বাস ধর্মঘট স্থগিত
সড়ক অবরোধ করে ববি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সোমবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে চরমোনাই দরবার শরিফের ওয়াজ মাহফিল থাকায় সোমবার থেকে তিন দিন ধর্মঘট তুলে নিয়েছে পরিবহণ শ্রমিকরা। তবে এ তিন দিন তারা অন্য কর্মসূচি পালন করবেন।
জানা যায়, সোমবার বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পরে বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে এসে শেষ হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অমিত হাসান রক্তিম বলেন, হামলায় জড়িতদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্তি এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আরেক শিক্ষার্থী আলিশা মুনতাজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের নাম দেওয়া হয়েছে। তার পরও মামলায় ওই নাম সম্পৃক্ত করা হয়নি। বারবার এ নিয়ে আলাপ আলোচনা হলেও বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে না বরং নিরপরাধ দুই পরিবহণ শ্রমিককে গ্রেফতার দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।’
বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, চরমোনাইয়ের মাহফিলে অসংখ্য লোক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন। তাদের সুবিধার্থে তিন দিন সব কর্মসূচি স্থগিত রেখেছেন শ্রমিকরা। রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক জানান, রোববার রাত ২টায় বাস মালিক ও শ্রমিকরা বৈঠক করে যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিন দিন পর পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের মধ্যকার চলমান বিরোধ নিয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপনকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। এর প্রতিবাদে বাস চালক ও শ্রমিকরা সোমবার বরিশাল-পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি সড়কে ঝাড়ু মিছিল করেন। তারা আজিজুর রহমান শাহিনের বিচার দাবি করেন। বিচার না হওয়া পর্যন্ত রূপাতলী বাসস্টান্ড থেকে তার মালিকানাধীন কোনো গাড়ি চালনা করবেন না বলে হুমকি দেন।
রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ববি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিআরটিসি বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষ রয়েছে। আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সংঘাত হয়নি। অথচ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় কাওসার হোসেন শিপনকে জড়িয়ে বানোয়াট সাক্ষাৎকার দিয়ে তাকে দোষী সাজানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে।
জানতে চাইলে আজিজুর রহমান শাহিন বলেন, সেদিন সাক্ষাৎকারে বলেছি, ‘আমি ত্রিশ বছর রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরোধ হলে তা দ্রুত সমাধানের জন্য এগিয়ে গিয়েছি। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েছি। এ কথা বলায় কেউ যদি আমাকে দোষী মনে করেন তবে আমি দোষ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’
উল্লেখ্য, ১৬ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআরটিসি বাস কন্ডাক্টরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর একজন ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আবাসস্থলে ফিরে যান। ১৭ ফেব্র“য়ারি গভীর রাতে রূপাতলী বাসস্টান্ডসংলগ্ন শিক্ষার্থীদের মেসে গিয়ে শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে তারা তিনটি শর্ত জুড়ে দেন। সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় ফের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
