কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
সীমার চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ১১ ব্যাংক
হামিদ বিশ্বাস
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আইনের মধ্যে আনতে ব্যাংকগুলোর অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেসিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাতসীমা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও আগ্রাসী বিনিয়োগ ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এডিআর সীমার বাইরে ঋণ দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১১ বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমানে প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা এবং ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ৯২ টাকা পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগ করতে পারে। এর মধ্যে উল্লিখিত সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিয়েছে ১১টি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে প্রচলিত ধারার পদ্মা ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকের ৯০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ৮৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এনআরবিসি ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ব্যাংক আল-ফালাহ ৮৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সীমার বাইরে বিনিয়োগ রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের ৯৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের শরিয়াহ শাখার ৯৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে ঋণ বা বিনিয়োগ করাকে ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমানতের বিপরীতে সীমার বাইরে ঋণ দিলে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। তাছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের চিত্রও এখন খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে যদি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যায় তাহলে ব্যাংকের পাশাপাশি আমানতকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দেওয়ার যে সীমা বেঁধে দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সে সীমা অতিক্রম করা ঠিক নয়। এতে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশেষ করে আমানতকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে ব্যাংকগুলোর এ অনুপাত বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। কারণ কোনো ব্যাংকের যদি বড় একটি আমানত আসে তাহলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়; একইভাবে হঠাৎ করে কোনো গ্রাহক আমানত তুলে নিলে তখন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তখন ব্যাংক তার এডিআর সীমার বাইরে চলে যায়। এটা সাময়িক হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে সে ব্যাংককে অবশ্যই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের অংক দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৭৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
