চমেকে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি সাবেক নেতাদের
সহিংস ছাত্রলীগ আরেক মামলা দায়ের
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চিকিৎসক হওয়ার ব্রত নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের আরও সহনশীল হতে বললেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। তাদের মতে, এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। গুটি কয়েকজনের অপকর্মের জন্য সিংহভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বারবার অনিশ্চয়তায় পড়ছে। ছাত্রলীগের বাইরের কোনো শক্তি এসবের নেপথ্যে মদদ দিচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
তারা বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্লিপ্ততায় প্রাধান্য পাচ্ছে এসব সংঘর্ষ। মারামারির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে চমেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য ও চমেক ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ডা. মফিজুর রহমান জুম্মা যুগান্তরকে বলেন, আমরা যখন চমেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি তখন দেশ পরিচালনা করছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সময় বিরোধীদের আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করেছি। কিন্তু এখন চমেকে বিরোধী কোনো পক্ষ সক্রিয় নেই। এরপরও একই সংগঠনের নেতাকর্মীরা বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, যা দুঃখজনক। একই সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মতামতে পার্থক্য থাকতে পারে, তবে আদর্শিক দিক থেকে তো সবাই এক। তারপরও এমন হচ্ছে কেন? তৃতীয় কোনো পক্ষ সহিংসতায় ইন্ধন দিচ্ছে কিনা খোঁজ নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, চমেকে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সংগঠনের যেমন বদনাম হবে, তেমনি সহিংসতা দিন দিন বেড়ে যাবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘একজন অভিভাবক তার মেধাবী সন্তানটিকে চিকিৎসক হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে মেডিকেলে কলেজে ভর্তি করান। তারা ক্যাম্পাসে এসে যদি সহিংস আচরণ করেন তা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সময় চমেকে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, জামায়াত-শিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন ছিল। আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু কখনো এমন সংঘাত হয়নি। বর্তমানে ছাত্রদের মধ্যে সহনশীলতা কমে যাওয়ায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। সবাই যেহেতু সরকারদলীয় নেতাকর্মী, তাই সবাইকে আরও সহনশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে নেতৃত্ব পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। দুটি পক্ষের মধ্যে যতদিন ঐক্য না আসে চমেকে ততদিন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। এতে অন্তত সাধারণ অভিভাবকদের সন্তানের জন্য আদালত কিংবা জেল গেটে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। আমি বলব চমেক ছাত্রলীগ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি কিংবা টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। মূলত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বের প্রভাব চমেকেও বিদ্যমান।
জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চমেক ছাত্রলীগের একটি পক্ষ বিভিন্ন চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপর একটি পক্ষ প্রতিবাদ করাতে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ হচ্ছে। এসব মোকাবিলায় চমেক এবং চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এর ফলে বার বার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নিলে অবশ্যই চমেকে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে। ’
সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা : চমেক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার নগরীর চকবাজার থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এতে শুক্রবার রাতে ছাত্রাবাসে হামলা ও কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার পাঁচদিন পর ইন্টার্ন চিকিৎসক ইমন সিকদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। মামলায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত ছাত্রলীগের ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। একই ঘটনায় সোমবার ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন নাছির গ্রুপের অনুসারী হিসাবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান। তবে বুধবার পর্যন্ত দুটি মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুক্রবার রাতে চমেক ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এর জেরে পরদিন শনিবারও চমেক কলেজ ক্যাম্পাসে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি এবং ছাত্রাবাসে সংঘর্ষের ঘটনায় চকবাজার থানায় পৃথক দুটি মামলাসহ তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রথম মামলার বাদী তৌফিকুর রহমান। ওই মামলায় নাছির অনুসারী হিসাবে পরিচিত দুই জনকে প্রথম দিনই গ্রেফতার করা হয়েছে।
