বন্ডধারী রপ্তানিমুখী শিল্প
আমদানি প্রাপ্যতা ৬ দিনে ইউপি ইস্যু হবে ২ দিনে
সেবা সহজীকরণে এনবিআর-এর উদ্যোগটি ভালো, তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে -মোহাম্মদ হাতেম
সাদ্দাম হোসেন ইমরান
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রপ্তানিমুখী শিল্পের বন্ডসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সময়সীমা ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আবেদনের ৬ দিনের মধ্যে আমদানি প্রাপ্যতা এবং ২ দিনে ইস্যু করা হবে ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন)।
একইভাবে নতুন বন্ড লাইসেন্সের আবেদন উপস্থাপন, বন্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি, এইচএস কোড সংযোজন, মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রতিটি কাজেরই সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অফিস আদেশটি জারি করা হলেও এর কার্যকারিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে ২০ জানুয়ারি এনবিআরে বৈঠক বসে। এই আদেশের সুবিধাভোগী হিসাবে বৈঠকে উপস্থিত বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ-এর নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেন, আদেশটি ব্যবসা সহজীকরণের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে এটিই একমাত্র সমাধান নয়। প্রকৃত ফল পেতে হলে আমাদের সেবা প্রদানের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘নতুন আদেশটি ব্যবসাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে বোঝা যায়, ব্যবসা সহজীকরণে এনবিআর-এর আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু এ আদেশ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় আছে। কারণ ওপরের লেভেলের (কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার) কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানে যতটুকু আন্তরিক, নিচের লেভেলে (সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তা) ঠিক তার উলটো। চাহিদা অনুযায়ী পয়সা না পেলে ফাইল খুঁটে খুঁটে নানা কোয়ারি বের করে নোট দেওয়া হয়।
এতে জটিলতা তৈরি হয়। নিচ থেকে যখন একটা ফাইল জটিলভাবে উপস্থাপন করা হয়, তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের করার কিছুই থাকে না। তাই শিল্প মালিকদের কষ্ট লাঘব করতে অফিস আদেশের পাশাপাশি নিচের দিকে কর্মকর্তাদেরও জোরালো মনিটরিং জরুরি। তা না হলে আদেশের সুফল পাওয়া যাবে না। এককথায় বলা যায়-সেবা সহজীকরণে এনবিআর-এর উদ্যোগটি ভালো, তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’
জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের আবেদন গৃহীত হওয়ার পর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বন্ড অফিসার বা সংশ্লিষ্ট শাখাকে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সুনির্দিষ্ট জিজ্ঞাসা (কোয়ারি) বা স্পষ্টীকরণ ছাড়া ফাইল আটকে রাখা যাবে না। জিজ্ঞাসা বা স্পষ্টীকরণের জন্য অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হলে যুগ্ম বা অতিরিক্ত কমিশনারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। শুধু অসম্পূর্ণ আবেদন জমা দিলে বা কারখানা পরিদর্শনের প্রয়োজন পড়লে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না।
আদেশ অনুযায়ী, নতুন লাইসেন্স, ইপিজেডের লাইসেন্স, ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের সাময়িক বন্ড লাইসেন্স এবং সব রপ্তানিমুখী শিল্পের নিরীক্ষা ও আমদানি প্রাপ্যতার আবেদন ৯ দিনে নিষ্পত্তি করা হবে। আর বিজিএমইএ-এর সুপারিশ থাকলে ৬ দিনে লাইসেন্স নবায়ন করে দেওয়া হবে। এছাড়া জেনারেল বন্ড ৬ দিনে, মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন ৯ দিনে, কারখানা সাময়িক স্থানান্তরের আবেদন ১১ দিনে, লিয়েন ব্যাংক সংযোজন বা পরিবর্তনের আবেদন ৫ দিনে, অফিস ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন ১১ দিনে, প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক শিল্পের মেশিনারিজ স্থাপন বা সংযোজনের আবেদন ১৪ দিনে, কারখানা সম্প্রসারণ আবেদন ১৩ দিনে, এইচএস কোড সংযোজন বা বিয়োজন ৬ দিনে, কাঁচামালের বন্ডিং মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন ১৩ দিন, আন্তঃবন্ড স্থানান্তরের আবেদন ১৩ দিনে, ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঁচামালের শুল্ক-কর মওকুফের আবেদন ১৭ দিনে, কারখানা সম্প্রসারণের আবেদন ১৩ দিনে, ইপিজেডের অস্থায়ী আন্তঃবন্ড স্থানান্তর আবেদন ৬ দিনে, প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমুখী শিল্পের ইউপি ইস্যু ২ দিনে, দাবিনামা সমন্বয় বা বকেয়া রাজস্বের কিস্তি নির্ধারণ আবেদন ৭ দিনে, কাঁচামাল ছাড়ের প্রত্যয়নপত্র ৭ দিনে, প্রাপ্যতা বৃদ্ধির আবেদন ৬ দিনে এবং কাঁচামালের ব্যাংক গ্যারান্টি অবমুক্তির আবেদন ৬ দিনে নিষ্পত্তি করতে হবে।
সূত্র জানায়, রপ্তানিমুখী শিল্পের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের নিজস্ব কর্মকৌশল পরিচালন পদ্ধতি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর-এসওপি) করা হয়। সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলমান ছিল। সব বন্ড কমিশনারেট যাতে একই নিয়মে কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেজন্য নতুন আদেশ করা হয়েছে।
অবশ্য শিল্প মালিকরা বলছেন, সব ভূত সরষের মধ্যেই। এর আগে সিটিজেন চার্টার বা এসপিও করা হলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। বন্ড কমিশনারেটগুলোয় কমিশনার যেভাবে চালাবেন, সেটাই আইন-বিধান। কাস্টমস আইনে যাই থাকুক না কেন, তা গৌণ। যতদিন বন্ড কমিশনারেটগুলো অটোমেশন করা হবে না, ততদিন রপ্তানিকারকদের অহেতুক ঝামেলা পোহাতেই হবে।
বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে বন্ড কমিশনারেট গঠন করা হয়। কিন্তু এখন তা ব্যবসার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইচএস কোডের বর্ণনার বাইরে কাঁচামাল একটু এদিক-ওদিক হলেই বড় অঙ্কের জরিমানা করে দেওয়া হয়। আবার ডাইস- কেমিক্যালের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ছক বেঁধে দেওয়া আছে। এর বাইরে অন্য ডাইস-কেমিক্যাল দরকার হলে তা লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত করতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়। অথচ বন্ড কমিশনারেটের উচিত, আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে কি না, তা যাচাই শেষে পরবর্তী বছরের জন্য প্রাপ্যতা দেওয়া। নতুন আদেশ কার্যকর হলে সময়ক্ষেপণ কিছুটা কমবে বলে মনে হয়।’
২০০০ সালের ১ নভেম্বর ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বন্ড কমিশনারেট গঠন করা হয়। শুরুতে শুধু ঢাকাতেই বন্ড অফিস ছিল। পরে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠিত হয়।
