Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এক কোটি পরিবার পাবে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি শুরু আজ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি শুরু আজ

এক কোটি পরিবারের মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করতে আজ রোববার শুরু হচ্ছে টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি। প্রতি কার্ডের বিপরীতে দেওয়া হবে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল। কর্মসূচির আওতায় আজ থেকে প্রথম এবং রোজার শুরুতে দ্বিতীয় দফা পণ্য দেওয়া হবে। দেশব্যাপী টিসিবির ৩১শ ডিলারের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের দোরগোড়ায় এ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট উপকারভোগী তার ইউনিয়ন বা উপজেলার টিসিবির ডিলারের কাছ থেকে কার্ড দেখিয়ে পণ্য গ্রহণ করতে পারবেন। আর ডিলাররা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে বিতরণের লক্ষ্যে পণ্য নিয়ে আসবেন। টিসিবির সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

আজ সারা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য সচিব (সিনিয়র) তপন কান্তি ঘোষ। সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ-ফতুল্লা-পোস্তগলা রোডে, পঞ্চবটি (সাবেক পথকলি স্কুল) শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১১টায় ফতুল্লা স্টেশন রোডের হক স্টিল মিল থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে।

সূত্র জানায়, সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮ মার্চ থেকে টিসিবির পণ্য চাহিদামাফিক জেলাগুলোয় পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি ও টিসিবির নির্ধারিত গুদামে মজুত করা হয়েছে এসব পণ্য। সেখানে সম্পন্ন করা হয়েছে পণ্যের প্যাকেজিং কাজ। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে পণ্যগুলো ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে টিসিবির ডিলারদের।

ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান সংবাদমাধ্যমে বলেন, করোনাকালে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সেখান থেকে ৩০ লাখ পরিবার এ বিশেষ কার্ড পাচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৫৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও বরিশাল শহর ছাড়া দেশের ৮৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার পরিবার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এই সুবিধা পাবে। তারা ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় থাকবে না বা ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে না। সব মিলে এক কোটি পরিবার কার্ড পাচ্ছে।

জানা যায়, আজ রোববার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথমপর্বে একজন ফ্যামিলি কার্ডধারী পাবেন ২ লিটার সয়াবিন তেল, প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১১০ টাকা। এছাড়া দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি মসুর ডালও দেওয়া হবে। প্রতি কেজি চিনির মূল্য হবে ৫৫ টাকা ও মসুর ডাল ৬৫ টাকা। এছাড়া ৩ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা রমজান থেকে দ্বিতীয় দফায় সাশ্রয়ী মূল্যে উল্লিখিত তিন পণ্যের সঙ্গে আরও দুই কেজি ছোলা যুক্ত করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ছোলার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা।

জানা যায়, যারা সরকারের ২৩ ধরনের ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন না, কেবল তাদেরই টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী করা হয়েছে। উপকারভোগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের সূচক বিবেচনা করা হয়েছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন সম্পৃক্ত থাকছে। সুষ্ঠুভাবে বিক্রির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগসহ সংশ্লিষ্ট কমিটি স্থানীয় প্রশাসন থেকে গঠন করা হয়েছে।

টিসিবির এই কর্মসূচি কতটা বাজারে প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, টিসিবি এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য দেবে। এর অর্থ উপকৃত হবে ৫ কোটি মানুষ। অর্থাৎ প্রতি পরিবারে ৫ জন থাকছে। এখন প্রশ্ন-স্থানীয় বাজার থেকে কিনে এ পণ্য বিতরণ করলে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতি হবে না। যদি দেশের বাইরের উৎস থেকে এনে পণ্য দেওয়া হয় তবে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। বাজারে মূল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। তবে এটি ভালো উদ্যোগ। এ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে পারলে ভালো হবে।

টিসিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। যেসব অঞ্চলে টিসিবির ডিলার কম, অন্য উপজেলা থেকে ডিলার এনে সংকটপূর্ণ এলাকার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তবে পণ্য নিতে এসে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না এবার। কারণ যারা কার্ডধারী, শুধু তারাই পণ্য পাবেন। সংশ্লিষ্ট ডিলার ও ক্রেতার কাছে একটি করে কার্ড থাকবে। পণ্য দেওয়ার পর ক্রেতার ওই কার্ডে লিখে দেবে আমি পণ্য বুঝিয়ে দিলাম। ক্রেতা টিসিবির ডিলারের কার্ডে লিখে দেবেন, ‘আমি পণ্য বুঝিয়ে পাইলাম’। সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামালপুর সদরের টিসিবির ডিলার মেসার্স তানিন এন্টারপ্রাইজের আব্দুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন পর্যন্ত পণ্য হাতে বুঝে পাইনি। আশা করছি আগামীকাল পণ্য হাতে পাব। এরপর কার্যক্রম পরিচালনা করব ফ্যামিলি কার্ডের। অপর ডিলার ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশার মেসার্স নেকী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বিলকিস জাহান বলেন, এই কর্মসূচি পরিচালনার জন্য ডিলারদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। রোববার থেকে কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এখানে ২৫ জন ডিলার আছে। তাদের অধীনে কার্ডধারী ১৫ হাজার ৮০৮ জন। রোস্টার অনুযায়ী আমি এখনো পণ্য পাইনি। তবে নির্ধারিত সময়ে পাওয়া যাবে। অন্যান্য ডিলার হয়তো প্রথম দিনেই শুরু করতে পারবে।

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিয়ে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, নাটোর, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, চাঁদুপর, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেছেন যুগান্তরের প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮২ জন হতদরিদ্র পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ফ্যামিলি কার্ড। এটি প্রয়োজন ও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ রোববার থেকে ১৫টি উপজেলা ও ১৫টি পৌরসভায় নিত্যপণ্য বিতরণ করা হবে। টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী জামাল উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আগের মতো কেউ সরাসরি পণ্য কিনতে পারবে না। শুধু ফ্যামিলি কার্ডধারীরা কার্ড দেখিয়ে পণ্য কিনতে পারবেন।

খুলনা ব্যুরো জানায়, মহানগর এবং জেলা পর্যায়ে কার্ড না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিু আয়ের মানুষরা। কার্ড দেওয়ায় সঠিক নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বন্দ্বে তালিকা প্রণয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। টিসিবির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রবিউল মোর্শেদ বলেন, ডিলাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সরবরাহকৃত তালিকা অনুযায়ী কার্ড দেখে পণ্য বিক্রি করবেন। কোনো কোনো স্থানে এখনো পর্যন্ত তালিকা পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগে ১১ লাখ ২৯ হাজার ২৬০ সুবিধাভোগী পরিবারকে বিশেষ কার্ড দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির সময়ে নিু আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে এমন মানবিক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজশাহী জেলার প্রায় মোট ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ২ লাখ ১৯ হাজার ৯২১ জন উপকারভোগীর মধ্য টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার দাশ আরও বলেন, টিসিবিপ্রধান আল-আমিন জানান, নগরীর ১২টি স্পটে ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিন ৩টি ট্রাক সেলের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ১০টায় বরিশাল সদর উপজেলার ১নং ওয়ার্ড রায়পাশা-কড়াপুর এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হয়দার।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে টাঙ্গাইলে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১১ জন নিু আয়ের পরিবার সাশ্রয়ীমূল্যে টিসিবির পণ্য পাবেন। চাঁদপুরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ জন, নাটোর বাগাতিপাড়ায় সোয়া ৫ হাজার, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে সর্বমোট ১৩ হাজার ৮৯ জন, ঘোড়াশাল পৌর এলাকাসহ অপর ৪টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ২৫ জন, কিশোরগঞ্জে ৩৪ হাজার ৫৭৮ জন, ভালুকায় (ময়মনসিংহ) উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের ১২ হাজার ২০৪ জন উপকারভোগীকে এ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া সারা দেশে অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় একই সময়ে কার্ডধারীরা পাবেন এই সুবিধা।

টিসিবি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম