছেন এবং ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরানো ব্যর্থ পরামর্শকরা আবারও যোগ দিচ্ছেন। এখন আবার আইনে নতুন নতুন জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে কর্মকর্তাদের একটি অংশ নতুন প্রকল্পে বেশি আগ্রহী। নতুন প্রকল্প মানেই কেনাকাটা, টেন্ডার, বিদেশ ভ্রমণ।

প্রথাগতভাবে বাজেট ঘোষণার ২-৪ দিনের মধ্যে এফবিসিসিআই বাজেট বিশ্লেষণ করে প্রতিক্রিয়া গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরত। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এফবিসিসিআইর আপত্তির বিষয় যাচাই-বাছাই করে বাজেটে সংশোধনী আনত। কিন্তু এবারই প্রথম বাজেট পাসের দু’দিন আগে প্রতিক্রিয়া জানাল এফবিসিসিআই।

বিলম্বে বাজেট প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে শেখ ফাহিম বলেন, এফবিসিসিআই পুরো বাজেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছে। আইনি পরিবর্তন বিশ্লেষণ করতে সময় লেগেছে। ইতোমধ্যেই সরকারকে আপত্তিগুলো জানানো হয়েছে। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা না হলে পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

করোনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম