Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেব স্বাধীনতার সুফল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেব স্বাধীনতার সুফল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাতৃভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশের প্রতিটি অর্জনেই বাঙালি জাতিকে সংগ্রাম ও আ ত্মত্যাগ করতে হয়েছে। শহিদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না, যেতে পারে না। আমরা তা হতে দেব না। স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনকে উন্নত ও অর্থবহ করব, একটি মানুষও ঠিকানাহীন থাকবে না, প্রত্যেকের ঘরে আলো জ্বালব-এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ও তিনি ব্যক্ত করেন। অমর একুশে ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে

সভাপতির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রেখেছি। এটা শুধু আমাদের ভাষা নয়, সারা বিশ্বের সব মাতৃভাষা সংরক্ষণে গবেষণা করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে নিয়ে আমরা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। আমরা নির্মাণ কাজও শুরু করেছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পরে আমরা এটার নির্মাণ কাজ শেষ করি। তিনি বলেন, ভাষা জাদুঘরে আর্কাইভ আছে। সেখানে বিভিন্ন মাতৃভাষার নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের একটা মহান দায়িত্ব এসে পড়েছে- সারা বিশ্বের ছোট-বড় যেমনই হোক মাতৃভাষা সংরক্ষণ করা। এগুলো আর্কাইভে রাখা ও গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া। সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্যই পৃথিবীতে এত বড় একটা ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা হয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত আর কোথাও নেই। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। ’৬৬ সালে তিনি ছয়দফা দেন। এ ছয়দফাই ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকেসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু এ অন্যায় বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্র-জনতা এক হয়ে আন্দোলন করে। সেই সংগ্রামে শামসুজ্জোহা, আসাদ, মতিউর রক্ত দেন। তাদের রক্ত বৃথা যায়নি। এ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি আরেকবার বিজয় অর্জন করে। আইয়ুব সরকার বাধ্য হয়ে ২১ ফেব্র“য়ারি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। আর ২২ ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধুসহ অন্যদের মুক্তি দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, শোষিত-বঞ্চিত মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। মানুষের দুঃখ-ব্যথা যন্ত্রণায় তিনি (বঙ্গবন্ধু) ব্যথিত হতেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে আমাদের স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আজকে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু সব আমরা করতে পারিনি। তবে কয়েকটি বিষয় আমরা গ্রহণ করেছি। সেটা হলো মুজিববর্ষ ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। আমরা প্রত্যেককে ঠিকানা করে দেব। এ সময় তিনি গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন।

দেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ এবং টিকা গ্রহণের পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই টিকা নেবেন। টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ এখনো করোনার টিকা পায়নি। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিলাম বলেই টিকা আনতে পেরেছি এবং মানুষ টিকা গ্রহণ করছেন। সবার প্রতি অনুরোধ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলুন, সবাই মাস্ক পরবেন। ইনশাআল্লাহ, এ মহামারি থেকেও আমরা মুক্তি পাব।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজুলর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষাশহীদ থেকে শুরু করে একাত্তর ও ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম