এমডির স্বেচ্ছাচারিতা
ডিএসইতে ভূতুড়ে পদোন্নতি নিয়ে তোলপাড়

মনির হোসেন
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আইনের তোয়াক্কা না করে দেশের বৃহত্তম শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। জনবল কাঠামোতে কোনো ধরনের পদ না থাকলেও তিন কর্মকর্তাকে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) থেকে সিনিয়র জিএম করা হয়েছে। এ ছাড়াও এনআরসিকে (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) বাদ দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভুঁইয়ার একক সিদ্ধান্তে তিন কর্মকর্তাকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) থেকে জিএম করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিন বছরেই জিএম হয়েছেন দুই কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ১২৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
ডিএসইর ইতিহাসে যা রেকর্ড। সোমবার এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে পদোন্নতির তালিকায় ১২৭ জনের নাম থাকলেও যোগফলে দেখানো হয়েছে ৯৫ জন। ডিএসই বলছে, একটি পদ বিলুপ্ত করায় সংখ্যায় এ তারতম্য। পাঁচজনের পদোন্নতি ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা একে ভূতুড়ে পদোন্নতি বলছেন। বিষয়টি শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট সবার মুখে মুখে ছিল সারা দিন। তবে এমডি মনে করেন তিনি কোনো অন্যায় করেননি।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভুঁইয়া সোমবার টেলিফোনে যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, তিনি কোনো বেআইনি কাজ করেননি। কারণ আইন অনুসারে এনআরসির অনুমতি ছাড়া তিনি পদোন্নতি দিতে পারেন। জনবল কাঠামোর বাইরে নতুন পদ সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি ডিএসইর অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আইনে দেওয়া আছে। টেলিফোনে নয়, সরাসরি সাক্ষাতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদাকরণ) আইনে থাকা জনবল কাঠামো অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জে সিনিয়র কোনো পদ নেই। নতুন পদ সৃষ্টি করতে হলে প্রথমে বোর্ডের অনুমোদন লাগবে। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ডিএসইর নিয়ম অনুসারে ডিজিএম পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে এনআরসির সুপারিশ লাগে। কমিটি যাচাই বাছাই করে পদোন্নতির সুপারিশ করে। কিন্তু কাউকে তোয়াক্কা না করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একক ইচ্ছায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। জনবল কাঠামোর বাইরে অথবা আইন লংঘন করে কোনো কিছু করা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
জানা গেছে, সোমবার ১২৭ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির ঘোষণা দেয় ডিএসই। তবে নামের তালিকায় ১২৭ জন থাকলেও সংখ্যা যোগ করে দেখানো হয়েছে ৯৫ জন। এর মধ্যে জিএম থেকে সিনিয়র জিএম তিনজন, ডিজিএম থেকে জিএম তিনজন, এজিএম থেকে ডিজিএম তিনজন, সিনিয়র ম্যানেজার থেকে এজিএম ১৯ জন, ম্যানেজার থেকে সিনিয়র ম্যানেজার ১৫ জন, ডেপুটি ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার ২৯ জন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার ২৯ জন, এক্সিকিউটিভ থেকে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ১০ জন, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে এক্সিকিউটিভ ছয় এবং এর নিচে আরও ১০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তবে এমডির পছন্দের তালিকায় থাকা পাঁচজনের পদোন্নতি ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়াও ৭২ জনের পদোন্নতি কার্যকর হবে ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে। ৪৭ জন কার্যকর হবেন চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। তবে তিনজন সিনিয়র জিএমের পদোন্নতি চলতি আগস্ট মাসের শেষ থেকে কার্যকর হবে।
অন্যদিকে জিএম থেকে সিনিয়র জিএম করা হয়েছে মো. সামিউল ইসলাম, মোহাম্মদ আসাদুর রহমান ও মো. তারিকুল ইসলামকে। এছাড়া জিএম পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সৈয়দ আল আমিন রহমান, সায়েদ মাহমুদ জোবায়ের ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়াকে। এর মধ্যে দুই কর্মকর্তা ২০১৯ সালে ডিজিএম হয়েছিলেন। অর্থাৎ মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে পদোন্নতি পেলেন তারা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্যাপক সমালোচনার কারণে সিনিয়র জিএমের পদ আপাতত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছে না। কারণ এটি সরাসরি আইনের লংঘন।