Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কুয়েতে দণ্ডিত পাপুলের এমপি পদ বাতিল

Icon

সংসদ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুয়েতে দণ্ডিত পাপুলের এমপি পদ বাতিল

মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতের রায়ে দণ্ডিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। সোমবার সংসদ সচিবালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সংসদ সদস্য বিদেশে আটক ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পর পদ হারালেন। নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, আসন শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেটের কপি আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। তবে নিয়মানুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে শূন্য আসনে উপনির্বাচন করার জন্য নিয়ে ডজনখানেক প্রার্থী প্রস্তুত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।

রায় ঘোষণার দিন থেকে পাপুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারি করা হয়। এতে বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন কাজী শহিদ ইসলাম। এ কারণে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আর সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন তিনি। কাজেই সংবিধানের ৬৭(১)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ (গত ২৮ জানুয়ারি) থেকে তার আসন শূন্য হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে বিষয়টি নিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার কার্যালয়ে সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় কুয়েত থেকে পাঠানো কাজী শহিদ ইসলামের মামলার রায়ের কপি পর্যালোচনা করা হয়। আরবি ও ইংরেজিতে লেখা ৬১ পৃষ্ঠার রায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকারের দপ্তরে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মাঝখানে তিন দিনের সরকারি ছুটির পর গতকাল প্রথম কর্মদিবসেই স্পিকার এ বিষয়টি নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এখানেই বহুলালোচিত কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সদস্যপদ বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

অর্থ ও মানব পাচারের মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের আদালত। পাশাপাশি তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল বা ৫৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় তাকে। আটকের সাড়ে সাত মাস এবং বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন তিনি।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারান। মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

সাংবিধানিকভাবে পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘সংসদ সচিবালয়ের চিঠি কমিশন সভায় উপস্থাপনের পর সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। নির্বাচন করতে ৪০-৪৫ দিন সময় লাগবে আমাদের। ২ মার্চ হালনাগাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।’ সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ‘বিএনপি ঠেকানোর’ কথা বলে স্থানীয়রা পাপুলের পক্ষে কাজ করে। পাপুল নিজে সংসদ সদস্য হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি করে আনেন।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্র“পে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত জুনে গ্রেফতারের পর পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনা হয়। পরে তদন্ত করে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, মানব পাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাভঙ্গের অভিযোগ আনে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। জানুয়ারিতে আদালত যে রায় ঘোষণা করে, তাতে পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসাবে কুয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহ এবং কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই দুই কর্মকর্তা ছিলেন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী এবং এজেন্ট। পাপুলসহ দণ্ডিত প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ওই রায়ে। বাংলাদেশে দুদকও পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে আছেন।

আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানান, আসন শূন্য হতে পারে এ কারণে বেশ কয়েকজন প্রার্থী এ পদে নির্বাচন করার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে করোনাকালে তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ আসনে উপনির্বাচনের লক্ষ্যে সম্প্রতি পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে সম্প্রতি কিছু কম্বল দেওয়া হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রায়পুর উপজেলার তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ডজনখানিক নেতা এমপি পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে অনুসারীদের দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই জনবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত নেতা। নির্বাচন এলেই তাদের এলাকায় দেখা যায়। এরপর তাদের আর দেখা যায় না।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, পাপুল এমপির অনুপস্থিতির কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। এখন উপনির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসা সময়ের ব্যাপার। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে।

রায়পুরের সন্তান নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু বলেন, রায়পুরে জনগণ বরাবরই উন্নয়ন বঞ্চিত। এখন উপনির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দল থেকে আমি মনোনয়ন চাইব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম