Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অগ্রযাত্রায় অবিচল আমাদের যুগান্তর

Icon

সাইফুল আলম

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্রযাত্রায় অবিচল আমাদের যুগান্তর

মানবজাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় সংকটকাল বলে বিবেচিত হয়েছে ২০২০ সাল। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে থমকে দাঁড়িয়েছিল মানবসভ্যতা। সে সংকট থেকে বিশ্ব এখনো মুক্ত হয়নি। আমরাও না। আশার কথা, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ সুফল পাবেন বলে আশা করি।

এক ঐতিহাসিক ক্ষণে আমাদের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আমাদের মহান নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাবের শততম বর্ষের অনুষ্ঠান পালন করছি আমরা। তার রেশ চলবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনুষ্ঠানমালার কিছু পরিবর্তন হলেও তার আবেদন অনুরণিত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির অন্তরে। বাঙালি জাতির অমারাত্রির সব দুর্গতোরণ ধূলিতলে লুণ্ঠিত করে মহামানব বঙ্গবন্ধু শুনিয়েছেন নবজীবনের আশ্বাসবাণী। বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে চিরস্থায়ী, চিরজীবী করেছেন তিনি। মুজিববর্ষের এই আনন্দময় আবহে ২২ বছরে পা রাখলাম আমরা। গতবার আমাদের স্লোগান ছিল : ‘একুশ মানে এগিয়ে চলা’। শত সংকটের মধ্যেও আমাদের এগিয়ে চলা থেমে যায়নি। এগিয়ে চলার মাইলফলকে পা রেখে আমরা অব্যাহত রেখেছি আমাদের অগ্রগতি।

দুই.

আগামী ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। করোনাভাইরাসের প্রকোপ সহনীয় হয়ে গেলে জাতি সাড়ম্বরে এ উৎসব উদ্যাপন করবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর চলমান অনুষ্ঠানমালা তো আছেই। দেশের সাধারণ মানুষের কাগজ যুগান্তর। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, সংবাদপত্র হচ্ছে গণমানুষের আদালত। মানুষ যখন নির্যাতিত হয়, অধিকারবঞ্চিত হয়, তার স্বার্থে অন্যায়ভাবে যখন কেউ আঘাত করে, বিভিন্ন দরজায় মাথা কুটে যখন সে সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তখনই সে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের দ্বারস্থ হয়। গণমানুষের আশ্রয়স্থল হচ্ছে সংবাদপত্র। আমরা যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে অগ্রযাত্রায় অবিচল হওয়ার অঙ্গীকার করছি, তার মূল কথা হলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানোর ক্ষেত্রে আমাদের সুদৃঢ় অবস্থান। সে কারণে আমাদের পাঠক, গ্রাহক ও পৃষ্ঠপোষকের সংখ্যায় কখনো ঘাটতি পড়েনি। বিপুল জনপ্রিয়তা ও প্রচারসংখ্যা নিয়ে যুগান্তর সংবাদপত্র জগতে এর প্রাধান্য বজায় রেখেছে। আমাদের অসাম্প্রদায়িক ও জনকল্যাণকর সম্পাদকীয় নীতি পাঠকপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। পাঠকই যুগান্তরের প্রাণ। এর ভিত্তি বিশ্বাস ও আস্থার সুদৃঢ় বন্ধন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন : ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতে দেশ গড়া বেশ কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরও বেশি আত্মত্যাগ, আরও বেশি ধৈর্য, আরও বেশি পরিশ্রম দরকার। আমরা যদি একটু কষ্ট করি, একটু বেশি পরিশ্রম করি, সকলেই সৎপথে থেকে সাধ্যমতো নিজের দায়িত্ব পালন করি, সবচাইতে বড় কথা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকি- তাহলে আমি বিনা দ্বিধায় বলতে পারি, ইনশাআল্লাহ কয়েক বছরের মধ্যে এই দেশ আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।’

বঙ্গবন্ধুর এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা চাই। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যে যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। যুগান্তর তাদের সব সংকটে, সব মহৎ উদ্যোগে সঙ্গে থাকবে- আমাদের প্রতিষ্ঠার দিনে এ আমাদের প্রতিশ্রুতি।

তিন.

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা আজ অনেকদূর এগিয়েছি সত্য, আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্যপথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর। বাঙালি বীরের জাতি। পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমরা যদি পরিশ্রম করি, সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমরা সফলকাম হবই, ইনশাআল্লাহ।’ যুগান্তরের ২২ বছরে পদার্পণের শুভদিনে আমাদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে একই প্রত্যাশা, একই স্বপ্ন। আমরা সফলকাম হবই।

চার.

দুঃসহ এ করোনাকালে কতজন যে তাদের স্বজন, প্রিয়জন ও পরিচিতজনকে হারিয়েছেন, তার হিসাব রয়েছে পরিসংখ্যানে। বিশেষভাবে আমাদের কাঁদিয়েছে এ নিষ্ঠুর করোনাকাল। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপ এবং এর প্রতিটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হারিয়েছে তাদের প্রাণপুরুষ, স্বপ্নদ্রষ্টা ও শিল্প বিকাশে দেশের অন্যতম পথিকৃৎ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে। যুগান্তর হারিয়েছে এর মূল চালিকাশক্তি সত্য প্রকাশে নির্ভীক একজন অকুতোভয় যোদ্ধাকে। এ কষ্ট আমাদের জন্য যথার্থই অসহনীয়।

দীর্ঘ অভিযাত্রায় দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম হিসাবে দৈনিক যুগান্তর এর বিশাল পাঠক-পাঠিকা ও দেশের সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল। দীর্ঘ ২১ বছরের পথপরিক্রমায় সত্যের সন্ধানে নির্ভীক যুগান্তর এর ২২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন করছে। অতিমারি করোনার আবহে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিটি বিনীত আয়োজনে এবার প্রথমবারের মতো সত্য প্রকাশে অভয়দাতা, আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণার উৎস, অকুতোভয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের অনুপস্থিতি প্রতি মুহূর্তেই আমাদের বুকে কষ্টের উৎস হবে।

মনে পড়ে, গত বছর ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্যোক্তা নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পিছপা হয় না যুগান্তর। কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতে বদ্ধপরিকর এ প্রতিষ্ঠান। আমরা কাজ করতে চাই জনগণের জন্য, জনকল্যাণের জন্য।

এ মুহূর্তে লেখাটি লিখতে গিয়ে তাঁকে অকালে হারানোর বেদনায় আমি বিমূঢ়। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার পথনির্দেশ আমরা পাব না, তাকে দেখতে পাব না চোখের সামনে। আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে :

‘নয়ন সমুখে তুমি নাই

নয়নের মাঝখানে

নিয়েছো যে ঠাঁই...’

আজ কত কথা মনে পড়ছে। একটি নতুন শতাব্দীর শুভ সূচনাকালে দুহাজার সালে যমুনা গ্রুপের কর্ণধার শিল্পোদ্যোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের আগ্রহে ভাষার মাসের প্রথম দিনেই যুগান্তর প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন থেকেই আমাদের অব্যাহত এগিয়ে চলা। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও স্বজনপ্রীতি, গোত্রপ্রীতি, আপসকামী কর্মকাণ্ড ও বাণিজ্যিকীকরণের কালো থাবার প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যেও যুগান্তর আদর্শিক সাংবাদিকতা এবং এর নিরপেক্ষতার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে চলেছে। নিপীড়ন-নির্যাতনের কাছে যুগান্তর মাথা নত করেনি।

ভাষা সংগীতের রচয়িতা প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আমাদের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে লিখেছিলেন : ‘ঢাকায় এখন অনেক দৈনিক। তার ভিড়ে যুগান্তর তার বৈশিষ্ট্য হারায়নি। নিরপেক্ষতার ভান করে জনগণের কোনো শত্রুশিবিরের স্বার্থসিদ্ধির বাহন হয়নি। আবার ক্ষমতাসীনদেরও চাটুকারিতার ভূমিকা নেয়নি। যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে সত্য ও ন্যায়ের বাতি নিভতে দেয়নি।’

অতিমারিজনিত বর্তমান সংকটকালে দেশের মানুষ দিশেহারা। সংকট সৃষ্টি হয়েছে সংবাদপত্র শিল্পেও। ছাপার কাগজের সংকট। বিদেশি কালির দুষ্প্রাপ্যতা। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের সংখ্যা হ্রাস, ফলে আয়ের পরিমাণ হ্রাস। এমনকি পরিবহণ ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে পত্রিকার প্রচারসংখ্যার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই সবকিছু মোকাবিলা করে এগোতে হচ্ছে আমাদের। তারপরও আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়নি। যে কারণে মনে আশা ও ভরসা নিয়ে আমরা এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের স্লোগান নির্ধারণ করেছি : ‘অগ্রযাত্রায় অবিচল’।

অবশ্যই আমরা অবিচল। অনাগত দিনগুলোয় আমরা আমাদের নীতি, আদর্শ, সেবা ও লক্ষ্যে বিচ্যুতির অবকাশ সৃষ্টি করব না- এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

পাঁচ.

যুগান্তর কর্তৃপক্ষ, পরিচালনা পর্ষদ ও আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জান্নাতবাসী চেয়ারম্যান মহোদয়ের অভাব আমাদের বুঝতে দেননি। আমাদের প্রকাশক সালমা ইসলাম যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে যুগান্তর পরিবার। কেননা তিনি তো আমাদের প্রকাশক হিসেবে এতদিন নিষ্ঠা ও বিজ্ঞতার সঙ্গে সে গুরুভার বহন করেছেন। তিনি বরাবরই আমাদের খুব কাছের। এখন তিনি যমুনা গ্রুপের কর্ণধার। তার কর্মের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। তারপরও যুগান্তর এবং যুগান্তর পরিবার তার অনেক কাছের, অনেক আগে থেকেই তার ভালোবাসার স্থান দখল করে আছে। একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে সাধারণের প্রতি তার আন্তরিকতা ও ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। যুগান্তর পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই তিনি নিজের বলে জানেন। এটাই আমাদের শক্তি ও সাহস। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে এবং বিজ্ঞ পরামর্শে আমাদের অগ্রগতিতে শতগুণ গতি সঞ্চার হবে।

আবারও লিখছি, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যে সংকটকাল আমরা অতিবাহিত করছি, তার অবসান অবশ্যই হবে-এ আমাদের বিশ্বাস। যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ শুভলগ্নে শুভেচ্ছা, শুভকামনা জানাই আমাদের পাঠক-পাঠিকা, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের। কল্যাণ হোক, মঙ্গল হোক সবার। মহান স্রষ্টার কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা। অগ্রযাত্রায় অবিচল আমরা। বরাবরের মতো আমাদের উচ্চকিত উচ্চারণ :

আসুক যত ঝড়,

সাদাকে সাদা

কালোকে কালো

বলবে যুগান্তর।

সাইফুল আলম যুগান্তর দৈনিক যুগান্তর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম