Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মিয়ানমারে এবার ধর্মঘটের ডাক

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মিয়ানমারে এবার ধর্মঘটের ডাক

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হুমকির পর দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এতে সোমবার দুপুর থেকে দেশটিতে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এদিনও রাজধানী নেপিদো ও বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এসব বিক্ষোভে যোগ দেন। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

সোমবার সকালে মিয়ানমারের সরকারি এমআর টিভিতে বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। টিভিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা কিশোর ও যুবকদের উসকানি দিচ্ছে। এই পথে চললে তাদের প্রাণহানি হতে পারে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ নিয়ে ‘সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে’ বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

এরপরই বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শহরের রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দেন। এতে ছাত্র শ্রমিক চিকিৎসকসহ সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। রাজধানী নেপিদোতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীদের দিকে পুলিশকে জলকামান ছুড়তে দেখা গেছে। ফেসবুক লাইভে এসে এক নারী বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করা সত্ত্বেও তারা (পুলিশ) আমাদের ধাওয়া করছে। আমাদের আটক করছে।’

হেটেট হালায়িং নামে ২২ বছরের এক তরুণী বলেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আগে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু বিক্ষোভ থেকে সরে যাননি। তিনি বলেন, ‘আমরা জান্তা সরকারকে চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’

ধর্মঘটে স্থানীয় দোকানপাটসহ বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। দেশটিতে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন এবং স্থানীয় স্টোরগুলো বন্ধ রয়েছে। ইয়াম ব্রান্ডস ইনকরপোরেশনের কেএফসি, ফুডপান্ডা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোম্পানি গ্রাবের সার্ভিসও বন্ধ।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে পরিচিত মুখ মং সৌংখা বিক্ষোভে যোগ দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাদের বাইরে আসার সাহস নেই, তারা ঘরে থাকুন। যেভাবেই হোক আমি বাইরে বের হব। আমি জেনারেশন জেডকে (চলতি শতকের দ্বিতীয় দশকে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে) প্রত্যাশা করছি। পার্টনাররা, চলো একত্রিত হই। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা। কূটনৈতিক এ মিশনগুলোও বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়া বিক্ষোভকারীদের একত্রিত হওয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠছিল।

মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্র“য়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। জরুরি অবস্থার মধ্যেই জান্তা শাসনবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির জনগণ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে তারিখের মধ্যে সংখ্যাগত মিলকে ‘শুভ’ বিবেচনা করা হয়; বিক্ষোভকারীরা এ কারণে সোমবারকে (২২/২/২০২১) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, তারা এদিনকে ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেদিনের বিক্ষোভকে সামরিক জান্তা কঠোর হস্তে দমন করেছিল, ঝরেছিল রক্ত। তবে এবার নিরাপত্তা বাহিনীকে তুলনামূলক নমনীয়ই দেখা যাচ্ছে। যদিও এর মধ্যে মান্দালয়, নেপিদো ও ইয়াঙ্গুনে তাদের গুলিতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার পর এবার মিয়ানমারে নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারি দিয়েছে ইইউ। সোমবার ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের পর এ হুশিয়ারি দেওয়া হয়। দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ও বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম