প্রমাণ পেয়েছে দুদক
ফাস ফাইন্যান্সের ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ
পিকে হালদার চক্রের বিরুদ্ধে আরও ১৩ মামলা অনুমোদন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার চক্রের বিরুদ্ধে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ফাস (এফএএস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি থেকে ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১৩টি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলাগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে সোমবার একটি মামলা করা হয়েছে। বাকি ১২টি মামলা আজ করা হবে। দুদক সচিব মাহবুব রহমান বুধবার সাংবাদিকদের মামলাগুলোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে প্রাথমিকভাবে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
ফাস ফাইন্যান্স থেকে অ্যান্ড বি ট্রেডিংয়ের নামে ৪৪ কোটি টাকা, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ ৪৫ কোটি, নিউট্রিক্যাল ৩০ কোটি, এসএ এন্টারপ্রাইজ ৪২ কোটি, সুখাদা ৪০ কোটি, এমটিবি মেরিন ৪০ কোটি, হাল ইন্টারন্যাশনাল ৪৫ কোটি, স্বন্দীপ করপোরেশন ৪০ কোটি, দিয়া শিপিং ৪৪ কোটি, মুন এন্টারপ্রাইজ ৩৫ কোটি, বর্ণ ৩৮ কোটি, আরবি ৪০ কোটি ও মেরিন ট্রাস্টের নামে ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫২৩ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় করা ১৩ মামলায় পিকে হালদারসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হবে।
জাল নথিপত্র সৃষ্টি করে কাগুজে প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড বি ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী শুভ্রা রানী ঘোষকে ঋণ দিয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সোমবার পিকে হালদারসহ ফাস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক, এমডি রাসেল শাহরিয়ারসহ ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। বাকি ১২ মামলায় ৪৭৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে মামলার পর সোমবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে রাসেল শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করে দুদক টিম। বুধবার আসামি রাসেলকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আসামির ৩ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে পিকে হালদার সিন্ডিকেট শেয়ার কিনে ফাস ফাইন্যান্সের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়। চক্রটি কৌশলে পুরাতন কর্মচারীদের ছাঁটাই করে পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়। এদের একজন রাসেল শাহরিয়ার। তাকে এমডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাসেল শাহরিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার একক স্বাক্ষরেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব বোর্ডে উপস্থাপন করে অনুমোদন করান। পরে তা পিকে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানিতে স্থানান্তর করেন।
পিকে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এর আগে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদার চক্রের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়। মামলাগুলোয় পিকে হালদারসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া পিকে সিন্ডিকেটের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুদক এ পর্যন্ত ২২টি মামলা করেছে। অনুমোদিত ১৩টিসহ মামলা হবে ৩৫টি। মামলাগুলোতে ২ হাজার কোটি টাকার ওপর আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। অদ্যাবধি এসব মামলায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় আদালত ৬৯ জনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
এছাড়া ২০২১ সালের অক্টোবরে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়। সেখানে পিকেসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় পিকে হালদার ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের প্রকৃত অবস্থান গোপন করার হীন উদ্দেশ্যে পিকে নিজ নামে-বেনামে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাগুজে কোম্পানির ও ব্যক্তিদের নামে ১৭৮টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন। হিসাবগুলোতে ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৫১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন করে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করেন। তার সহোদর আসামি প্রিতিশ কুমার হালদারসহ তদন্তে আগত ১৩ আসামির পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত হয়ে কানাডায় অসংখ্য সন্দেহমূলক লেনদেন, বড় নগদ লেনদেন ও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে এক কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছিল। সেখানে আসামি ছিলেন শুধু পিকে হালদার। তদন্তে অবৈধ টাকার অঙ্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি আসামির সংখ্যাও বেড়ে যায়।
