Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

করোনা পালটে দিয়েছে অর্থনীতির হিসাব

ঘাটতি বেশি হলেও বাড়াতে হবে ব্যয়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘাটতি বেশি হলেও বাড়াতে হবে ব্যয়

করোনায় সরকারের আয় যে হারে কমেছে, তার চেয়ে ব্যয় কমেছে আরও বেশি। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিবি) সামগ্রিক ব্যয় একেবারে কম। একমাত্র রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) ছাড়া অর্থনীতির সবগুলো সূচক নেতিবাচক।

এ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্প্রসারণমূলক সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেতে হবে। ঘাটতি বেশি হলেও বাড়াতে হবে সরকারি ব্যয়।

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। আগামী বাজেটে ৫টি খাতে বিশেষ জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। এগুলো হলো- স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও কৃষি।

এ সময়ে ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার বাড়ানো এবং ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এ ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনীতিতে কিছু অস্বাভাবিক বিষয়ে রয়েছে। যেমন আমাদের নমিন্যাল জিডিপি ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। সেখানে জিপিডির অনুপাতে রাজস্ব আদায় সাড়ে ৮ শতাংশ। এটি অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে এখনো করোনায় প্রান্তিক মানুষকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজেটের মূল বিষয় হলো অর্থের জোগান। সেক্ষেত্রে ঘাটতি মোকাবিলায় দেশীয় উৎসের চেয়ে কীভাবে বিদেশি সহায়তা বাড়ানো যায়, সেদিকে জোর দেওয়া উচিত। কারণ বিদেশি অনুদান পেলে তা ভালো। আর অনুদান না পেলে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হলেও সে ঋণের সুদের হার খুব কম। তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচার রোধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি।

ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তায় আনার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নগদ সহায়তা দেওয়া হবে ৩৫ লাখ মানুষকে। কিন্তু সমস্যা হলো উদ্যোগ থাকলেও সহযোগিতা সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে এখানে সংস্কার আনতে হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তায় জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। আর স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে মানবসম্পদের উন্নয়ন জরুরি। এজন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ শেষ হয়েছে। ওই সময়ে অর্থনীতিতে মিশ্র অবস্থা ছিল। কোনো খাত এগিয়েছে, আবার কোনো খাত পিছিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতেও মনে হয়েছিল করোনা কেটে গেছে। ওই আমরা বলেছিলাম অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে সব হিসাব পালটে দিয়েছে। মনে হচ্ছে, করোনা দুই-তিন বছরে যাবে না। এই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে অর্থনৈতিক পলিসি হাতে নিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজেটের নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ৪টি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো- কোনোভাবেই লক্ষ্যমাত্রা যেন অবাস্তব না হয়, দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন খাতে যেসব কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কতদিন চলবে, তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এছাড়া আমাদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়ার কথা। কিন্তু দুর্নীতির কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

সবশেষে মধ্যমেয়াদি কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। করোনার কারণে সংস্কার কর্মসূচি যেন সব বাদ না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু এ পর্যন্ত কী অর্জন হয়েছে, তা আমরা জানি না। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ধনীদের আয়কর গত বছর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এটাকে আবার ৩০ শতাংশ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। সামষ্টিক অর্থনীতি ও বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটা সামঞ্জস্য। বিভিন্ন দেশ এখন এটা করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ধনীদের কর হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তা অব্যাহত রাখা উচিত।

ইন্টারনেটের সম্পূরক শুল্ক ও সার্সচার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা শুধু ধনীরা ব্যবহার করেন এখন আর এমনটা নেই। অনেক সাধারণ মানুষকে শিক্ষার কাজে বা অন্য কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে ধরনের কর কাঠামো এখানে আছে, আমরা মনে করি এটা সহায়ক অবস্থায় নেই।

আমরা সুপারিশ করছি সম্পূরক শুল্ক যে ১৫ শতাংশ আছে তা প্রত্যাহার করা। সেই সঙ্গে ১ শতাংশ সার্সচার্জ রাখা হয়েছে তাও প্রত্যাহার করা। শুধু ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে সেটাকে রেখে, এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ সময় তিনি বলেন, ব্যবসার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মওকুফ করা উচিত।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তৌফিক ইসলাম বলেন, এখন ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ব্যাংক খাতে বড় পরিমাণে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। আমরা অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা বলছি। সেক্ষেত্রে ঘাটতি বেশি হলে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া উচিত। কারণ এখন বেসরকারি খাতে চাহিদা কম। পাশাপাশি ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসায় যে ধরনের বরাদ্দ দরকার, ওই পরিমাণ বরাদ্দ দিতে হবে। হাসপাতালের নতুন ইউনিট, আইসিইউ এবং অক্সিজেনসহ সব খাতেই প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। আর ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে যেন অর্থ সংকট না হয়। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, এই মুহূর্তে সব থেকে খারাপ পারফর্ম করা খাত হলো, স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ খাতে যে ধরনের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বেশি দামে পণ্য কেনা হচ্ছে। এগুলো খুবই দুঃখজনক।

তিনি বলেন, গত বছরের বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এ খাত থেকে বেশ কিছু কর এসেছে। এরপরও এটি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কালো টাকা বিনিয়োগ সুশাসনকে ব্যাহত করে।

ঘাটতি বেশি হলেও বাড়াতে হবে ব্যয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম