Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পেঁয়াজ আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার

কেজিতে কমেছে ৫ টাকা এখনও অস্থির বাজার

ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের একটি অংশ পচা * অনলাইনে প্রতি কেজি ৩৬ টাকায় বিক্রি শুরু টিসিবির

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কেজিতে কমেছে ৫ টাকা এখনও অস্থির বাজার

পেঁয়াজের আমদানি বাড়াতে এবং মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে এর ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সিদ্ধান্ত আগামী মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আর বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় এবং ক্রেতাদের চাহিদা কমায় দাম আরও কমেছে।

শনিবারের তুলনায় রোববার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে দাম কমেছে আরও ৫ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। একই দিন রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজি।

সূত্র জানায়, ভারত থেকে এখন যেসব পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে সেগুলোর একটি বড় অংশ পচে গেছে। সীমান্তে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক প্রায় পাঁচদিন খোলা আকাশের নিচে ছিল। ফলে পচন ধরে।

এসব পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। যেসব পেঁয়াজ ভালো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো নামমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। কেননা দ্রুত বিক্রি না করলে এগুলোয় আরও পচন ধরবে।

এদিকে ভারত থেকে আমদানির জন্য আগে খোলা এলসির পেঁয়াজ ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল। শনিবার ১২০৬ টন পেঁয়াজ ভারত থেকে দেশে ঢুকে। রোববার এসেছে ১০৮ টন। এর আগে শুক্রবার দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করে এলসি করা পেঁয়াজের ২৫ হাজার টন বাংলাদেশে ঢুকার অনুমতি দেয়া হয়।

এছাড়া ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অনলাইনে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। পাশাপাশি পেঁয়াজের দর স্থিতিশীল করতে সরকারের একাধিক সংস্থা বাজার তদারকি করেছে।

শনিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পেঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নিকট অতীতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই সংকট কঠিন আকার ধারণ করে।

পেঁয়াজের মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধের কারণে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশীয় পেঁয়াজ চাষীদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ প্রদান এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে পেঁয়াজ আমদানিতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়।

বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পেঁয়াজের অনুৎপাদনকালীন হিসেবে পরিচিত মার্চ ২০২১ পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বুধবার পেঁয়াজ আমদানির ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ভোমরা বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙা বন্দরে এখনও পেঁয়াজ বোঝাই দেড় শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৩ দিন আগে লোড দেয়া এসব পেঁয়াজে পচন ধরায় তা রাস্তার ধারে ঢেলে ফেলা হয়েছে। শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।

ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. ইকরাম যুগান্তরকে বলেন, ভারত ভালো পেঁয়াজ পাঠায়নি, পচা পেঁয়াজ পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যেসব ট্রাকবাহী পেঁয়াজ সীমান্ত পার হওয়ার জন্য এসেছিল, সেগুলো কেন আটকাল?

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশ থেকে বেশি পেঁয়াজ আনা শুরু করব। আর এই পেঁয়াজ আমদানির জন্য প্রক্রিয়া এতটা কঠিন না। তিনি জানান, পচার মধ্যে যেটুকু ভালে আছে সেগুলো প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে যেগুলো পচে গেছে, সেগুলো কেউ নিতে চাচ্ছে না। নিলেও বস্তা (৫০ কেজি) ৩০-৪০ টাকা দাম বলে।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র ঘোষ যুগান্তরকে জানান, ভারতের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার থেকে অতি সহজে পেঁয়াজ দেশে আমদানি করা যায়। তবে টেকনাফে একটি চক্র আছে, যারা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে এনে দেশের অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে।

ওই চক্রের কারণে সরাসরি দেশের অন্য ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনতে পারে না। আর মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে টেকনাফের সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করতে হয়, যা ওই চক্রের সদস্যরা নিয়ন্ত্রণ করে।

তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনতে ভারতের থেকে কিছু টাকা বেশি খরচ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ। তবে মিয়ানমার সীমান্তে পেঁয়াজ না থাকলেও অন্যান্য অঞ্চল থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে সীমান্তে আনতে এক থেকে দুইদিন সময় লাগে। এরপর বাংলাদেশে এই পেঁয়াজ আনতে আরও এক বা দুইদিন সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ দেশে আনা যায়।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বারবার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ও চালুর সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা, যা নিয়ে গভীরভাবে সরকারের ভাবা উচিত। পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতকে বাদ দেয়া উচিত। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা করে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার ব্যবস্থা করে দিলে আমরা দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হব না। তিনি বলেন, ভারতের জন্য ২০১৯ সালে একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আবার ২০২০ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।

অনলাইনে বিক্রি : অনলাইনে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। ঘরে বসে একজন ভোক্তা তিন কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এজন্য গ্রাহকের কাছ থেকে সরবরাহ বা ডেলিভারি চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নিতে পারবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। রোববার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে টিসিবির পেঁয়াজ অনলাইনে বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, অনেকেই সামাজিক কারণ ও সময়ের অভাবে রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে পারেন না। এছাড়া টিসিবির ট্রাক সংখ্যা বাড়ানোর সক্ষমতাও সীমিত। তাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার এবার টিসিবির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা করছে। বড় ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবিকে দেবেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আপাতত চালডাল, স্বপ্ন অনলাইন, সিন্দাবাদডটকম ও সবজিবাজারডটকম অনলাইন বাজারে এই বিক্রি কার্যক্রম চালানো হবে। পরে বিডিসোল ও একশপ এই কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারে। তবে আরও প্রতিষ্ঠান যোগ হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আপাতত তিনদিনে ৫০০ কেজি করে পেঁয়াজ দেবে টিসিবি। একজন ক্রেতা একাধিকবার যাতে পেঁয়াজ না কিনতে পারেন, এজন্য তদারকিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আপাতত এ সেবা ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত থাকবে।

পেঁয়াজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম