আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু
ঘরমুখো মানুষের স্রোত
গ্রাম এলাকায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের * পথে পথে সীমাহীন দুর্ভোগ
মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে আজ একযোগে শুরু হয়েছে আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। এ সময়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় ১৩ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সেই মোতাবেক কলকারখানা ও অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকছে।
এ দীর্ঘ ছুটির ঘোষণায় গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা ছেড়েছেন কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ। মঙ্গলবারও মহাসড়কে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ঘরমুখো মানুষের স্রোত বইছিল। পদে পদে নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন তারা। কারণ এদিন ছিল ৯ দিনের নিষেধাজ্ঞার সমাপ্তি।
তাই চলেনি দূরপাল্লার গণপরিবহণ। এমন পরিস্থিতিতে মাইলের পর মাইল হেঁটে এক পরিবহণ থেকে আরেকটিতে ভেঙে ভেঙে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছে।
বিকল্প বাহন হিসাবে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ ও লেগুনায় চড়ে ঢাকা ছেড়েছেন এসব মানুষ।
পুলিশের কড়াকড়িতে পরিবহণ কমে যাওয়ায় মঙ্গলবার গাবতলী থেকে অনেক মানুষকে হেঁটে রওয়ানা হতে দেখা গেছে।
এ অবস্থায় করোনা নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শুধু যাত্রাপথেই নয়, এ সংক্রমণ দেশের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
‘সর্বাত্মক লডাউন’ আজ ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। এ ৮ দিন গণপরিবহণ-বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে (কর্ম এলাকা) থাকতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
কৃষিশ্রমিক পরিবহণ ও গণমাধ্যমসহ সব ধরনের জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। তবে শিল্পকারখানা, ব্যাংক ও শেয়ারবাজারসহ জরুরি সেবা শর্তসাপেক্ষে চালু থাকবে।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সায়েদাবাদ ও গাবতলী এলাকা দিয়ে ঢাকা ছেড়ে গেছেন হাজারো মানুষ। গত ৯ দিনের টানা বিধিনিষেধ মেনে মঙ্গলবারও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল।
এ কারণে ঘরমুখো এসব মানুষ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ট্রাক, পিকআপ ও লেগুনায় চড়ে মানুষকে ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
এসব স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় অনেকে তাৎক্ষণিক বাড়ি থেকে টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে রওয়ানা দেন।
গণপরিবহণ সংকটের কারণে মঙ্গলবার অনেককে হেঁটে ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখো হতে দেখা গেছে। যত কষ্টই হোক তারা বাড়ি পৌঁছবেন, এমন পণ করে তারা রওয়ানা হয়েছেন। এসব মানুষের আশা ছিল মহাসড়কে তারা কোনো না কোনো পরিবহণ পাবেন।
বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কেন বাড়ি যাওয়া-এমন প্রশ্নের উত্তরে ঘরমুখো মানুষেরা জানিয়েছেন, রোজা শুরু হয়েছে। সামনে ঈদ। এ সময় লকডাউন শুরু হওয়ায় তাদের কর্মস্থল বন্ধ হয়ে গেছে। আর লকডাউনের সময় আরও বাড়তে পারে এমন কথা শুনছেন।
এজন্য তারা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কেননা, এ সময় তারা ঢাকায় থেকে জীবন চালাতে পারবেন না। এখানে সবকিছুর দাম বেশি। তাই এ সময়ে ঘরে ফিরে গেলে ‘ডাল-ভাত’ খেয়ে হলেও জীবন বাঁচাতে পারবেন।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে কথা হয় কুমিল্লার রহিম মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটি কোম্পানির পিয়ন পদে চাকরি করি। লকডাউনের কারণে অফিস বন্ধ এবং অফিস থেকে জানানো হয়েছে ঈদের আগে হয়তো অফিস খুলবে না। এজন্য তিনি বাড়ি চলে যাচ্ছি। এ সময় ঢাকায় থেকে তিনবার খেতে ১৫০ টাকা লাগবে। আর চা, পান খেতে আরও খরচ হবে। এজন্য বাড়ি চলে যাচ্ছি। সবকিছু খুললে আবার ফিরে আসব।’
পাবনার বেড়ার উদ্দেশে বছিলা থেকে রওয়ানা হয়েছে সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ সময় এখানে বসে থেকে সময় কাটানো দুরূহ হয়ে পড়বে। এছাড়া খাওয়া খরচসহ নানাবিধ খরচের ধকল সইতে হবে। এজন্য বেরিয়ে পড়েছি। আশা করি কোনো না কোনো গণপরিবহণ পেয়ে যাব।
জানতে চাইলে গাবতলী টার্মিনাল এলাকার ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ফয়সাল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় গাবতলীতে সকাল থেকে গ্রামমুখো মানুষের ভিড় বেশি। মানুষ যে যার মতো করে সামনে এগোচ্ছেন। বিকল্প যানবাহন না পেয়ে হেঁটে গাবতলী এলাকা পার হচ্ছেন যাত্রীরা। এসব যাত্রী আমিন বাজার, হেমায়েতপুর বা সাভার এলাকা থেকে যেসব পরিবহণ পাচ্ছেন, সেসবে চড়ে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
কয়েকজন গ্রামমুখো মানুষ জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত মাথাপিছু ট্রাক, পিকআপে ৩০০ টাকা করে নিচ্ছেন। মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারে ৬০০ টাকা, ১০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যার কাছ থেকে যত নিতে পারছেন, তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শিমুলিয়া, পাটুরিয়া ঘাটে ফেরিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। লোকে লোকারণ্য এসব ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। হুড়োহুড়ি করে ফেরিতে উঠা-নামার সময় রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন ঘরমুখো মানুষ। ফেরিতে জায়গা না পেয়ে ট্রলারে অনেক মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে বেড খালি নেই, আর রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তখন চোখের সামনে অনেক মৃত্যু দেখতে হবে আমাদের। তিনি বলেন, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির সময়ে এ দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। রাষ্ট্রীয় শক্তিশালী কাঠামো থাকায় তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। কঠোর লকডাউন তাদের এ কাজ সামাল দিতে সহায়তা করেছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন একটি সহজ কাজ। এতে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সময় কিছু প্রজ্ঞাপন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। সেজন্য আমাদের সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীর কারণে গার্মেন্ট, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেবা সার্ভিস খোলা রেখে এমন লকডাউন তেমন কোনো সুবিধা দিতে পারছে না। এমন সিদ্ধান্তের কারণে যদি মৃত্যু, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে আমাদের দ্বিগুণ ক্ষতি হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লকডাউন ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে সরকারের কিছু পরিকল্পনা নেওয়ার দরকার ছিল। সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধ ও ব্যবস্থাপনা দেখে সে সবের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেটা না হলে গার্মেন্টস, ব্যাংক খোলা রেখে লকডাউন দেওয়া হয়। এ সময় খেটে খাওয়া মানুষের বেঁচে থাকার উপায় কী হবে, সেটার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হয়। এ কারণে এবার আগামীকাল (আজ) থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র ঘোষণা শুনে মানুষ যেভাবে ঢাকা ছেড়ে গেছে তাতে করে সংক্রমণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। পথে পথে তারা সংক্রমণ ছড়াতে ছড়াতে দেখা গেছে। দেশের ৮০ হাজার জনপদে এসব মানুষ সংক্রমণ ছড়াবে এটা বলাই যায়। কেননা, এ সময়ে যেসব মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছে, তাদের একজন হলেও এসব জনপদে যাবে।
আরেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোজাহেরুল হক যুগান্তরকে বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ‘লকডাউন’ বা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং আগামীকাল (আজ) থেকে আবারো ৮ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে। জনগণ সরকারের এ উদ্দেশ্য সঠিকভাবে ধারণ করতে পারেনি। সরকারের প্রত্যাশার উল্টো কাজ করেছে জনগণ। এক্ষেত্রে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তারা পথে ছড়াতে ছড়াতে যাবে এবং গ্রামেও করোনা ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) থেকে যে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র নামে যে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে ব্যাংক, গার্মেন্টস খোলা থাকবে। সে কারণে অনেক মানুষের চলাচল হবে। তখন সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। কেননা, গার্মেন্টস ও ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা এ সময় বাইরে বের হবেন। আর বের হলেই সংক্রমণ ছড়াবে। এখান থেকে কার্যকর সুফল মিলবে না।
ঢাকার বাইরের চিত্র : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও মঙ্গলবার ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক ৩০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় ৩ শতাধিক ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া প্রান্তে ২ শতাধিকসহ ৫ শতাধিক ট্রাক নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ফিরোজ শেখ বলেন, রাত থেকে ঘাট এলাকাতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ কিছুটা বেড়েছে। বর্তমান দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। খুব দ্রুতই নদী পার হতে পারবে এ সব ট্রাক।
গোয়ালন্দ প্রতিনিধি জানান, ১৪ এপ্রিল বুধবার হতে কঠোর লকডাউন ঘোষণার খবরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মানুষের ভিড় অব্যাহত রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে মানুষের গাদাগাদি চাপ। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ ছোট গাড়িগুলো ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। তবে পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। লকডাউন ঘোষণার কারণে দক্ষিণাঞ্চল হতে পণ্যবোঝাই বহু যানবাহন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে ঘাটে এসে আটকা পড়ছে।
লৌহজং প্রতিনিধি জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে হয়ে বাড়ি ফিরছে হাজার হাজার যাত্রী। ঠেকানো যাচ্ছে না দক্ষিণ বঙ্গগামী এ জনস্রোত। এ যেন ঈদের ছুটি। কঠোর লকডাউনের আগেই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। ঘাট এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছিল মানুষের জোয়ার। কঠোর লকডাউনের আগেই বাড়ি ফিরতে হবে এ প্রতিজ্ঞা তাদের। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট হয়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌ-রুটে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী সাধারণ এ যেন ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। লকডাউনকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের চাপ নিতে পারছে না মাওয়া শিমুলিয়া ঘাট। কোনো ঈদের পূর্বে এত লোকের সমাগম হয়নি মাওয়া ঘাটে। ঘরমুখো মানুষের চাপ পড়েছে শিমুলিয়া ঘাটে। কোনো সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি করোনা কিছুই মানছে না যাত্রীরা। এখানে মনে হচ্ছে করোনা তাদের দেখে পালিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, ঘাট এলাকায় আট শতাধিক গাড়ি রয়েছে পারাপারের অপেক্ষায়। মাওয়া চৌরাস্তা থেকে মহাসড়কে পাশে দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আছে।
ভালুকা প্রতিনিধি জানান, করোনার দ্বিতীয় ধাপে বুধবার থেকে সরকারিভাবে সারা দেশে ৮ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন দেওয়ায় সরকারি কর্মজীবী, শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ মঙ্গলবার ঘরে ফেরার পথে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ঘরে ফেরার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা খিরু ব্রিজের দক্ষিণ পাশে পুলিশ মহাসড়কে দাঁড়িয়ে বাস, ট্রাক ও পিকআপ যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর যাত্রীদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
শিবচর প্রতিনিধি জানান, ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র ঘোষণায় দ্বিতীয় দিনের মতো মাদারীপুরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ফেরির কোথাও তিল ধরার ঠাঁই নেই। সকাল থেকেই প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি অনেক যাত্রীকে পদ্মা পার হতে দেখা গেছে। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট ও ট্রলারে করে পদ্মা পার হচ্ছেন যাত্রীরা। পুলিশ, প্রশাসন ও ঘাট কর্তৃপক্ষ অনেকটা নির্বিকার। ফেরিতে ছোট যানবাহন ও যাত্রী চাপ বেশি থাকায় পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারে বিঘ্ন ঘটছে। এতে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথমবার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ছুটি’ ঘোষণা হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় কয়েক দফা। ওই সময় দেশে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। তখনকার পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তদের জীবন-জীবিকা আর দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা অস্তিত্ব সংকটে পড়লে বিভিন্ন মহলের দাবিতে সরকার ৩১ মের পর থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করতে থাকে। বছরের শেষে এসে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ছাড়া আর সব কড়াকড়িই উঠে যায়। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনের জন্য গণপরিবহণ চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘লকডাউন’ জারি করেছিল সরকার। রোববার এ বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার দিন তা আরও দু’দিন বাড়ায়। যেটা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
