Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ

নতুন বিনিয়োগ টানতে পৃথক আইন নয়

বিদ্যমান আইন সংস্কারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব -বিশেষজ্ঞ মত

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন বিনিয়োগ টানতে পৃথক আইন নয়

নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ই-কর্মাস নিয়ন্ত্রণে পৃথক আইন করবে না সরকার। আইন হলে নানা বিধি-বিধানের ধারায় আটকে উৎসাহ হারাতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি নতুন আইন প্রণয়নে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।

এছাড়া সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচারও নতুন আইনে হবে না। মাঝখানে সম্ভাবনাময় এ খাত শুরুতেই স্থবির হয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। এছাড়া গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের অপরাধের দায়ে এ খাতকে বন্ধ করা হবে না। কয়েক লাখ মানুষ জড়িয়ে পড়েছেন ই-কমার্সে। যে কারণে ই-কর্মাস আইন প্রণয়ন থেকে সরকার সরে আসছে।

বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কার করেই আগামীতে এ খাত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন এটি করা সম্ভব। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কার করে ই-কমার্সকে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ কমিটি জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট ও আইসিটি অ্যাক্ট পর্যালোচনা করেছে।

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার ড. স্বাধীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো নতুন আইন করা একটি সমস্যা বটে। শুধু আইন করলে হবে না এটি কার্যকর থাকতে হবে। দেশে ২ হাজার ৬০০ আইন রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫টি আইনে সব মামলা হচ্ছে। ই-কমার্স খাতে প্রতারণা বন্ধ করতে বিদ্যমান আইনে কয়েকটি শব্দ যোগ করে সংশোধন এনে করা সম্ভব।

ফৌজদারি দণ্ডবিধি ৪২০ চিটিং এটি সবাই জানি। এখানে নতুন কয়েকটি শব্দ যুক্ত করলে হবে। সেখানে যুক্ত করা যেতে পারে যেমন-এমএলএম ও ই-কমার্সের মাধ্যমে কাউকে ঠকালে এ আইনের আওতায় পড়বে। আরও সংযুক্ত করা যেতে পারে-ডিজিটাইল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেউ হ্যাংকিং করলেও এ আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ ই-কমার্সের অপরাধগুলো বিদ্যমান আইনে দু-একটি ধারার মাধ্যমে যুক্ত করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নতুন আইন করলেও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ই-কমার্স খাতে অপরাধ ওই আইনে বিচার হবে না। বিদ্যমান আইনে বিচার হবে।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের অনুমতি দেয়। এরপর গত এক দশকে ই-কমার্স খাতে ব্যবসার গণ্ডি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। বর্তমানে দেশে আনুমানিক ২ হাজার ৫০০ ই-কমার্স সাইট রয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে দেড় লাখের বেশি। অনলাইনে ব্যবসার ৮০ শতাংশই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরকেন্দ্রিক। তবে করোনায় খাতটি দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যমতে, দেশে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭৫ শতাংশ। খাতটির আকার ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল নাগাদ এ খাতের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে এমন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি বলেছেন এরই মধ্যে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার যুগান্তরকে বলেন, আমরা পৃথক আইন না করার প্রস্তাব দিয়েছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। কারণ আলাদা কর্তৃপক্ষ ও আইন করলে ই-কমার্স খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। এ খাতে নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। তাদের বাধা দিলে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এজন্য বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কার করেই এ খাত পরিচালনা করা সম্ভব। আইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা কোন জায়গায় ঠিক করার দরকার। হয়তো দীর্ঘ মেয়াদে এ খাতে আইনের প্রয়োজন হবে।

বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি চলছে দেওয়ানি আইনের ওপর। ফলে বাজারে কোনো অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল আইনে ব্যবস্থা নিতে পারে না। ই-কমার্সের অনিয়মের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করছে। ইভ্যালির বিরুদ্ধে এ প্রতিষ্ঠান মামলা করেছে। কিন্তু ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও আর্থিক দণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। এখন নতুন করে আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব উঠেছে। এ আইন সংশোধন করে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রতিযোগী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে-২০১২ সালে। ওই সময় ই-কমার্সের প্রচলন ছিল না। এখন ই-কমার্সে লেনদেন হচ্ছে। ফলে অলনাইন এবং অফলাইন ব্যবস্থায় একটা পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে এটি অন্তর্ভুক্ত করা নেই। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বাজারে প্রতিযোগিতা পরিবেশ নষ্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হয় তাহলে আগামীতে ই-কমার্সের লেনদেনে প্রতারণা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

জানা গেছে, ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মানি লন্ডারিং আইন ও কোম্পানি আইন সংশোধন করে ই-কমার্সকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিদ্যমান আইনে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার খুব বেশি কাভার করে না। সেজন্য আইনটি যুগোপযোগী করা হবে। জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে সেটি দেওয়া হবে। তবে আইনটি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে।

ই-কমার্স নতুন বিনিয়োগ টান পৃথক আইন নয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম