অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ
এমপি পাপুলের স্ত্রী শ্যালিকাকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম ওরফে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এমপি ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এদিকে পাপুলের সহযোগীদের খুঁজছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এ ছাড়া তার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কি না, তা জানতে চেয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী।
বুধবার দুদক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তার স্বামী ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’। তিনি বলেন, কুয়েতে পাপুলের প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা দেশে কোটি কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।
পাপুলের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অংশ হিসেবে এদিন তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন। ১২ জুলাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে নোটিশ দিয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে পাপুলের স্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে দুদকের কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছি। আমাদের কোনো গোপন সম্পদ নেই। অবৈধ সম্পদও নেই। যা আছে তার বিবরণ দুদককে দিয়েছি। আমরা আইনের পক্ষে। এই তদন্তে দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করব।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা এবং শ্যালিকা জেসমিন প্রধান দুদক কর্মকর্তার মুখোমুখি হন। অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গত ২২ জুন একই অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় দুদক।
১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দিয়েছে দুদক।
পাপুলের বিষয়ে দেশ ও দেশের বাইরে বহুমুখী অনুসন্ধান চলছে। কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশের সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ অনুসন্ধান করছে।
৬ জুন রাতে মানব পাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ।
পাপুলের সহযোগীদের খুঁজছে সিআইডি : যে চক্রের মাধ্যমে পাপুল মানব চাপার করতেন ওই চক্রের কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে সিআইডি। শিগগির তাদের গ্রেফতার করা হবে। এ ছাড়া পাপুলের অপকর্মের বিষয়ে কুয়েত সরকারের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
ওইসব তথ্য পেলে পাপুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্তের বেশ অগ্রগতি হবে। সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বুধবার যুগান্তকে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, মানব পাচার মামলার তদন্তের পাশাপাশি পাপুলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি।
পাপুল দ্বৈত নাগরিক কি না, জানতে চিঠি : পাপুলের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কি না, তা জানতে চেয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী। বুধবার কুরিয়ারে চিঠিটি পাঠান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম জুলফিকার আলী জুনু।
তিনি যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া তিনি দ্বৈত নাগরিক হলে বাংলাদেশের সংবিধান ও নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী বৈধ সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকে কি না, সে বিষয়েও জনগণের মনে প্রশ্ন রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠির বিষয়ে আইনজীবী এসএম জুলফিকার আলী জুনু বলেন, এমপি পাপুল দ্বৈত নাগরিক কি না, সে বিষয়ে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি।
