করোনার প্রভাব মোকাবেলা
রফতানি ঋণের শর্ত শিথিল
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার: পণ্য জাহাজে তোলার আগে ঋণ নেয়া যাবে, আগে জাহাজে তোলার পর ঋণ নেয়া যেত * ঋণ পরিশোধ করতে হতো ৪ মাসের মধ্যে, এখন ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে * আগে রফতানি মূল্যের ১০ শতাংশ ঋণ নেয়া যেত, এখন রফতানি আদেশের ১০ শতাংশ ঋণ নেয়া যাবে
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে রফতানি ঋণ তহবিলের শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রফতানিমুখী শিল্পে পণ্য জাহাজে তোলার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে এ তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নিতে পারবেন উদ্যোক্তারা। আগে পণ্য জাহাজে তোলার পর ঋণ দেয়ার বিধান ছিল। এ বিষয়ে আগের আরোপিত দুটি শর্ত বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আর কিছু শর্ত শিথিল করেছে। ফলে রফতানিকারকরা ওই তহবিল থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবেন।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। রফতানি খাতে কম সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে ১৩ এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে। এ তহবিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে ৩ শতাংশ সুদে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রফতানিকারকদের দেবে ৬ শতাংশ সুদে।
ওই সময়ে এ ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল রফতানি পণ্য সম্পূর্ণভাবে তৈরি হলে জাহাজে তোলার পরই এ ঋণ দেয়া যাবে। অপর একটি শর্ত ছিল কোনো ক্রমেই এ তহবিল থেকে রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের আগে ঋণ দেয়া যাবে না। এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, ব্যাংকগুলো কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ঋণ দেয়। রফতানির ক্ষেত্রে ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হস্তান্তর করে। কখনোই পণ্য হস্তান্তর করে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক রফতানির পণ্য তৈরি করেছে কিনা বা পণ্য জাহাজে তুলেছে কিনা সেটা সরেজমিন নিশ্চিত হওয়া ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কারণে এ তহবিল থেকে ঋণ প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার অপর একটি সার্কুলার জারি করে ওই দুটি শর্ত বাতিল করে দিয়েছে। ফলে এখন থেকে রফতানিকারকরা পণ্য জাহাজীকরণের আগেই ঋণ নিতে পারবে। আগের নিয়মে ঋণ নেয়ার ৪ মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করার বিধান ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।
আগের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, গ্রাহক রফতানির মূল্যের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, গ্রাহক রফতানির আদেশ, ঋণপত্র বা চুক্তির সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। এ ঋণ ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিতরণ করা যাবে।
সার্কুলারে বলা হয়, ৩ বছর মেয়াদি এ তহবিল থেকে রফতানিকারকরা সর্বোচ্চ ১ বছরের জন্য ঋণ দিতে পারবেন। তবে রফতানি মূল্য দেশে আসার পর ঋণ পরিশোধ করে আবার নতুন ঋণ নিতে পারবেন। সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে রফতানির মূল্য দেশে চলে আসে। এক্ষেত্রে রফতানিকারকরা এ তহবিল থেকে বছরে ৩ থেকে ৪ দফা ঋণ দিতে পারবেন। একই মালিকানাধীন গ্রুপের একাধিক কোম্পানির নামেও ঋণ নেয়া যাবে।
রফতানিকারকদের স্থানীয় মুদ্রায় কম সুদে ঋণ দেয়ার জন্য এ তহবিল গঠন করা হয়। রফতানির কাঁচামাল আনতে রফতানি উন্নয়ন তহবিল নামে আরও একটি তহবিল রয়েছে। তা থেকে ২ শতাংশ সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু রফতানি পণ্য তৈরির সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও অন্যান্য কাজের জন্য প্যাকিং ক্রেডিট নামে ঋণ নিতে হতো ৯ শতাংশ সুদে। এখন তারা এসব কাজের জন্য ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন।
