Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

সামষ্টিক অর্থনীতির ৪৬ লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কা

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সামষ্টিক অর্থনীতির ৪৬ লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কা

করোনা মহামারীতে শঙ্কার মুখে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ৪৬ লক্ষ্য অর্জন। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) এসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রকৃত খাত নির্দেশক ১৩টি, আর্থিক নির্দেশক ১৪টি, ঋণ নির্দেশক আটটি,বহিস্থ নির্দেশক সাতটি এবং মুদ্রা সংশ্লিষ্ট নির্দেশক চারটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

কেননা পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। সেটিই এখনও তৈরি শেষ হয়নি। সেখানে হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে কোভিড-১৯ এর প্রভাব। তাই বলা যায় করোনার ক্ষত নিয়েই শুরু হচ্ছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। কিন্তু এসব লক্ষ্য নির্ধারণে ক্ষতির বিষয়ে কোনো চিন্তাই করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এসব লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। কেননা প্রশ্ন হচ্ছে বেইজ লাইন ঠিক আছে কি না। যদি শুরুতেই ভুল থাকে। অর্থাৎ কোভিড বিবেচনায় না নিয়েই এসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে তাহলে সেটি পরিকল্পনার শেষ পর্যন্ত ভুলই থেকে যাবে। বেইজ লাইন সঠিক না হলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।

তারপরও দেখতে হবে ২০২১, ২২ এবং ২৩ সাল পর্যন্ত লক্ষ্যগুলোর কী অবস্থা হয়। তার ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তী লক্ষ্য অর্জন। কোভিড-১৯ মহামারী হয়তো সাময়িক (২-৩ বছর) সময়ের জন্য। কিন্তু এর প্রভাব তো সাময়িক নাও হতে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য, বৈষম্য, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো খাতে সবচেয়ে বেশি কোভিডের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।

জিইডি (জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশন) সূত্র জানায়, প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি হিসেবে সামষ্টিক প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রকৃত মোট দেশজ আয়ের প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে হবে আট দশমিক ২৩ শতাংশ। সেটি বাড়তে বাড়তে পরিকল্পার শেষে ২০৪১ সালে গিয়ে দাঁড়াবে নয় দশমিক ৯০ শতাংশ। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ২০২১ সালে পাঁচ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ২০৪১ সালে হবে তিন দশশিক ৯৬ শতাংশ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে কমে পরিকল্পনার শেষ বছরে শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশে দাঁড়াবে। মোট জাতীয় সঞ্চয় মোট দেশজ আয়ের ৩১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পরিকল্পনার শেষ বছরে ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট বিনিয়োগ ৩৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং শেষ বছরে ৪৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

ভোগ ২০২১ সালে ৭৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে ৪১ সালে ৬৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০২১ সালে দুই হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার, ২০৪১ সালে সেটি বেড়ে হবে ১৭ হাজার ২২৯ ডলার। দেশের জনসংখ্যা ২০২১ সালে ১৭ কোটি ২১ লাখ থেকে বেড়ে শেষ বছরে হবে ২১ কোটি ৩ লাখ।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। তবে সবকিছু খুলে দেয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বলতে গেলে অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ার পথে। এই অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি এসব লক্ষ্য অর্জনে তেমন প্রভাব পড়বে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী শীতে যে করোনার সংক্রমণ বাড়বে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। কেননা আশা করা যাচ্ছে এ দেশে ওইভাবে আর কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে না। শীতে সংক্রমণ বৃদ্ধির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটি নাও হতে পারে।

কারণ এর আগে অনেক পক্ষই নানা রকম ধারণা করেছিল। বলা হয়েছিল ঈদুল ফিতরের পরে এ দেশে ব্যাপক করোনার সংক্রমণ ঘটবে। সেটি হয়নি। তাই করোনা চলে গেলে অর্থনীতি স্বাভাবিক হলে লক্ষ্য অর্জন বাধা হবে না।

পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে আর্থিক নির্দেশকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হল, রাজস্ব ও অনুদান ২০২১ সালে মোট দশজ আয়ের ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ৪১ সালে সেটি হবে ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। মোট ব্যয় মোট দেশজ আয়ের হিসেবে ’২১ সালে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ঋণ নির্দেশকের মধ্যে মোট বকেয়া ঋণ ’২১ সালে ৩৫ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে শেষ বছরে হবে ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ। রফতানি প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ থেকে শেষ বছরে ১১ শতাংশ। আমদানি প্রবৃদ্ধি ’২১ সালে ১১ শতাংশ থেকে শেষ বছরে ১০ শতাংশ। প্রবাসী আয় প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমে শেষ বছরে হবে দুই শতাংশ। ব্রড মানি ১১ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে শেষ বছরে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

করোনা অর্থনীতি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম