Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নৌপথে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোই বড় চ্যালেঞ্জ

মাস্ক না পরলে শাস্তি পেতে হবে -নৌপ্রতিমন্ত্রী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নৌপথে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোই বড় চ্যালেঞ্জ

নৌপথে লঞ্চ ও ফেরির যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, আগামী ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনে শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণায় শ্রমিকদের মাঝে ঈদে বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেবে। এতে লঞ্চ ও ফেরিতে যাত্রীচাপ বাড়বে।

একইভাবে ঈদের পরদিনই অনেকেই ঢাকায় ফিরবেন। এতেও যাত্রীচাপ বাড়বে। ফলে লঞ্চ ও ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়।

এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ নানা পদক্ষেপও নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বুধবার নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ঈদ ব্যবস্থাপনা সভায় এসব বক্তব্য উঠে আসে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

লকডাউন শিথিল হওয়ায় আজ সকাল থেকে সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করবে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে আগামী ১৫ থেকে ২২ জুলাই দিনে ও রাতে বালুবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। ইজারাদাররা যাতে যাত্রীদের হয়রানি না করতে পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে।

নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে জুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ এম তাজুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর আবু জাফর মো. জালালউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। জুমে বিভিন্ন জেলার ডিসি ও পুলিশ সুপার অংশ নেন। বৈঠকের আগে নৌপ্রতিমন্ত্রী ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট) পরিদর্শন করেন। সেখানে যাত্রী পরিবহণে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

সভার শুরুতে নৌপথের ঈদ প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নৌপ্রতিমন্ত্রী ও সচিব। নৌসচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু হবে। লঞ্চে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে। ডেক ও চেয়ারের যাত্রীদের ভাড়া যে ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকবে। কেবিনের ভাড়া আগের মতোই থাকবে।

স্বাস্থ্যবিধি মানানো বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাস ও ট্রেনে সিট নম্বর দেওয়া থাকে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যতটা সহজ, লঞ্চে ততটা সহজ নয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে গত বছর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ডেকে মার্কিং দেওয়া হয়েছিল।

যাত্রীদের মার্কিং অনুযায়ী বসতে হবে। শতভাগ যাত্রীকে মাস্ক পরতে হবে। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ, প্রশাসন ও লঞ্চ মালিকদের বলেছি যাত্রীদের এটি মানাতে হবে। লঞ্চের স্টাফদের করোনা টেস্ট করে কাজে যোগ দিতে হবে। নৌসেক্টরে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা দিচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাস্ক না পরলে যাত্রীদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে। জরিমানা গুনতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে নৌপ্রতিমন্ত্রী সদরঘাট পরিদর্শন করে বলেন, যাত্রী বহনের জন্য ঘাটের সংস্কার কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। সদরঘাটে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। ১২ বছরে সরকার সদরঘাটকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। সদরঘাট এখন আর নোংরা বা অন্ধকার জায়গা নয়।

জানা গেছে, বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নৌপথে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঈদের পর যাত্রীদের ঢাকায় ফেরার সুবিধার্থে লকডাউন শিথিল রাখার প্রস্তাব দেন।

শুধু ঈদের পরদিন শিথিল থাকায় ওইদিন যাত্রীদের অনেক চাপ পড়বে বলেও জানান তারা। এ সময় জানানো হয়, সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত দেওয়ায় সেখানে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় নেই। সভায় একজন পুলিশ সুপার আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরির সংখ্যা আরও দুটি বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

সদরঘাটে লঞ্চ চলাচলের প্রস্তুতি সম্পন্ন : পুরান ঢাকা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাটে ঢাকা নদী বন্দরে সরেজমিনে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসাবে নতুন পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য প্রস্তুত রয়েছে।

লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু: বরিশাল ব্যুরো জানায়, প্রাণচঞ্চল ফিরে এসেছে বরিশালের বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাটে। লকডাউন শিথিলের খবরে শ্রমিকরা ভিড় করছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। কেউ বাসের যন্ত্রাংশ মেরামত, আবার কেউ কেবিন পরিষ্কার করছেন। ব্যস্ততা লক্ষ করা গেছে ওয়ার্কশপগুলোতেও। যন্ত্রাংশ বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে পার্টসের দোকানগুলোতে।

বুধবার দুপুরে নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে এবং বরিশাল লঞ্চ ঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে আজ থেকে কঠোর লকডাউন শিথিল হওয়ার খবরে বুধবার বরিশালে লঞ্চের টিকিট কাউন্টারগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। ঈদের ছুটিতে গন্তব্যে যেতে আগাম টিকিট নিতেই এই ভিড়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষও আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে।

সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির পরিচালক শহিদুর রহমান পিন্টু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চগুলোর আগাম টিকিট যাত্রীপর্যায়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। মহামারি করোনার কারণে মোবাইলের মাধ্যমে ঈদের আগাম টিকিট যাত্রী পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ইয়াসির হোসেন বাপ্পি জানান, এবার স্লিপের মাধ্যমে কেবিনের বুকিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, যারা আগে চাচ্ছেন তাদেরই দেওয়া হচ্ছে।

নৌপথ যাত্রী স্বাস্থ্যসেবা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম