Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

চরাঞ্চলে জীবিকায় ৪৫ কোটি টাকা অনুদান, পরামর্শকের পকেটে যাচ্ছে ১৯ কোটি

৮ কর্মকর্তার বিদেশ প্রশিক্ষণে ৩৫ লাখ টাকা, আপত্তি দেবে পরিকল্পনা কমিশন

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চরাঞ্চলে জীবিকায় ৪৫ কোটি টাকা অনুদান, পরামর্শকের পকেটে যাচ্ছে ১৯ কোটি

দেশের ছয়টি জেলার চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ।

এজন্য ‘মেকিং মার্কেট ওয়ার্ক ফর দ্য চরস (ফেজ-২)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

৫৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে এসডিসি (সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন) ফান্ড। এতে ২০ পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞের পেছনে খরচ হবে ১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রশিক্ষণের নামে ৮ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। যদিও ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রশিক্ষণের ব্যয় বাদ দেয়ার পক্ষে মত দিতে যাচ্ছে কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়ার (আরডিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. আবদুল মজিদ প্রামাণিক বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এটা একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প।

মানুষকে শুধু জ্ঞান, বুদ্ধি ও পরামর্শ দেয়া হবে। তাই দাতা সংস্থার অর্থেই এসব পরামর্শক প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটি গতানুগতিক পরামর্শকের মতো হবে না।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিদেশ সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশন হয়তো রাখবে না।

কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ এবং কোন কোন দফতরের কর্মকর্তারা যাবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে এটা বলা যাচ্ছে না। ২ তারিখে (ডিসেম্বর) পিইসি সভা হোক তারপরই বিস্তারিত বলা যাবে।

সূত্র জানায়, উল্লিখিত প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হল দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৫টি এবং দক্ষিণাঞ্চলের একটিসহ ৬টি চরের ৭৫ হাজার পরিবারের টেকসই উন্নয়ন করা। জেলাগুলো হচ্ছে- গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, জামালপুর এবং শরীয়তপুর জেলা।

এছাড়া প্রকল্পভুক্ত চরাঞ্চলগুলোতে জাতীয় পর্যায়ে বেসরকারি কৃষি-ব্যবসা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের (শস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত) উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধি করা হবে।

সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে চর এলাকার মানুষের টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন অর্থাৎ চর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে আরডিএ, বগুড়া।

প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক পরামর্শক খাতের ক্ষেত্রে তিন ধরনের পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ও জাতীয় পরামর্শক (দীর্ঘমেয়াদি বিশেষজ্ঞ) ১৩ জনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। প্রত্যেকের পেছনে খরচ হবে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া প্রকল্প জনবল হিসেবে (স্বল্পমেয়াদি বিশেষজ্ঞ) ৪ জনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য খরচ হবে সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা করে।

এছাড়া প্রকল্প জনবল হিসেবে (স্থানীয় অফিস বিশেষজ্ঞ) ৩ জনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা। প্রত্যেকের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ২৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

প্রকল্প প্রস্তাবে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের জন্য ৮ কর্মকর্তার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিজনের জন্য খরচ হবে প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পিইসি সভার জন্য তৈরি করা কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ও জাতীয় পরামর্শক খাত ১৩ জনের জন্য বৈদেশিক সাহায্য (অনুদান) ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বিস্তারিত কোনো ব্যয় বিভাজন (জনমাস, মাসিক বেতন, সম্মানী ইত্যাদি) দেয়া হয়নি।

বিষয়টি পিইসি সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৮ কর্মকর্তার জন্য সরকারি তহবিল থেকে ৩৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এবং সরকারি অর্থের মিতব্যয়িতার জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাদ দেয়া যেতে পারে।

কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটির ব্যয় ৫৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এতে সরকারি তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

সরকারি অর্থের মূল কার্যক্রম গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডেভেলপমেন্ট লোন বাবদ সাড়ে ৪ কোটি টাকা, চর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেড় কোটি টাকা, প্রায়োগিক গবেষণার জন্য ৮১ লাখ টাকা, সেক্টর অ্যানালাইসিস বাবদ ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এসব কাজের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা পিইসি সভায় আলোচনা করে ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে।

পরামর্শক পকেট ১৯ কোটি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম