Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

করোনা সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি

ফেব্রুয়ারিতে মিলবে ভ্যাকসিন

গ্লোব বায়োটেক সিআরওর সঙ্গে হিউম্যান ট্রায়াল করবে * টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন গণমাধ্যমকর্মীরা - সচিব আবদুল মান্নান

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফেব্রুয়ারিতে মিলবে ভ্যাকসিন

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া যাবে। বিদেশ থেকে আনা টিকা দেশের সব মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে না, তাই দেশীয় কোম্পানির উদ্ভাবিত টিকার প্রতিও গুরুত্বারোপ দেয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এদিকে ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আইসিডিডিআরবির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে গ্লোব বায়োটেক ফার্মাসিউটিক্যালস। এখন তারা সিআরও বাংলাদেশের সঙ্গে হিউম্যান ট্রায়াল করতে যাচ্ছে।

মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্না উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের এ টিকা ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ কার্যকর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাকসিনটির জরুরি অনুমোদনের আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পয়লা ডিসেম্বর করোনা সংক্রমনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বে শনাক্ত রোগী ৬ কোটি ৩৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এ রোগে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা হচ্ছে। যে টিকাই আগে আসবে, সেটাই আনার চেষ্টা করা হবে। ফেব্রুয়ারিতেই ভ্যাকসিন পাব আশা করি। তবে তার চেয়ে বেশি দরকার স্বাস্থ্যবিধি মানা।

মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ে গ্লোব বায়োটেকের অফিসে ব্যানকোভিডের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বিষয়ে আলোচনা করতে যান স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এ সময় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বলেন, রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরার্মশ অনুযায়ী বাংলাদেশের যারা ব্যানকোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে পারে তাদের সঙ্গে গ্লোব যেন দ্রুত যোগাযোগ করে। তিনি গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন ব্যানকোভিডের নাম পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন। তিনি ভ্যাকসিনের নাম ব্যানকোভিডের পরিবর্তে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ রাখার প্রস্তাব করেছেন। স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য তারা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দেশের বাইরে থেকে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আসবে তা সবাইকে একসঙ্গে দেয়া যাবে না। তাই দেশীয় ভ্যাকসিন যদি একটা আসে, তাহলে সেটা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করা যাবে। আর এজন্য সরকার থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

তিনি বলেন, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সংগ্রহের জন্য ৫ নভেম্বর সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে সরকার চুক্তি করেছে। মহামারী মোকাবেলায় যারা সামনে থেকে কাজ করছেন তাদের বিনামূল্যে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারে গণমাধ্যমকর্মীদেরও রাখা হয়েছে। সচিব আবদুল মান্নান বলেন, সাংবাদিকরা করোনাভাইরাস মহামারীতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। এ কারণে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, দেশীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালসহ এর উন্নয়নে অধিদফতরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ সময় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন- গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সেফটি, এফিকেসি এবং কোয়ালিটি নিশ্চিত হলে অনুমোদনের জন্য সার্বিক সহায়তা করা হবে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যেই গ্লোব বায়োটেক সিআরও বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। সিআরও বাংলাদেশ নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তারা ব্যানকোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে চায়। আইইডিসিআরের পরামর্শ নিয়ে গ্লোব দ্রুততম সময়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে পারবে।

এদিকে করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে গ্লোব বায়োটেক ফার্মাসিউটিক্যালস। আইসিডিডিআর,বির পরিবর্তে তারা সিআরও বাংলাদেশের সঙ্গে হিউম্যান ট্রায়াল করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, সোমবার আইসিডিডিআর,বিকে চিঠি দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ না করার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

চুক্তি বাতিল কেন করা হল জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ১৪ অক্টোবর আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে গ্লোবের চুক্তি হয়। তারা গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন ব্যানকোভিডের সিআরও (কন্টাক্ট রিসার্চ পারসন) হিসেবে কাজ করবে। তারও আগে ২৯ আগস্ট থেকে তাদের সঙ্গে কাজ হচ্ছিল অনানুষ্ঠানিকভাবে। আমাদের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ছিল, ৩০ দিনের মধ্যে তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দেড় মাস পরও আইসিডিডিআর,বি এ বিষয়ে কাজ শুরু করেনি।

তিনি বলেন, প্রটোকল তৈরি থেকে শুরু করে সবকিছু আমরা করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ এ ৩ মাসে প্রায় ৯টির মতো সভা হয়েছে। আমরা বুঝতে পেরেছি, তারা যেহেতু বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত হয়, তাই তারা যাদের ফান্ডে চলে তাদের স্বার্থই আগে দেখবে। একই সঙ্গে আইসিডিডিআর,বির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম এবং দ্বিতীয় (ফেজ ওয়ান এবং টু) ধাপে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। এর আগে তারা সব ট্রায়াল করেছে তৃতীয় ধাপের। সম্প্রতি চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে যে চুক্তি হয় সেটাও তৃতীয় ধাপের ছিল। আর তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় বুঝেছি, আমাদের ট্রায়াল করার জন্য উপযুক্ত সিআরও তারা নয়। তাই আমরা তাদের জন্য আর অপেক্ষা করছি না, তাদের চিঠি দিয়ে এটা জানানো হয়েছে ।

এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্তের ১ বছর পূর্ণ হল মঙ্গলবার। ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের এক গবেষণা অনুযায়ী, গত বছরের ১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, যার শরীরে এর উপসর্গগুলো ছিল। এ পর্যন্ত বিশ্বে শনাক্ত রোগী ৬ কোটি ৩৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, টিকার জরুরি অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছে আবেদন করেছে মডার্না। এর আগে ২০ নভেম্বর ফাইজার কোম্পানি টিকার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল। ১০ ডিসেম্বরে এ বিষয়ে এফডিএর চূড়ান্ত অনুমোদনের আশায় রয়েছে কোম্পানি দুটি।

ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনাভাইরাসের দুই কোটি ডোজ টিকা তৈরি করবে বলে জানিয়েছে মডার্না। করোনার এ টিকা ১ মাস অন্তর দু’বার দিতে হবে। প্রথম কিস্তিতে উৎপাদনের দুই কোটি ডোজ টিকা এক কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত হবে। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে সোমবার এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মডার্নার প্রধান নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ব্যানসেল বলেছেন, তার কোম্পানি ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা প্রস্তুত করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থার (ইএমএ) কাছে টিকাটি শর্ত সাপেক্ষে বাজারজাতকরণের আবেদনও করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম