Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রিভিউ নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগের রায়

যাবজ্জীবন ৩০ বছর, আমৃত্যু দণ্ডে বাকি জীবন জেল

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যাবজ্জীবন ৩০ বছর, আমৃত্যু দণ্ডে বাকি জীবন জেল

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে আমৃত্যু কথাটি উল্লেখ না থাকলে আসামি ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী ৩০ বছর কারাভোগ করবেন। তবে কোনো আদালত, আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলে তাকে মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে। এক মামলায় আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার আপিল বিভাগ এ রায় দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ভার্চুয়াল বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই রায় আসে।

আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেন, যাবজ্জীবন বলতে ‘প্রাইমা ফেসি’ বোঝা যাচ্ছে যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তিনি কারাভোগ করবেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধির ৪৫ এবং ৫৩ ধারার সাথে দণ্ডবিধির ৫৫, ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (এ) মিলিয়ে পড়লে যাবজ্জীবনের সাজা কমে ৩০ বছর কারাদণ্ডের সমতুল্য হয়। তবে যে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল (যুদ্ধাপরাধসহ) যখন কোনো আসামির সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড উল্লেখ করে, তখন তাকে মৃত্যু পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে। তিনি কার্যবিধির ৩৫ (এ) ধারার (রেয়াতি) সুবিধা পাবেন না।

গত বছরের মাঝামাঝি পুনর্বিবেচনার আবেদনটির ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। বিষয়টি গত ২৪ নভেম্বর আবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন পুনর্বিবেচনার আবেদনটির পুনঃশুনানি শেষে ১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) রায়ের জন্য তারিখ রাখেন আপিল বিভাগ।

সাভারের ব্যবসায়ী জামান হত্যা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত। দুই আসামি হলেন আতাউর মৃধা ও আনোয়ার হোসেন। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। অন্যদিকে তাদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধ আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়। একই সঙ্গে আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাসসহ ৭ দফা অভিমত দেন। আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আসামি আতাউর মৃধা আবেদন করেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও শিশির মুহাম্মদ মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড। তবে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল যদি সাজায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বলে দেন তাহলে সেটাই গণ্য হবে। আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “যাবজ্জীবন মানে আসামিকে কতদিন, সাজা ভোগ করতে হবে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সে ব্যাপারে রিভিউ পিটিশন করে বলেছিলাম, বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী যাবজ্জীবনে ৩০ বছর হবে। কারণ ৩০ বছর যদি না হয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (এ) সহ অন্য আইনের বিধানগুলো এবং জেলকোড, সব বাতিল হয়ে যাবে। “আজকের রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, যাবজ্জীবন বলতে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যতদিন, ততদিন। কিন্তু আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামির ৩০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। যদি আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বিশেষভাবে আদেশ দেন, তাহলে আমৃত্যু জেলখানায় থাকতে হবে।”

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম