করোনার প্রভাব বাজেটে
কমছে রাজস্ব আহরণ, এডিপি বাস্তবায়ন
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দীর্ঘমেয়াদি করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চলতি বছরের বাজেট বাস্তবায়নে। সরকারের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থব্যয়, রাজস্ব আহরণ ও এডিপি বাস্তবায়নের শ্লথগতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি খাতের সূচক নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে।
অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সরকারের ব্যয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ৪৩ কোটি টাকা।
আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে। মূলত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থ সরবরাহ সময়িক স্থগিত রাখার প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি টানা লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে রাজস্ব আহরণেও।
তবে ব্যাংকিং খাত থেকে এ সময় সরকার ঋণ কম নিয়েছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় ব্যাংকনির্ভরতা কমছে সরকারের। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার বৃহস্পতিবার প্রণোদনা সংক্রান্ত এক বৈঠকে বলেছেন, সরকারের ঘোষিত ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কারণে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকারের ব্যয় কম হলেও সার্বিক অর্থনীতির গতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ভ্যাট একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। গত চার মাসে সেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
আর সরকারের স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত ছাড়া অন্য সব খাতে ব্যয় কম হওয়ায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে কম। তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণ এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে। এটি সন্তোষজনক নয়।
এডিপি বাস্তবায়নও কমেছে। কারণ ঠিকাদাররা মাঠে ঠিকমতো যেতে পারেনি। সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি। যে কারণে এডিপির বাস্তবায়ন হার কম। এমনতি প্রথম তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে এটি আরও খারাপ হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৬৬ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৬৮ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।
অর্থাৎ তিন মাসে বাজেট থেকে ব্যয় কম হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারের পরিচালন খাতে ব্যয় হয় ৪৯ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
ওই হিসাবে তিন মাসে পরিচালন খাতে টাকা খরচ কম হয়েছে ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কোভিড-১৯ কারণে সরকার সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে একধরনের কৃচ্ছ তাসাধন করছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এখন পর্যন্ত যানবাহন ক্রয়, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা স্থগিত রাখা হয়। স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত ছাড়া অন্যসব খাতে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা স্থগিত রাখার ফলে পরিচালন ব্যয় কমে আসে।
এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উন্নয়ন খাতে কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়। বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছাড়া সব ধরনের প্রকল্পে সরকার অর্থছাড় বন্ধ রাখে। এতে নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদাররা কাজ শুরু করতে পারেনি।
মাঠপর্যায়ে সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। সরকার অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ৪৬০টি নিম্নমানের প্রকল্পে অর্থছাড় করা বন্ধ করে দেয়। যে কারণে উন্নয়ন খাতে এ সময় ব্যয় কম হয়েছে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই সময়ে উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয় ১৭ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। গত তিন মাসে এডিপিতে ব্যয় কমেছে ৪৩ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন লকডাউন থাকায় ওই সময় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। আমদানি ও রফতানি কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে।
অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ভ্রমণ ও পরিবহন খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি থমকে যায়। অক্টোবর পর্যন্ত এর রেশ কাটেনি। যে কারণে এই সময়ে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।
যদিও গত বছরের তুলনায় জুলাই থেকে অক্টোবরে প্রথম চার মাসে এনবিআর কর আয় বেড়েছে ২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। তবে এটি চলতি অর্থবছরের চার মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-অক্টোবর এনবিআর কর আদায় করে ৬৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে আদায় হয় ৬৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কাস্টমস ডিউটি খাতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ, ভ্যাট খাতে ১ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এদিকে সর্বশেষ তথ্যমতে, সরকার ব্যাংক থেকে গত তিন মাসে ঋণ করেছে ১৫ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা কম।
